নীতিমালায় না থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) বাতিলে অ্যাকশনে নেমেছে জননিরাপত্তা বিভাগ।
গণঅভ্যুত্থানের পর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী চলতি মাসেই চার শতাধিক কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অর্ধশত গাড়ির স্টিকারও। বাতিলের তালিকায় আছে আরও কয়েক শ কার্ড। এ বিষয়ে নীতিমালা সংশোধনে গঠিত কমিটির খসড়া এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নীতিমালা ভঙ্গ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ দলের ব্যবসায়ী সমর্থক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের এই বিশেষ কার্ড দিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা ২০১৪ সালের নীতমালা অনুয়ায়ী এই কার্ড প্রাপ্য হলেও তারা অপসারিত হওয়ায় বাতিল করা হয় তাদের কার্ড।
পাশাপাশি নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য না হয়েও আসাদুজ্জামান খান কামালের শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় গাড়ির স্টিকারসহ এই বিশেষ কার্ড পাওয়ার সৌভাগ্যবানদের তালিকায় ছিলেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের কলঙ্কিত অধ্যায়ের রচয়িতা সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের সিনিয়র অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে প্রবেশ করে দিনভর তদবিরে মত্ত থাকতেন। সচিবালয়ের বাইরেও তারা গলায় ঝুলিয়ে ব্যবহার করতেন এই কার্ড। এসব নিয়ে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও তা কখনোই আমলে নেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রাজনৈতিক বিবেচনায় শত শত বিশেষ আইডি কার্ড দিয়েছিলেন। তার দেওয়া এসব কার্ড বাতিলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর চলতি মাসেই চার শতাধিক কার্ড ও অর্ধশত গাড়ির স্টিকার বাতিল করা হয়।
আরও ৫০০ কার্ড বাতিলের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কার্ড প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে আগের রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া সব কার্ডই বাতিল হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, গণঅভ্যুত্থানের পর গত ২৯ আগস্ট ৫০টি, ২ অক্টোবর ৫০টি, ৬ অক্টোবর ৪০টি, ১১ সেপ্টেম্বর ১০০টি, ১৭ সেপ্টেম্বর ১০০টি কার্ড বাতিল করা হয়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে আরও ৬০টি কার্ড বাতিল করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের অনুরোধে অস্যংখ্য ব্যবসায়ীকে এই কার্ড প্রদান করা হয়েছিল, যার বিনিময়ে লাখ টাকাও গ্রহণ করেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা। এসব কার্ড এখন বাতিলের তালিকায় রয়েছে বলেও জানায় সূত্রটি।
আপনার মতামত লিখুন :