ঢাকার আপত্তি থাকার সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে লন্ডনকে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই সমাবেশে হাসিনার বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনৈতিকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যকে নিয়ে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে দেশটির অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ। যদিও পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে অনেক অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতিবাদ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ সরকার।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ব্রিটেনকে নিয়ে অস্বস্তির দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে দেশটিতে অবস্থান করা আওয়ামী সমর্থকদের তৎপরতা। তারা লন্ডনে একটি বড়সড় সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়। যেখানে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতির চেষ্টা করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে তারা ওই আয়োজনের একটি পোস্টার করেছে, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে হাসিনার বক্তব্য প্রচার করা হয়। যদিও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। খোদ আশ্রয়দাতা ভারতই তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রিট করছে।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ওই সমাবেশে শেখ হাসিনাকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত করার চেষ্টা করেন আয়োজকরা। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে ডেকে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সাধারণত যেকোনো বিষয়ে অসন্তোষ জানাতে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারকে অতিরিক্ত সচিব বা মহাপরিচালক পর্যায়ে ডাকা হয়। কিন্তু ব্রিটেন যেহেতু শুরু থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রকাশ্যে সাপোর্ট দিয়ে আসছে তাই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে উপদেষ্টা নিজেই রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কথা বলছেন। তা ছাড়া ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল।
লন্ডনে প্রকাশ্যে এলেন আওয়ামী লীগের তিন নেতা: অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হওয়ার পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে পাড়ি জমান। এর পর দলের অন্যান্য নেতাও নানা কারণে দেশ ত্যাগ করেন।
অনেক নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে; যার ফলে বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিদেশে আশ্রয় নেন, আর কিছু নেতা জেলে রয়েছেন। এদিকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এক নতুন দৃশ্য দেখা গেছে।
সেখানে দেখা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। ওই অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। এর আগে, ৭ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলের সামনে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
আব্দুর রহমান ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন, শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, এবং হাবিবুর রহমান হাবিব সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সরকারের পতনের পর, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং নেতা-কর্মী গা-ঢাকা দেন বা দেশ ছাড়েন।
সূত্র জানায়, দেশে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও, এই নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে শেখ হাসিনার ভার্চ্যুয়াল সমাবেশে উপস্থিত থাকা নেতাদের মধ্যে এই মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক ও আইনগত চাপ বেড়ে চলেছে।
এসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ঢাকার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে লন্ডনকে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই সমাবেশে হাসিনার বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনৈতিকরা বলছেন, ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে শেখ হাসিনার ভার্চ্যুয়াল সমাবেশে উপস্থিত থাকা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে বিভিন্ন মন্তব্য চলছে। সম্প্রতি কিছুদিন আগে হাসিনাকে নিয়ে আমাদের দেশে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে যুক্তরাজ্যকে নিয়ে। যেটা নিয়ে বাংলাদেশে অসন্তোষ। বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
শেখ হাসিনা বিদেশে ভার্চ্যুয়ালে দলীয় সংগঠনের অনুষ্ঠানে দেশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না যেটার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :