ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪

ছাত্রলীগের দাপুটে নেত্রীরা লাপাত্তা

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১০:০০ পিএম

ছাত্রলীগের দাপুটে নেত্রীরা লাপাত্তা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিতর্কিত ও দাপুটে নেত্রীদের হদিস মিলছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বিগত সময়ে ক্ষমতাধর এসব নেত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদের মধ্যে নানা অপকর্মে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমা সিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসেন, বেনজির হোসেন নিশি, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা, সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা, সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানাসহ আরও অনেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্য, সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্য- কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না তারা। এমনকি জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও তারা ঘটিয়েছেন, হুমকি দিয়েছিলেন ‘৭ মিনিটে ঢাকা খালি’ করার। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন দল ও সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা। এর পরই লাপাত্তা হয়ে যান আলোচিত বিতর্কিত এসব নেত্রী।

গত ২৭ অক্টোবর ঢাবির শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া একই দিন বিকালে রাজশাহী মহিলা কলেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগের নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে পিয়া। এর আগে গ্রেপ্তার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাতেন তিনি। এই তিন নেত্রী ছাড়া এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হাজারো প্রাণহানির ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ সদর দপ্তরসহ বেশ কিছু থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় অনেক থানা ভবনে। লুট করা হয় অস্ত্র ও মালামাল। এতে অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন। এরপর থেকেই সারা দেশের থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতে হাল ধরেন অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দাপুটে এসব নেত্রীকে। একসময় ক্ষমতাধর ছাত্রলীগ নেতাদের থেকে কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না সংগঠনটির নেত্রীরাও।

আত্মগোপনে আতিকা : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ফলে ক্যাম্পাসে তিনি ছিলেন ক্ষমতাধর নারী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার অত্যাচারে ছিলেন অতিষ্ঠ। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কাছে তিনি এক আতঙ্কের নাম। কমিটি বাণিজ্য, তদবিরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-নিপীড়নে সোচ্চার ছিলেন আতিকা। তার ঔদ্ধত্য ছিল ১৫ জুলাই রাতেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘৭ মিনিটে ঢাকা ক্লিয়ার’-এর হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির অপচেষ্টা করেন তিনি। এরপর আর শেষ রক্ষা হয়নি। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার মধ্যরাতে ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি ও হালকা উত্তম-মধ্যম দিয়ে আতিকাসহ ছাত্রলীগের ১০ নেত্রীকে রোকেয়া হল থেকে বের করে দেন সাধারণ ছাত্রীরা। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাকে আর দেখা যায়নি জনসম্মুখে।

হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ছাত্রলীগ নেত্রীর মধ্যে আছেন হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইন, ছাত্রলীগ নেত্রী বর্ণালী ঘোষ বর্ণ, সামিহা মাহবুব, সাজিয়া রহমান সিলভী, বিপর্ণা রায় ও সাইফুন্নেসা ইলমি। আতিকা ছাড়া বাকি সবাই আসন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছিলেন। আতিকার পাশাপাশি তারাও এখন লাপাত্তা।

ঢাবির সুফিয়া কামাল হলের তিলোত্তমা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী তিলোত্তমা সিকদার ২০১২-১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও ছিলেন। তবে ৯ বছর ১০ মাস পার হতে চললেও এখনো অনার্স পেরোতে পারেননি। যদিও তার বিভাগের সহপাঠীরা ২০১৮ সালে অনার্স শেষ করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। গত ২৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় তিলোত্তমার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাতে লাঠি ও হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা যায় তাকে। এ ঘটনায় তিলোত্তমা শিকদারসহ ৩২ নেতার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে গভীর রাতে হলের তিন ছাত্রীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরব থেকে দমন-পীড়ন করেছেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের পর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগের সাত নেত্রীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সেই সাত নেত্রী হলেন ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলেন্স বিভাগের তিলোত্তমা শিকদার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পূজা কর্মকার, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের রিমা আক্তার ডলি, ফলিত গণিত বিভাগের মৌরি তানিয়া, সংগীত বিভাগের সৈয়দা মেহজাবীন সারা, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের মালিহা আফরিন সিনথিয়া এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ইতি খাতুন। সাতজনের মধ্যে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম ও ইনানের অনুসারী এবং কেউ ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারি শয়ন ও সৈকতের অনুসারী ছিলেন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

লাপাত্তা ঢাবির ২৩ নেত্রী : গত ২৭ অক্টোবর শাহবাগ থানায় ২৩ নেত্রীসহ ছাত্রলীগের ২২০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরমান হোসাইন। মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ ২২০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৭০ থেকে ৪২০ জনকে আসামি করে এই মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী আরমান হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, গত ২৫ অক্টোবর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছিল। ওই মামলায় সবার নাম না আসায় যাবতীয় পর্যবেক্ষণ শেষে নতুন করে আরেকটি মামলা করা হয়। এ মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৩ জন ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ১৫ জুলাই এবং এর আগে-পরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে যেতে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বাধা দিয়েছেন। অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন।

সেই ২৩ নেত্রী হলেন- শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক সিঁথি সরকার, দপ্তর সম্পাদক শারমিন শিলা হ্যাপি, সহসভাপতি নাজমিন আফরোজ কেয়া, সদস্য জেবা ফৌজিয়া সাদিয়া, সাবেক সভাপতি জিয়াসমিন শান্তা, নিপুণ ইসলাম তন্বি, মাউনজিরা বিশ্বাস সুরভী, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল আতিয়া। এ ছাড়া রোকেয়া হলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপর্ণা রয়, উপ-আইন সম্পাদক সাফরিন সুরাইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুন্নেছা ইলমি। বঙ্গমাতা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পূর্ণিমা দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া পারভীন দ্বীপা। একই হলের ছাত্রলীগ নেত্রী সুমাইয়া আক্তার সীমা ও নুসরাত জাহান রুনা। কুয়েত মৈত্রী হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিকা বুশরা মারিয়া, সদস্য রিয়া মজুমদার, সহসভাপতি সুমাইয়া জান্নাত সারা ও নাহিদা লুনা। সুফিয়া কামাল হলের ১ নম্বর সহসভাপতি মৌরি তানিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মালিহা আফরিন সিনথিয়া। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্রলীগের এসব নেত্রী আত্মগোপনে চলে যান।  

খোঁজ মিলছে না গরম পানি নিক্ষেপকারী নেত্রীদের : ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ইডেন কলেজের বকুলতলায় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা সিদ্দিকা মীম, সুস্মিতা বাড়ৈ, রুনা আক্তার সুপ্তি, আর্নিকা তাবাসসুম স্বর্ণা, লিমা ফেরদৌস, আশরাফ লুবনা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন নাহার জ্যোতি ও ফারজানা ইয়াসমীন (লুবনা নীলা)। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়ে ৩ আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। শেখ হাসিনার পালানোর পর তারাও গা-ঢাকা দেন।

ইডেনের ডন রিভা ভারতে : শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সব সময়ই ছিলেন ইডেন সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা। জানা গেছে, তামান্না জেসমিন রিভা ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এক যুগ ধরে তিনি ইডেনের ছাত্রীনিবাসে থাকেন। কলেজের ছয়টি হলের ৩৮টি কক্ষের অঘোষিত মালিক ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি রিভা। এসব কক্ষের প্রতিটিতে আটজন করে শিক্ষার্থী থাকতেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্রতি মাসে প্রতিটি সিট থেকে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া নিতেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সে হিসাবে প্রতি মাসেই তার ৬ লাখ টাকা সিট বাণিজ্য থেকে অবৈধ আয় হতো।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, রিভা সব সময় থাকতেন মারমুখী অবস্থানে। পান থেকে চুন খসলেই সাধারণ শিক্ষার্থী তো বটেই, রক্ষা পেতেন না নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। রিভার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছেন, বর্তমানে রিভা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

গভীর রাতে বোরকা পরে পালিয়ে যান রিভা-রাজিয়া : কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ভয়ে গত ১৬ জুলাই রাত ৩টার দিকে বোরকা পরে আবাসিক হল থেকে পালিয়ে যান ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা।

জানা গেছে, ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ১০ ছাত্রলীগ নেত্রীকে হল থেকে বের করে দেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে ঢাবির আরও কয়েকটি হল থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনা শোনার পর ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হল থেকে পালিয়ে যান তারা। হল থেকে বের হতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য বোরকা পরেন দুই নেত্রী। এরপর রিভা ভারতে জানা গেলেও রাজিয়া সুলতানার খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে সরব নিশি : ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেনজির হোসেন নিশি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিশির ক্ষমতা ছিল অসীম।

অভিযোগ আছে, লেখক ভট্টাচার্যের কমিটি বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজি থেকে প্রাপ্ত অর্থের চার ক্যাশিয়ারের একজন ছিলেন তিনি। আত্মগোপনে থাকা নিশি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে সক্রিয়, অজ্ঞাত স্থান থেকে দিয়ে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী নানা পোস্ট।

কুয়েত মৈত্রীর ফরিদা পারভীন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান। সর্বশেষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তিনি। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশে ঢাকা সিটি কলেজে প্রভাষক হয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি সেই চাকরি হারান, চলে যান আত্মগোপনে

আরবি/জেডআর

Link copied!