বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া ও এনামুল হক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম

banner

মতিঝিলে মূল্যবান ৫১ প্লট বেদখল

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও এনামুল হক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ১১:৫৪ পিএম

মতিঝিলে মূল্যবান ৫১ প্লট বেদখল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ষোলো বছর ধরে মতিঝিলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৫১টি বাণিজ্যিক প্লট বেদখল হয়ে আছে। সরকারি হিসাবে প্রতি কাঠা ৩ কোটি টাকা ধরে এর দাম ১ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু মতিঝিলের প্লট মালিকেরা বলছেন, বাস্তবে ওই এলাকায় জমির দাম কয়েক গুণ বেশি। অর্থাৎ, প্রতি কাঠা জমির দাম অন্তত ৫ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে হীরার চেয়েও দামি মহামূল্যবান এই ৫১ প্লট সম্পর্কে উদাসীনই শুধু নয়, রীতিমতো নির্লিপ্ত থেকেছে রাজউক।

জানা গেছে, বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিসাবসংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স অডিট কমিটির পর্যবেক্ষণে। তারা অডিট প্রতিবেদনে রাজউকের বেদখল প্লট আপত্তি উপস্থাপন করেন খোদ কম্পট্রেলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বাংলাদেশ (সিএজি)।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তারা বলেছেন, মতিঝিলে রাজউকের ৫৫৬ দশমিক ৮১ কাঠা বাণিজ্যিক প্লট বেদখল অবস্থায় রয়েছে। এসব জমিতে অবৈধ দোকান, স্থাপনা, গাড়ির গ্যারেজ, গাড়ির কাউন্টার ইত্যাদি নির্মাণের সুযোগ করে দেওয়ায় সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সংস্থাটি এই হিসাব করেছে প্রতি কাঠা ৩ কোটি টাকা দাম ধরে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই ক্ষতির জন্য রাজউক কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলা হয়েছে, প্লটগুলো দখলমুক্ত করতে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিপুল পরিমাণ এই আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

সিএজির এই প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন সূত্রের তথ্য সামনে রেখে রূপালী বাংলাদেশ গত ১২ এপ্রিল কয়েক ঘণ্টা বেদখলকৃত প্লটগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে।

দেখা যায়, মতিঝিলের সম্প্রসারিত এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক পেছনে বক্স কালভার্ট রোডে বেদখল প্লটগুলোর অবস্থান। সেখানে বিভিন্ন আয়তনের মোট ৫৩টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্লট রাজউক বরাদ্দ দিয়েছে। বাকি ৫১ প্লটই বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী অরাজনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই দখল মহোৎসবে মেতে ওঠেন এবং বলতে গেলে শতভাগ সফল হন। তারাই প্লটগুলোতে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন। সরেজমিনে এই ৫১ প্লটের মধ্যে বিসমিল্লাহ অটো পার্টস (মালিক মুহম্মদ মোবারক বিল্লাহ), জনতা অটো পার্টস (মালিক মোশাররফ হোসেন), তানভীর অটো পার্টস (মালিক আব্দুল বারেক ও ছেলে বশির হোসেন মুন্না), এস এফ কার সেন্টার (মালিক খন্দকার মুহম্মদ ফারুক), আলীম মোটরস (মালিক মুহম্মদ ইউসুফ), মহামায়া ফার্নিচার ঘর (মালিক দুলাল), ভাই ভাই অটোমোবাইল (মালিক আব্দুল করিম রায়হান), সিটি অটোস, আলামিন মোটরস অ্যান্ড ওয়ার্কশপ, মনির কার্পেটিং সেন্টার, শিকদার অটোমোবাইলস, রাজিব অটো পার্টস, ভিআইপি অটো পার্টস ইত্যাদি নামে প্রায় ১৫০ স্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায়।

কথা হয় তিনটি স্থাপনার মালিকের সঙ্গে। তানভীর অটো পার্টসের মালিক আব্দুল বারেক বলেন, এই জমি রাজউকের কি না, আমাদের জানা নেই। ১৫ বছর দরে আমরা জমিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। ১৮ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাড়া দিচ্ছি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বশীরের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। এখন তার দুই ছেলে মো. সজীব ও মো. সুমন প্রতি মাসে এসে ভাড়া নিয়ে যান।  

জনতা অটো পার্টসের মালিক মোশাররফ হোসেন জানালেন, এই জমির মালিক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। ৩ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছি। তার ম্যানেজার আবু তাহের প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে যান। এরা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, নিজস্ব বাড়িঘর আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এসেছি খুব বেশি দিন হয়নি। বিগত করোনার সময় এসেছি। বিসমিল্লাহ অটো পার্টসের মালিক মুহম্মদ মোবারক বিল্লাহ বললেন, পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমরা এখানে আছি। ১৬ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাড়া দিই। আমেরিকা প্রবাসী এক ব্যক্তির ম্যানেজার আবু তাহের ভাড়া উত্তোলন করেন।

সবশেষে কথা হয় কথিত ম্যানেজার আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, আমাদের কাছে সব কাগজপত্র আছে। পর্চা আছে, সর্বশেষ মহানগর জরিপের কাগজপত্র আছে। এ দুই প্লট আমার মামার। তিনি প্রবাসে থাকায় আমিই দেখাশোনা করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিলের কয়েকজন দোকানদার অভিযোগ করেন, বেদখল এসব স্থাপনা থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ভাড়া ওঠাতেন। তাদের ধারণা, ওই সব নেতাই প্লটগুলো দখল করে নিয়েছেন। এখন তাদের অনুসারিরাই ভাড়া তোলেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিএজির নিরীক্ষায় আপত্তির কারণে ২০২২ সালে আনিছুর রহমান মিয়া চেয়ারম্যান থাকাকালীন এসব প্লট নিয়ে রাজউকের নড়াচড়া লক্ষ করা যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে সব তৎপরতাই থমকে দাঁড়ায়।

সার্বিক বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) এহসানুল মামুন বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। রাজউকের বেদখলকৃত সব প্লটের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আট জোনে আটটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি)। আশা করছি, শিগগিরই আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামতে পারব। ইতিমধ্যে মহাখালী ও হাতিরঝিলের কয়েকটি বেদখল জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, কিছু বেদখল প্লটের বিপরীতে মামলা রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হলে সেগুলোও উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মতিঝিলের বেদখল প্লট সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। সবগুলোর তালিকা তৈরি হচ্ছে। এর পরই অভিযান চলবে।
 

আরবি/একে

Link copied!