বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ১২:০০ এএম

banner

গতিহীন বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকল্প কর্তারা মহাব্যস্ত কেনাকাটায়

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ১২:০০ এএম

গতিহীন বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকল্প কর্তারা মহাব্যস্ত কেনাকাটায়

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

সরকারি কলেজগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্প (ফোসেপ)। আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দের এই প্রকল্পে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কথা ছিল। চার বছরের এই প্রকল্পটির মেয়াদ সাত বছরের কছাকাছি চলে গেলেও ফলাফল অনেকটা শূন্য। যুগের সঙ্গে চাহিদা বিবেচনায় ২০০ সরকারি কলেজে ১০টি নতুন বিষয় চালু ও বিজ্ঞানবিষয়ক ৭ হাজার ২৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য পদ সৃষ্টির কথা থাকলেও তার কোনোটাই হয়নি। বরং নতুন বিষয় চালু নিয়ে এখনো কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি।

শুধু তাই নয়, প্রকল্পের আওতায় ১৭৬টি কলেজে একাডেমিক ভবন ও পিছিয়ে পড়া এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫টি হোস্টেল নির্মাণের কথা থাকলেও এখনো অর্ধেকেরও বেশি কাজ বাকি। প্রকল্পে বাকি আড়াই মাস মেয়াদে এসব কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। অথচ প্রায় সব ভবনের জন্য এসি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, বিজ্ঞান সরঞ্জামাদি কেনাকাটা হয়ে হছে আরও কয়েক বছর আগে। প্রকল্পটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শিক্ষা সম্প্রসারণের দিকে নজর না দিয়ে শুরু থেকেই ব্যস্ত কেনাকাটায়। কেনাকাটায় অনিময়-দুর্নীতি করে ঘটিয়েছেন তেলেসমাতি কাণ্ডও। বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে কেনাকাটা। কিন্তু বরাদ্দ ফেরত যাবে অজুহাত দেখিয়ে বাকি কেনাকাটা করতেও নানা কৌশল আঁকছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

২০১৮ সালের ১ জুলাই ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ স¤প্রসারণ প্রকল্প’ শুরু হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় তিন বছর বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। বরাদ্দও বাড়ে কিছুটা। বর্তমানে দুই হাজার ৫৫০ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার টাকার প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে আসছে জুনে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৬৬.৭২ শতাংশ। আর ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

ভবন নির্মাণের খবর নেই, কেনাকাটা শেষ

এই প্রকল্পের আওতায় ১৭৬টি একাডেমিক ভবনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৭৭টির। আর দুর্গম ৩৫টি হোস্টেল নির্মাণের কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়েছে ২২টির। অথচ এসব ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মধ্যে বেশির ভাগ কেনাকাটাই ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভবন নির্মাণকাজের দিকে নজর না দিয়ে কেনাকাটায় প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নজর বেশি থাকায় বাধ্য হয়ে প্রকল্পের সব ক্রয় কার্যক্রম স্থগিত রাখেন মাউশির মহাপরিচালক। ফলে চলতি অর্থবছরে আর এডিপির বরাদ্দ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের জন্য ২০০টি ফটোকপিয়ার মেশিন, ২০০ কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনের জন্য মাইক্রোওভেন, ফ্লাক্স ও ফ্রিজও সরবরাহ করা হয়েছে ইতিমধ্যে। ৭৭টি ভবনের কাজ শেষ হলেও আসবাবপত্র সরবরাহ হয়েছে ৯১টি কলেজে আর আইসিটি ল্যাবের জন্য দুটি করে এসি সরবারহ করা হয়েছে ৯১টি কলেজে। এ ছাড়া ২০০ কলেজের মধ্যে ১১৯টি কলেজে ৭১৪ সেট ল্যাবরেটরি ইক্যুইপমেন্টও সরবরাহ কাজ শেষ।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ২২টি হোস্টেলের নির্মাণকাজ শেষ হলেও আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, বাসনপত্র সরবরাহ হয়েছে ২৩টি হোস্টেলে। এর বাইরে আরও ৯১টি কলেজে কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের কেনাকাটায় শুরু থেকেই ছিল পদে পদে অনিয়ম। কেনাকাটা করতে গিয়ে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্প্রতি সরকারি ক্রয়নীতিমালা (পিপিআর) লঙ্ঘন করে প্রথম ছয়জনকে বাদ দিয়ে আসবাব সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে সপ্তম এবং চতুর্থ দরদাতাকে। আসবাব প্রস্তুতকারী দেশের বড় নামিদামি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও তাদের কাজ দেওয়া হয়নি। এই দুই দরপত্রে সরকারের গচ্চা গেছে কয়েক কোটি টাকা। অনিয়মের জন্য প্রকল্পটির প্রথম পরিচালককে প্রত্যাহার করেও নেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা শুরু থেকেই ভবন নির্মাণ কিংবা বিজ্ঞান শিক্ষার স¤প্রসারণের জন্য শিক্ষক পদ সৃজন, যুগোপযোগী নতুন বিষয় খোলার দিকে কোনো নজর ছিল না। তারা ভবন নির্মাণ কিংবা হস্তান্তরের আগেই কেনাকাটা শেষ করতে ব্যস্ত ছিলেন। কারণ কেনাকাটা করলে নানাভাবে লাভবান হওয়া যায়। এসব বিষয় বুঝেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) মহাপরিচালক কেনাকাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে আবারও কেনাকাটা শুরু করতে নানা কৌশল আঁকছেন সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দ পুরোটা ব্যবহার করতে কেনাকাটার অনুমতি চেয়ে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদ হোসেন। গত ৮ এপ্রিল দেওয়া চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, মাউশির মহাপরিচালকের নির্দেশে গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রকল্পের সব ধরনের ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যার ফলে চলতি বছরের আরএডিপি বরাদ্দের শতভাগ ব্যয় নিশ্চিতকরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করতে না পারলে নানা চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

জেলা পর্যায়ে একটি ভবনের কাজও শেষ হয়নি, বাকিগুলোতে কচ্ছপ গতি 

প্রকল্পটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭৬টি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কথা। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে ৮১টি আর উপজেলা পর্যায়ে ৯৫টি। জেলা পর্যায়ের ৮১টি ভবনের মধ্যে একটি ভবনের কাজ শেষ করা দূরে থাক ৬টি ভবনের কাজ শুরুই হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭৫টি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ৬টির মধ্যে ৪টির কলেজ ভবনের দরপত্র মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে আর জায়গার অভাবে নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকার শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ভবনের কাজ শুরু করা হয়নি।

এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের ৯৫টি কলেজ ভবনের মধ্যে ৭৭টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৬টির কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের কাজ বন্ধ আর প্রয়োজন না থাকায় সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের কাজ হচ্ছে না।

এর বাইরে ৩৫টি হোস্টেল নির্মাণ করার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়েছে ২২টি। আর ১১টির কাজ চলমান রয়েছে। রেইট শিডিউল জটিলতার কারণে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ ও বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের কাজ বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষকদের পদ সৃজনও হয়নি

প্রকল্পটির ডিপিপিতে ২০০ কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ের ৭ হাজার ২৭৫টি শিক্ষক পদ সৃজনের কথা ছিল। কিন্তু এখনো একটি পদও সৃজন করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছে, পদ সৃজনের বিষয়ে মাউশির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

নতুন ১০ বিষয় চালুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি

ফোসেপের তালিকাভুক্ত এই কলজেসমূহে যুগের চাহিদা বিবেচনায় ১০টি নতুন বিষয় খোলার কথা ছিল। এই বিষয়গুলো হলো- আইসিটি, এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, ফিশারিজ, ফ্রুট প্রসেসিং, টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাশন ডিজাইন, ফার্মিং টেকনোলজি, ডাটা অ্যানালাইটিক, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফার্নিচার ডিজাইন অ্যান্ড মেকিং, কনস্ট্রাকশন সুপারভাইজার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় কলেজ পর্যায়ে ১০টি নতুন বিষয় খোলার বিষয়ে ডিপিপিতে উল্লেখ থাকলেও কোর্সের ধরন, সময়কাল ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা তাই। তাই এ বিষয়গুলো খোলা সম্ভব হচ্ছে। তারা আরও বলেন, এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করা প্রয়োজন। তাই কর্মশালার জন্য বাজেট অনুমোদন করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে কর্মশালা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ফোসেপের প্রকল্প পরিচালনা অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদ হোসেন বলেন, কেনাকাটায় কোনো নিয়ম ভঙ্গ করা হয়নি। নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। 

Link copied!