ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

অঞ্জনার কথিত ছেলে ও ড্রাইভার লাপাত্তা

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম

অঞ্জনার কথিত ছেলে ও ড্রাইভার লাপাত্তা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুরহস্য নিয়ে কিছুতেই কাটছে না ধোঁয়াশা। প্রয়াত অভিনেত্রীর বোন রঞ্জনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং বরেণ্য অভিনেতা আলমগীরের উপস্থিতিতে সম্পদের হিসাব চেয়ে অঞ্জনার কথিত ছেলে নিশাত রহমান মনি, কামরুল আলম রিপন ও ড্রাইভার আরিফকে গত ১২ জানুয়ারি ৩ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে সম্পদের হিসাব চেয়েছে শিল্পী সমিতি।

এ সময় শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ডি এ তায়েবকে প্রধান করে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- ইউসুফ খান, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান, বিপ্লব শরীফ ও নাহিদা আশরাফ আন্না। তদন্তে কাজ করছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।

অঞ্জনার সব সম্পদের হিসাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সমিতির তদন্ত কমিটির কাছে ৩ জনের সশরীরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও একমাত্র পালিত মেয়ে জামাই রিপন ছাড়া অন্য দুজন উপস্থিত হননি এবং প্রতিবেদন জমা দেননি। যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি পরিপূর্ণ নয়। এই হিসাবেও গরমিল রয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালের রিপোর্টও জমা দেননি তারা।

শুরু থেকেই নিশাত মনি ওরফে সাজ্জাদ মনির রহস্যজনক আচরণ জানিয়ে শিল্পী সমিতির সহসভাপতি-মুখপাত্র ডি এ তায়েব দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা মাত্র একজনের প্রতিবেদন পেয়েছি। এটি এখন যাচাই-বাছাই করব। তবে যেভাবে প্রতিবেদন আশা করেছিলাম সেভাবে পাইনি। তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২০ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল। শিল্পী সমিতি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। আমরা চেয়েছিলাম আইনের দিকে যাব না, কিন্তু মনির রহস্যজনক আচরণে সেদিকেই যেতে হচ্ছে।

চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি বলেন, অঞ্জনা আপার পালিত মেয়ে জামাই রিপন ফোন করে জানিয়েছেন- আপা ১১ দিন অসুস্থ হয়ে বাসায় পড়েছিলেন। তবে গণমাধ্যমে এসেছিল ৩-৬ দিন। তার চিকিৎসাসেবায় চরম গাফিলতি হয়েছে। মনির গাফিলতির কারণেই আমাদের সবার প্রিয় অঞ্জনা আপাকে হারাতে হয়েছে। মনির আচরণ শুরু থেকেই রহস্যজনক।

সনি রহমান বলেন, শিল্পীসমাজের মনে প্রশ্ন উঠেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পী সমিতি বিষয়টি আমলে নিয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী হলে অবশ্যই সমিতি অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনবে। তবে অঞ্জনা আপুর বোন মৃত্যুর কারণ না খতিয়ে সম্পদের হিসাব চেয়েছেন।

বিপ্লব শরীফ বলেন, মনির কাগজপত্রের সঙ্গে নামের মিল নেই। মনি পালিত ছেলে, সে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলতে বাধ্য করিয়েছিলাম। এর পর থেকে বিভিন্ন দেশ-বিদেশের নম্বর থেকে ফোনে হুমকি পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। ধারণা করছি, এটি মনি করাচ্ছে।

এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য নাহিদা আশরাফ আন্না, অভিনেত্রী বেবীকে বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকির অভিযোগ জানা গেছে। আন্না বলেন, মনিকে শুরুতে সহকারী জানতাম। এরপর ভাই, পরবর্তী সময়ে নিজের সন্তান দাবি করেন অঞ্জনা আপা। মনির সব কিছু জুড়ে মিথ্যাচার। আরও বেশ কিছু তথ্য আমার হাতে এসেছে।

বলা দরকার, কথিত ছেলে নিশাত মনি ও ড্রাইভার আরিফের আইডি কার্ডের সঙ্গে বাস্তবে নামের মিল পাওয়া যায়নি। তাদের কাগজপত্রে ভিন্ন নাম থাকলেও অন্য পরিচয়ে এত দিন চলাফেরা করতেন। ড্রাইভারের দাবি, তিনি বিনাবেতনে এত দিন চাকরি করেছেন। বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না চিত্রকর্মীরা। তারা বলছেন, নিশাত মনি ও ড্রাইভার আরিফ কৌশলে গুণী অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমানকে হত্যা করেছেন। অভিনেত্রীর শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন- এখন তোলপাড় এফডিসিপাড়ায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পী সমিতিতে নিশাত মনির প্রতিবেদন নিয়ে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসেনি। এরপর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ড্রাইভারেরও হদিস নেই। দুজনই লাপাত্তা। শিল্পী সমিতি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সরেজমিনে জানা গেছে।

আরবি/জেআই

Link copied!