ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪

উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় গঠিত কমিটি

মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম

উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় গঠিত কমিটি

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

স্বরাষ্ট্রের দেওয়া আইডি কার্ড যাচাই-বাছাই
**দলীয় বিবেচনায় ৪ হাজার অস্থায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ১৪ হাজার স্থায়ী কার্ড দেওয়া হয়**

অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থায়ী-অস্থায়ী বিশেষ পরিচয়পত্র (আইডেন্টি কার্ড) যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। চার সদস্যের এই কমিটির একটি প্রস্তাবনা সিনিয়র সচিবের দপ্তর হয়ে এখন উপদেষ্টার টেবিলে অনুমোদনের অপেক্ষায়। দুয়েক দিনের মধ্যে এই কমিটি অনুমোদন পাচ্ছে। এর আগে গত ২৭ অক্টোবর প্রিন্ট এবং অনলাইন ভার্ষণে ‘স্বরাষ্ট্রের ৪ শতাধিক আইডি কার্ড বাতিল, কঠোর অবস্থানে জননিরাপত্তা বিভাগ’ শিরোনামে রূপালী বাংলাদেশ-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। বাতিল হওয়া কার্ডের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ যুবলীগের নেতাকর্মীদের আইডি কার্ড ছিল।

গত ৫ আগস্ট পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রায় ৪ হাজার অস্থায়ী আইডি কার্ড দিয়েছিলেন। আর সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়েছিলেন সারে ১৪ হাজার স্থায়ী কার্ড। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের তত্ত্বাবধানে গঠিত এই কমিটি সারে ১৮ হাজার কার্ড যাচাই-বাছাই করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, নীতিমালায় না থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাজনৈতিক বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৪ হাজার বিশেষ আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও জেলা পরিষদ, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার কার্ড তিনি দিয়েছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন ব্যবসায়ীরাও কয়েকশ কার্ড পেয়েছেন পলাতক সাবেক এই মন্ত্রীর বিবেচনায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা ২০১৪ সালের নীতমালা অনুয়ায়ী এই কার্ড প্রাপ্য হলেও তারা অপসারিত হওয়ায় বাতিল করা হয় তাদের কার্ড। তবে এখনো অনেক মেয়র-উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্ড বাতিল করা হয়নি। চার সদস্যের কমিটি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি নীতিমালা অনুযায়ী প্রাপ্য না হয়েও আসাদুজ্জামান খান কামালের শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় গাড়ির স্টিকারসহ এই বিশেষ কার্ড পাওয়ার সৌভাগ্যবানদের তালিকায় ছিলেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সূত্র জানায়, গণঅভ্যুত্থানের পর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী চলতি মাসেই চার শতাধিক কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অর্ধশত গাড়ির স্টিকারও। বাতিলের তালিকায় আছে আরও কয়েকশ আইডি কার্ড। সূত্র আরও জানায়, গণঅভ্যুত্থানের পর গত ২৯ আগস্টে ৫০টি, ২ অক্টোবরে ৫০টি, ৬ অক্টোবরে ৪০টি, ১১ সেপ্টেম্বর ১০০, ১৭ সেপ্টেম্বর ১০০টি কার্ড বাতিল করা হয়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে আরও ৬০টি কার্ড বাতিল করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে প্রবেশ করে দিনভর তদবিরে মত্ত থাকতেন। সচিবালয়ের বাইরেও তারা গলায় ঝুলিয়ে ব্যবহার করতেন এই কার্ড। এসব নিয়ে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও তা কখনোই আমলে নেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
 

আরবি/জেআই

Link copied!