ঢাকা সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১১:৩০ এএম
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটতে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। 

এযাবত দেশে ৫৩টি বাজেট দেওয়া হয়েছে। যা প্রতিবারই বিগত বাজেটের তুলনায় বেড়েছে। এবার প্রথমবারের মতো ৫৪তম বাজেটে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাত ধরে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। 

জানা গেছে, অর্থসংকটের কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে কম হওয়ার কারণ, সরকারের আয় কম, শুল্ক-কর আদায়ও খুব বেশি বাড়েনি। আবার বিদেশি সহায়তার ঋণ পরিশোধেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে।

এই বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কাল্পনিক সংখ্যার সাথে আরেকটা কাল্পনিক সংখাকে তুলনা করা হতে যাচ্ছে। 

দেশে যত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে তার কোনোটিই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সবই ছিল কল্পনার জগতে। এবার সেই কল্পনার জগতকেই সামনে রেখে আরেকটা কল্পনার বাজেট তৈরি হতে যাচ্ছে।

অর্থ বিভাগের কারিগরি কমিটির কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ। যা চলতি অর্খবছরও ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে।

আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছর ছিল মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ। মূলত আগামী বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হতে পারে ৩.৬২ শতাংশ। 

এই হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে (এনবিআর) সরকারের আয়ের লক্ষ্য হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। বাকি টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সঞ্চয়পত্র ও বিদেশি উৎসসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থেকে সংগ্রহ করতে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। 

জানা গেছে, এনবিআর চাচ্ছে ৫ লাখ টাকার লক্ষ্য নিতে। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই লক্ষ্যমাত্র ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে। 

জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে আগের কোনো সরকারই টার্গেট বাস্তবায়ন করতে পারিনি। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪.৫ এর বেশি হবে না। 

আবার আগামী অর্থবছরের বাজেওেট যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৫ ধরা হয় তাহলে প্রবৃদ্ধি ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়বে। বিপরিতে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে ২০০ বেসিস পয়েন্ট কমাতে হবে। যা কোনোভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য না।

তিনি বলেন, এদিকে ঘাটতি গতবছরের তুলনায় জিডিপি অনুপাতে কমলেও টাকার অংকে চিত্রটা অন্যরকম হবে। ফলে বিদেশি উৎস থেকে যা পাওয়া যাবে তা-ও খুব একটা সুখকর না। 

ফলে ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থার ওপরই বেশি নির্ভর করতে হবে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ অন্য সরকারের বাজেটের মতোই নেতিবাচক ধারায় ধাকবে। ফলে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ খুব একটা থাকবে না।

এই অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী বেসরকারি খাতে টাকার প্রবাহ কম হলে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ পরবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, কমবে না। 

তাই কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে বাস্তবায়নযোগ্য বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রস্তাব করতে হবে। যাতে নতুন বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাতে টাকার প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণকে স্বস্তি দেওয়া যায়। 

এদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে অবহেলিত গ্রামীণ অবকাঠামো খাতে জোর দেওয়া হবে আগামী বাজেটে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা কিছুটা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা থাকবে আগামী বাজেটে। 

জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাজেটের আকার না বাড়লেও সরকারের বেতন–ভাতা, সুদাসলসহ দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধÍএসবের খরচ কিছুটা বাড়বে। বিপরিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খরচ কমানো হবে। আবার নানা খাতে ভর্তুকি কমানোও সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ থাকবে।

বাজেটের সিংহ ভাগ অর্থের জোগান দেয় চলতি বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। 

এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। 

এ সময়ে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৫১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বেকাদায় রয়েছে সরকার।