ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

পাচারের ১০০ বিলিয়ন ডলার ফেরাতে মামলার প্রস্তুতি

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০১:০৮ এএম

পাচারের ১০০ বিলিয়ন ডলার ফেরাতে মামলার প্রস্তুতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচারের অর্থ ফেরাতে বিশে^র অনেক দেশের কাছে তথ্য ও আইনি সহযোগিতা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ২৯ সেপ্টেম্বর টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্নের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স। এই অর্থ ফেরাতে মামলার প্রয়োজন এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিশেষ সহযোগিতা করবে। তাই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের সভাপতি হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আছেন। সেখান থেকে ফিরলেই মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে বলে বিশেষ সূত্র জানায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে গতকাল বুধবার জানা গেছে, যেসব অর্থ (স্টোলেন অ্যাসেট) পাচার হয়ে বিদেশে গেছে, এসব ফেরাতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি এবং প্রথম সভাও করা হয়েছে। টাস্কফোর্স সক্রিয় হলেই পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানো সম্ভব।

অর্থ ফেরাতে কালক্ষেপণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, কী রকম সময় লাগবে, তা এখন পর্যন্ত কেউ ধারণা দিতে পারেনি। বিষয়টিতে বিভিন্ন দেশের আইনি প্রক্রিয়া জড়িত থাকবে। মামলা করার প্রয়োজন হবে। ধারণা করা যেতে পারে, এতে সময়ক্ষেপণ হবে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য আমাদের বিশেষ সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী টাস্কফোর্সের কার্যাবলি সমন্বয় করবেন এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) টাস্কফোর্সকে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।

পাচারের টাকা ফেরানো সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, টাস্কফোর্স সক্রিয় হলেই পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানো সম্ভব। গভর্নর ওয়াশিংটনে আছেন, আশা করছি, ভালো কিছুু আসবে। টাকা ফেরাতে অনেক দেশে আমরা তথ্য পাঠিয়েছি। তবে এ বিষয়ে মামলার প্রয়োজন রয়েছে। বড় কথা হলো,  যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এসব বিষয়ে আমাদের বিশেষ সহযোগিতা করবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকা ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে; একটি কমিটিও আছে। তবে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে কিছু কারিগরি সহায়তা লাগবে।

পাচার হওয়া অর্থ কবে নাগাদ ফেরত আসতে পারে-এমন প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকা অনেক দিন ধরে পাচার হয়েছে। এখন দিনক্ষণ ধরে বলা সম্ভব নয় কবে ফেরত আসবে। তবে ফেরত আনার কাজ শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৯ সেপ্টেম্বর গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে সভাপতি করে টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করা হয়েছে।

সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি।

টাস্কফোর্সের কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে- দেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত ও তদন্তে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা প্রদান করা; পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে দূর করার উদ্যোগ নেওয়া এবং সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

কার্যপরিধির আওতায় আরও রয়েছে-জব্দ বা উদ্ধার করা সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য আহরণ করা। একই সঙ্গে পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সক্ষমতা বাড়ানো ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন করা।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৫ মে প্রথম টাস্কফোর্স গঠন করে সাবেক সরকার।

আরবি/জেডআর

Link copied!