ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪

বিআরটিসি লস কাটিয়ে এখন লাভজনক

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১০:০৯ পিএম

বিআরটিসি লস কাটিয়ে এখন লাভজনক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। তিনি অতিরিক্ত সচিব এবং বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১১ ব্যাচের সদস্য। চেয়ারম্যান হিসেবে বিআরটিসিতে যোগদানের আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিআরটিসির আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নসহ বিআরটিসির অনলাইন সেবা ও নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ।

রূপালী বাংলাদেশ: বিআরটিসি কি লাভজনক প্রতিষ্ঠান? কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কি নিয়মিত হচ্ছে?

মো. তাজুল ইসলাম: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসির) একসময় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। লাভের পাশাপাশি সেবা বাড়ানোর চেষ্টায় আমরা সব সময় কাজ করছি। বিআরটিসির যাত্রী বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে, আয়ও হচ্ছে দ্বিগুণ। একসময় আমরা ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেতন দিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে আমরা ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেতন দিচ্ছি। প্রতি মাসের বেতন প্রতি মাসের ১ তারিখে দিয়ে দিচ্ছি, যেন কেউ বেতনের জন্য মানবেতর জীবন যাপন না করে। বেতন-বোনাস সবই পরিশোধ করছি। এ ছাড়া বকেয়া বেতন-বোনাসও পরিশোধ করেছি। শুধু তাই নয়, বেতনের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ২৩ বছর পর বিআরটিসির শ্রান্তি-বিনোদন ভাতার ব্যবস্থা করেছে। যেখানে কর্মচারীরা শ্রান্তি-বিনোদন ভাতার নামই শোনেনি আগে।

রূপালী বাংলাদেশ : বিআরটিসির পুরোনো ও যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ বাস সচলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

মো. তাজুল ইসলাম : বিআরটিসির প্রায় ৯০০ বাস ছিল। আমি দায়িত্বে আসার পর ৪৫০টির বেশি পুরাতন বাস সংস্কার করে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও ৩৪০টি নতুন এসি বাস যুক্ত হবে। এর মধ্যে কিছু মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহনে শাটল বাস সার্ভিস হিসেবে চলাচল করবে। পাশাপাশি ঢাকা নগর পরিবহন ও আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটে এই বাস চালানো হবে। বিআরটিসির লাভজনক প্রতিষ্ঠানের ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।

রূপালী বাংলাদেশ : যাত্রীসেবার মান ও টিকিট সিন্ডিকেট নির্মূল করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বিআরটিসি?

মো. তাজুল ইসলাম : আমি ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারিতে যোগদানের পর থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিআরটিসি বাসের যাত্রীসেবার মান বাড়ার সঙ্গে আয়ও বেড়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাদখোলা বাস প্রস্তুত করে সাফ বিজয়ী নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের বরণ করেছি, যার মধ্য দিয়ে আমাদের কর্মদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

রূপালী বাংলাদেশ : বিআরটিসি যুব উন্নয়ন এবং দক্ষ চালক সৃষ্টিতে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে?

মো. তাজুল ইসলাম : বিআরটিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৭৯৪ জন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৬২ জন নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন পদে মোট ৭৪০ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। আমরা বিশ্বাস করি, যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তারা ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগের মাধ্যমে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবার ও দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

এ ছাড়া বিআরটিসির ১০টি বাসে প্রাথমিকভাবে চালকদের জন্য ফ্যাটিগ সতর্কীকরণ ডিভাইস সংযোজন করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাসমূহের মধ্যে বিআরটিসি প্রথম স্থান অর্জন করে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গের যোগাযোগের সুবিধার্থে ২১টি জেলার ২৩টি রুটে ৬০টি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০৬টি গাড়ি মেরামত করে বিআরটিসির গাড়িবহরে সংযুক্ত করে রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির গাজীপুর কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের যেসব মেরামত কারখানা ডিপোতে মেরামতের কাজ করছে, সেগুলো যেকোনো বেসরকারি কারখানার চেয়ে কম খরচে ভালো সেবা প্রদান করছে।

বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পেট্রোল পাম্পগুলো সচল করা হয়েছে। ফলে রাজস্ব আয় বেড়েছে এবং জ্বালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে ১১টি রুটে ই-টিকেটিং ও তিনটি রুটে অনলাইন টিকিটের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ : ঈদকালীন বিআরটিসির বাসের আরও অধিক কোচ চালুর উদ্যোগ আছে কি? সঠিক ভাড়া, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া ও টিকিট সিন্ডিকেট নিয়ে বিআরটিসির পদক্ষেপ কী?

মো. তাজুল ইসলাম : ঈদে আমাদের স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু থাকে। ভবিষ্যতে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে আরও সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। একটি বিষয় জানাতে চাই, বিআরটিসিতে কোনো অবৈধ সিন্ডিকেট নেই। এখানে টিকেটিংয়ে কোনো ধরনের কালোবাজারি হয় না। তবে যদি কখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সঠিক ভাড়ায় যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমরা শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দিয়ে আসছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিতে হবে। এমনকি কোনো সময় যদি হাফ ভাড়ার চেয়ে ৫ টাকা কম থাকে, সেটাও গ্রহণের জন্য নির্দেশ রয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ : ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মো. তাজুল ইসলাম : রূপালী বাংলাদেশ ও সব পাঠকদেরও ধন্যবাদ

আরবি/জেডআর

Link copied!