আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় থেকে এএসআই সোহেল দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন মিরপুর বিআরটিএতে। মিরপুর বিআরটিএতে রয়েছে তার একান্ত দালাল সিন্ডিকেট। এ দালাল সিন্ডিকেটের প্রধান এএসআই সোহেলের কথিত ভাগিনা রাফি।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সার্কেল-১, মিরপুর কার্যালয়ে দালাল ও বহিরাগত দ্বারা গ্রাহক হয়রানি, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে নানা সময়ে দালাল ও প্রতারক চক্রের অনেককেই কারাদণ্ড দিয়েছেন বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অবশ্য ৫ আগস্টের পর সেখানে পরিবেশ এখন ভিন্ন। দালালশূন্য না হলেও তাদের দৌড়ঝাঁপ কমেছে মিরপুর বিআরটিএ কার্যক্রমে। এই পরিবর্তনের মূল নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বর্তমান বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিনকে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এএসআই সোহেল দালাল সিন্ডিকেটের বাইরে যেসব দালাল কাজ করতে যায়, তাদের আটক করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গত সোমবার বিআরটিএ দালালমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর আনিসুজ্জামান। এ সময় কাফরুল থানার এএসআই সোহেল মিরপুর বিআরটিএর বাইরে থেকে ১১ জন দালালকে আটক করে বিআরটিএর হাজতখানায় রাখেন। বাকি কয়েকজনকে টাকার বিনিময়ে বাইরে থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আটককৃতদের মধ্যে নয়জনকে সাজা দেওয়া হয়, বাকি তিনজনের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি নয়জনের মধ্যে একজনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, বাকি নয়জনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তরা হলেনÑবিল্লাল হোসেন (৩৭), হাবিবুল্লাহ (২৪) এক মাস, রুবেল হোসেন (২৯) এক মাস, মো. মনির (৪০) ১৫ দিনের, রনি (২৮) এক মাস, হাচিবুল রহমান (২০) এক মাসের, জালাল হোসেন (৪৯) এক মাস, রিদয় (২৪) এক মাস ও আল আমিনকে এক মাস।
এ ছাড়া কাফরুল থানার এএসআই সোহেল ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার তথ্যও পাওয়া যায়। এএসআই নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিত ছাড়াই আশপাশের লোকজন ধরে বিআরটিএ হাজতখানায় ঢুকিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে লোক বুঝে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এএসআই সোহেল পুলিশের পোশাক খুলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিআরটিএতে দালালি করে বেড়ায়। এতে করে তার দালালি করার সুযোগ দিন দিন বেড়ে চলছে। সাধারণের মনে প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেখানে দালালমুক্ত করবে, সেখানে নিজেই দালালি করছে। তাহলে পুলিশের প্রতি জনগণের কতটুকু শ্রদ্ধা থাকবে।
এ বিষয়ে কাফরুল থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফা জানান, এএসআই সোহেল আইনি প্রক্রিয়ায় বিআরটিএতে কাজ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাফরুল থানার এএসআই সোহেল বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। এ ছাড়া আমার বলার কিছু নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বিআরটিএ সদর দপ্তরের প্রশাসন শাখার কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, এএসআই সোহেলের বিরুদ্ধে সঠিক প্রমাণ থাকলে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :