ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
বাগমারার ২ সাবেক এমপি

তিক্ততা ভুলে কারাগারের এক কক্ষে অবস্থান

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৪, ১২:৪৭ এএম

তিক্ততা ভুলে কারাগারের এক কক্ষে অবস্থান

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একই দল করলেও মাঠের রাজনীতিতে পরস্পরের মধ্যে সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম আজাদৎ ও এনামুল হকের মধ্যে ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। দুজনই রাজশাহীর একই আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য। একজন ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার, আরেকজন ২০২৪-এর জানুয়ারির নির্বাচনে সংস সদস্য হয়েছিলেন আট মাসের জন্য।

পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করেছেন সভা-সমাবেশে। একজন আরেকজনকে নিজ নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন অনেকবার। একই দল করলেও সাবেক রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীরা পরস্পরের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। করেছেন মামলা-মোকদ্দমা।

এদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আলোচিত এ দুই সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। দুজন থাকছেনও একই কক্ষে। একে অন্যের সুখ-দুঃখের সঙ্গী ও সহযোগী হয়ে উঠেছেন তারা। এক খাবার দুজনে ভাগ করে খাচ্ছেন। একসঙ্গে নামাজ পড়ছেন। একজন আরেকজনকে ওজুর পানি তুলে দিচ্ছেন। দুই সাবেক সংসদ সদস্যের সৌহার্দ্যভাব এখন রাজশাহী কারাগারের সাধারণ বন্দি-কয়েদিদের আলোচনার উপলক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আদাবর এলাকার বাসভবন থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। ২৩ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। প্রথমে সাবেক সংসদ সদস্য এনামুলকে কারাগারের একটি সেলে রাখা হয়েছিল। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরে অন্য বন্দিদের মারাত্মক হামলার শিকার হন তিনি। এতে মাথায় আঘাত পান এনামুল। ওই রাতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বাগমারা থানায় এনামুলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক স্বতন্ত্র হয়ে কালামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। নির্বাচনের সময় কালামের সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর হাতে এনামুলের শতাধিক নেতাকর্মী হামলার শিকার হন। নির্বাচনি সহিংসতার পর পক্ষে-বিপেক্ষ একাধিক মামলা হয় থানায়।

কালামের ক্যাডারদের দাপটে এনামুল নির্বাচনের পর এলাকা ছাড়েন।
অন্যদিকে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর আবুল কালাম আজাদ আত্মগোপন করেন। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে কালামের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। ২ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে কালামকে গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ৪ অক্টোবর তাকে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন বাঁশ দিয়ে কালামের মাথায় আঘাত করেন। তবে মাথায় হেলমেট থাকায় তিনি রক্ষা পান। কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে তাকেও।

কারাগারের একটি কক্ষে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হককে রাখা হয়েছে। কারাগারের একটি পুরোনো কক্ষে ডিভিশনপ্রাপ্ত এই তিনজনকে রাখা হয়েছে তিনটি চৌকি পেতে। ছোট কক্ষটিতে পাশাপাশি দুটি চৌকিতে থাকছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল ও আবুল কালাম আজাদ। ডিভিশনপ্রাপ্ত হাজতিদের জন্য প্রদেয় সুযোগ-সুবিধার আওতায় তারা পছন্দের খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে পারেন। সপ্তাহে চার দিন ১০ মিনিট করে ফোনে কথা বলতে পারেন স্বজনদের সঙ্গে। দুই সপ্তাহে একবার স্বজনেরা দেখা করার সুযোগ পান।

আরবি/জেডআর

Link copied!