ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের এক অংশের সভাপতি মেঘমল্লার বসু ইস্যুতে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তর্দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছে। ‘লাল সন্ত্রাস একমাত্র উপায়’ মেঘমল্লার বসুর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
মূলধারার ছাত্র ইউনিয়নের দাবি, মেঘমল্লার ছাত্র ইউনিয়নের কেউ নন। তবে মেঘমল্লার এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি না হলে আমাকে নিয়ে আলোচনা কেন?’
অন্যদিকে এ ঘটনার জেরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেঘমল্লারের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক টাইমলাইনে মেঘমল্লার বসু ইংরেজি বার্তায় লেখেন, একমাত্র বিকল্প লাল সন্ত্রাস।
প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে প্রতিরক্ষামূলক সহিংসতা। আমরা জাগরণ ও মিছিল করি, যার সহিংস হওয়ার ক্ষমতা নেই। তা দ্বারা আপনি কখনোই আপনার কমরেডদের রক্ষা করতে পারবেন না। মানুষ আপনাকে পছন্দ করবেন ঠিকই, কিন্তু আপনার আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে না। কারোর আর ‘মুক্তমনা’ পার্টির দরকার নেই। শহিদদের কেউ পরোয়া করে না। ফ্যাসিবাদ তখনই ভালো, যখন সে মৃত।
ওই পোস্ট পরে ডিলিট করা হলেও তার স্ক্রিনশট ঘিরে চলছে তুমুল সমালোচনা। সরাসরি যুদ্ধ ও জননিরাপত্তার ওপর আঘাত বলে মনে করছেন অনেকেই।
ঘটনার জেরে ১৮ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন। এ সময় ‘লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। একই সঙ্গে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন কোনো ব্যক্তির মতামতকে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। মেঘমল্লার বসু বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন।
একসময় ছাত্র ইউনিয়ের বহিষ্কৃত মেঘমল্লার বসুসহ তার কিছু অনুসারী সাবেক ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহার কাছে একটি রিকুইজিশন আবেদন করেন যুক্ত হতে। ফয়েজ উল্লাহ তাদের পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য সেই রিকুইজিশন খারিজ করে দেন। আবারও ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেও ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী নানা কারণসহ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে বৈঠকের কারণে তাদের আমাদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। ছাত্র ইউনিয়ন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী নয়, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোল এগিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছাত্র ইউনিয়নের লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনে নব্য ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। সিরাজ সিকদারের সাথে ছাত্র ইউনিয়নের কোনো সম্পর্ক নেই বরং তার বাহিনীর হাতে ছাত্র ইউনিয়নের বহু নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন।
সিরাজ সিকদারকে নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার বিনা বিচারে ক্রসফায়ারে সিরাজ সিকদারকে হত্যা করেছিল, যা ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন করে না।
সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ করা নব্য ফ্যাসিস্টরা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ববর্তী স্বৈরাচারের দোসরদের মতো কুক্ষিগত করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য ফ্যাসিস্টরা তাদের বিরুদ্ধ মতকে দমনে মব লিঞ্চিংয়ের যে প্রক্রিয়া চালু করেছে, তা প্রতিহত করতে সবাইকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই।
এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী মো. মুসাদ্দিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, মেঘমল্লার বসু ঢাবির ছাত্র ইউনিয়নের একটি শাখার সভাপতি।
আমরা স্পষ্ট করতে চাই, ‘লাল সন্ত্রাস একমাত্র উপায়’ এমন পোস্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাঁয়তারা যে করেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। ছাত্র ইউনিয়ন বা কোনো ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নয়। বাম-ডান বা কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মেঘমল্লার বসু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি না হলে আমাকে কেন সেটা বলা হচ্ছে? আমার বিষয়ে কে কী বলছে, সে বিষয়ে আমার আগ্রহ শূন্য।
গত রাতে যাদের নেতৃত্বে আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছে, বিশেষ করে কোটা আন্দোলনের নেতা মাহিন সরকার, তারা ৫ আগস্টের পর নিজ নিজ সংগঠনে ফিরে গেছেন। তাদের কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তার নাম জানলেও কেউ প্রকাশ করছে না। এ ঘটনায় শিবিরের নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। এ থেকে স্পষ্ট, শিবিরের বাম রাজনীতির প্রতি যে এলার্জি, তারই প্রতিফলন এটা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে পোস্ট করেছি, সেখানে ঢাবির ক্যাম্পাস ইস্যু কোথাও নেই। এ কথা তাদের গায়ে লাগার কোনো কারণ দেখি না। তবে, তারা কেন আতঙ্কবোধ করছেন! তারা কি সভারেন্টির কথা বলে মানুষ খুন করতে আগ্রহী?
অভ্যুত্থান-পরবর্তী শিবিরের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে না থাকলে আওয়ামী লীগÑ এটাই বাংলাদেশের রাজনীতি। জুলাই আন্দোলন ও দেশের প্রয়োজনে যেসব ইস্যুতে আমাদের বসার প্রয়োজন ছিল, বসেছি। আমাদের শিবিরের বিরুদ্ধে যে রাজনীতি সেটাও স্পষ্ট। আলাদা করে বলার কিছু নেই।’
এসব বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকারকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে আন্দোলন থেকে সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লাল সন্ত্রাসের হাত ছিল। এদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :