দেশের মানি মার্কেট ও শেয়ার মার্কেটে সমানতালে সমালোচিত আদনান ইমাম। মানিলন্ডারিং ও শেয়ারবাজার কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শর্তভঙ্গের দায়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তার কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে। চুক্তি ভঙ্গের দুই বছরের মাথায় কোম্পানির বিরুদ্ধে ‘কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না’ তার ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৮ অক্টোবর নোটিশ দিয়েছে এনবিআর।
নোটিশ পাওয়ার বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করেন জেনেক্স ইনফোসিসের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের প্রধান আশিকুর রহমান। আরও তথ্য জানতে কোম্পানি সেক্রেটারি মোস্তাক আহমেদকে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেনেক্সের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) জুয়েল রশিদ সরকার গতকাল শনিবার রূপালী বাংলাদেশের এ প্রতিবেদককে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবরের চুক্তি অনুসারে ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ ইএফডি ও এসডিসি মেশিন সরবরাহ করবে জেনেক্স। নির্দিষ্ট মেয়াদে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে ঢাকার দুটি এবং চট্টগ্রামসহ তিনটি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস বিক্রি ও পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে। সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফজলে ইমাম ও এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মইনুল খান। সেই চুক্তির শর্তভঙ্গ করে কোনো মেশিন সরবরাহ না করায় শাস্তির মুখে পড়ছে জেনেক্স কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, সংবেদনশীল এই তথ্য প্রকাশ করে পুঁজিবাজার থেকে অনেক টাকা কামিয়েছেন জেনেক্স ইনফোসিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান ইমাম। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গিলবার্ট স্ট্রিট এস্টেটস লিমিটেডের পরিচালক তিনি। বিগত হাসিনা সরকার থেকে সুযোগ নেওয়া আদনান ইমাম অন্তর্বর্তী সরকারের আমল থেকেই নিখোঁজ।
চুক্তি শেষে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেনেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ইএফডি ও এসডিসি স্থাপন করলে প্রতি বছর জেনেক্স ইনফোসিসের রাজস্ব আসবে ২১২ কোটি টাকা। তবে দুই বছর পার হলেও এনবিআর সম্পর্কিত আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এ কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করে বাস্তবে ও কারিগরি কাজের ক্ষেত্রে চুক্তির ‘গুরুতর অসঙ্গতির’ এসব প্রমাণ পেয়েছে এনবিআরের দুটি কমিটি। এরপর প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে ২৮ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর চুক্তির এক বছরের মধ্যে ২০ হাজার ইএফডি বসানোর কথা ছিল। পরে সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একইসংখ্যক মেশিন বসানোর জন্য ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় এনবিআর। তবে জেনেক্স বাস্তবে তিনটি জোনে যন্ত্র বসাতে পেরেছে ১৫ হাজার ৯৯৫টি। এর মধ্যে ১২ হাজার ডিভাইস প্রকৃতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকি ডিভাইসগুলো সিস্টেমে ‘পেয়ারিং’ অবস্থায় ছিল।
নোটিশে জেনেক্স ইনফোসিসের বিরুদ্ধে যথাসময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইএফডি মেশিন বসাতে না পারা, বসানো ইএফডি ঠিকঠাক স্থাপন না করা, সঠিক ব্র্র্যান্ডের ইএফডি না বসানো এবং যেগুলো বসিয়েছে তাতে বিক্রির তথ্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ফিচারের কমতি থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তির আওতায় কর্মকর্তা ও মেশিন ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও তা করেনি বলে জানিয়েছে এনবিআর। যাকে বড় ধরনের ভুলের শামিল বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপনের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়কে ডিজিটাল করার কাজে এনবিআরের একটি প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।
ফলে দুই বছরের মাথায়ও বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। চুক্তির বিভিন্ন শর্তকে সামনে এনে কোম্পানির বিরুদ্ধে ‘কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না’ সেই ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৮ অক্টোবর নোটিশ দিয়েছে এনবিআর।
নোটিশ পাওয়ার বিষয়ে জেনেক্সের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স প্রধান আশিকুর রহমান তথ্য নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে শর্তভঙ্গ করায় জেনেক্স কী ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে, তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আব্দর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :