ঢাকা শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

কক্সবাজারে স্পার আড়ালে অবাধ মাদক-দেহ ব্যবসা

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ১২:৪৩ এএম

কক্সবাজারে স্পার আড়ালে অবাধ মাদক-দেহ ব্যবসা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সৈকতের নগরী কক্সবাজার শহরের কিছু আবাসিক হোটেল ও মোটেলে গড়ে উঠেছে স্পা সেন্টার, বিউটি পার্লার ও সেলুন। এসব স্পা সেন্টার, বিউটি পার্লার ও সেলুনের আড়ালে গড়ে তোলা হয়েছে মাদক ও দেহ ব্যবসার অভয়ারণ্য। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলে এই অসামাজিক কার্যক্রম। উঠতি বয়সি সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে বডি ম্যাসাজের নামে চলছে দেহ ব্যবসা। কোনো অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবে নির্ভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এসব অবৈধ্য মাদক ও দেহ ব্যবসা। 

ফলে সৈকত-নগরীর সুনামসহ অন্যান্য হোটেল ও মোটেলে ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। অবৈধ ব্যবসা করা স্পা মালিকদের কাছে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে নেওয়া একটি ট্রেড লাইসেন্সই তাদের মূল সম্পদ। কক্সবাজার পৌরসভার লাইসেন্স ইন্সপেক্টর প্রমোদ পাল বলেন, প্রথমে স্পা সেন্টার হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স দিলেও এখন দেওয়া হচ্ছে বিউটি পার্লার হিসেবে।

এদিকে, পর্যটন শহরের অলিগলিতে, দেয়ালে, ল্যাম্পপোস্টে শোভা পাচ্ছে স্পা সেন্টারের পোস্টার ও প্লেকার্ড। এসব দেখে পথচারীরাও বিব্রত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলাতলি হোটেল-মোটেল জোনে আবাসিক হোটেলে প্রায় ৩০-৩৫টির অধিক নামে-বেনামে স্পা সেন্টার রয়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের সুগন্ধার পূর্ব পাশে সিলভিয়া রিসোর্টের দ্বিতীয় তলায় রেহেনা বেগমে ও মাজেদা আক্তারের যৌথ মালিকানাধীন গোল্ডেন স্পা সেন্টার খোলা হয়েছে। এই স্পা নিয়ে সৈকত পাড়াবাসী ও স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যরা বিব্রত। তাদের দাবি, রাস্তার ওপর এ ধরনের স্পা সেন্টার দেখতে আপত্তিকর, গোল্ডেন স্পাসহ অন্যগুলো বন্ধ করতে হবে।

কলাতলী সৈকতপাড়া কক্স অবকাশ হোটেলে প্রদীপ কান্তি কর্মকারের লাক্সারি থাই স্পা, জিনিয়া রিসোর্টে বহু বিতর্কিত স্পা কর্মী মোছাম্মৎ রিতার মালিকানাধীন স্মার্ট থাই স্পা, হোটেল হোয়াইট বিচে স্পা কর্মী জুলি আক্তারের অ্যাঞ্জেল টাচ থাই স্পা, লেগুনা বিচ হোটেলে আল আমিনের নিউ সেভেন স্কাই থাই স্পা।  এ ছাড়া কলাতলি ডলফিন মোড়ে হোটেল ওয়াল্ড বিচে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর মালিকানাধীন রিলেক্স থাই স্পা, এক সাথে রিয়ার নামের এক নারীর মালিকানাধীন পাশাপাশি ডিলাক্স থাই স্পা দুইটি, ডলফিন মোড়ের দক্ষিণ পাশে গ্রিন রেস্টুরেন্ট ও দাওয়াত রেস্তোরাঁর উপরে আয়েশা আক্তারের মালিকানাধীন অ্যারোমা থাই স্পা, শহরের সুগন্ধা প্রধান সড়কের পাশে আলফা ওয়েভ আবাসিক প্ল্যাটে আব্দুল্লাহ আল সিরাজের চায়না রোজ স্পা, সাগর পাড়ে হোটেল সি প্রিন্সে সি-প্রিন্সেস থাই স্পা, আকলিমা আক্তার খাতিজা নামে এক নারীর মালিকানাধীন দেলোয়ার প্যারাডাইসে কুইন থাই স্পা, পাশাপাশি স্পা কর্মী আকলিমা আক্তার খাতিজার আরও দুটি স্পা, হোটেল সি ওয়েলকামে মোহাম্মদ সোহেলের মালিকানাধীন নিউ সেভেন ডোর থাই স্পা, কলাতলি এ ব্লক গণপূর্ত মাঠের পূর্ব পাশে জেসমিনের মালিকানাধীন রানী থাই স্পা, আলফা ওয়েভে সুমন রানার থাই মেলোডি স্পা, মিসেস রূপার মালিকানাধী কটেজ জোনে ব্লু বে রিসোর্টে ব্ল্যাক রোজ থাই স্পা, হোটেল গ্রিন মেরিনাতে জুলি আক্তারের মালিকানাধীন অ্যাঞ্জেল টাচ স্পা, কলাতলি বি ব্লক সুগন্ধা পয়েন্টে সালেহা বেগমের সানসেট বে স্পা সার্ভিস, গ্লামার ওয়ার্ল্ড স্পার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক ও জেসমিন আক্তার, সুইডিশ থাই স্পার মালিক ইয়াছিন নুর, স্পা এশেন শিয়ার মালিক মোহাম্মদ নুরুল করিম, নিউ ডায়মন্ড থাই স্পার মালিক মোহাম্মদ সোহেল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় স্পা কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন গেস্ট হাউস ও অভিজাত হোটেলে মাসিক রুম ভাড়া নিয়ে অঘোষিত দেহ ব্যবসা করছে। এসব স্পা সেন্টারের গ্রাহক হচ্ছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, উঠতি বয়সী তরুণ, ধনীর দুলাল, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, এনজিও কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।

শরীর ম্যাসাজের নামে যৌন উত্তেজক কলাকৌশলে সুন্দরী নারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা। সেবন করানো হচ্ছে মাদক। জানা গেছে, ফুল বডি ম্যাসাজ ঘণ্টায় ২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ আছে। প্রতিটি স্পা কেন্দ্রে রাখাইনসহ ১০-১৫ জন সুন্দরী নারী থাকে। চাইলেই সেখান থেকে যেকোনো পছন্দমতো নারীকে দিয়ে ম্যাসাজ করাতে পারে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এসব স্পা কেন্দ্রগুলো খোলা থাকে বলে জানান তারা।

স্থানীয়রা জানান, শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় বেশির ভাগ হোটেল ব্যবসায়ীর আগ্রহ এ ব্যবসা। পর্যটনকেন্দ্রিক এ ব্যবসায় সুন্দরী নারীদের দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরী নারী আর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রীরাও এসব কাজে জড়িত বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও এগুলো পরিচালিত হচ্ছে নারীদের দিয়ে। কিন্তু পর্দার আড়ালে রয়েছে রাঘববোয়ালরা। তারা জানান, স্পা নামক এ ব্যবসা হলো অভিজাত, আধুনিক পতিতা ব্যবসা। বডি ম্যাসাজের নামে অবাধ যৌনতা। তারা ব্যবহার করে সুন্দরী নারীদের। এ অবৈধ ব্যবসাগুলো বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল। এখানে মোট ৬৩টি স্পা সেন্টার আছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!