ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:৩৭ এএম

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গ্যাস সংকটের মধ্যেই ভর্তুকি তুলে দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে গ্যাসের দাম বাড়বে দ্বিগুণেরও বেশি। এতে শিল্প পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুতের দামও বাড়তে পারে। বাড়তি কর-ভ্যাটের চাপে নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যেই গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

বর্তমানে ভয়াবহ গ্যাসসংকটের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। এর প্রভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে বহুগুণ। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেই চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সাল থেকে দ্রুত এবং ঘন ঘন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। ২০২২ এর জুনে ১৫.৫২ শতাংশ, ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে ৮৭.৫০ শতাংশ, ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে ২.৫০ শতাংশ এবং ২০২৪ এর মে মাসে ২.৪৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।

শিল্প উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যয় হয় জ্বালানির পেছনে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের অভাবে এই ব্যয় এখন আরও বেড়েছে। নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলে উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

শিল্প ও ক্যাপটিভ (কারখানায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎকেন্দ্র) শ্রেণিতে নতুন গ্যাস সংযোগ নিতে গ্রাহককে উচ্চমূল্যের আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দামে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হবে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত বিষয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে, যেটি বাস্তবায়ন হলে শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। তাই তারা সরকারকে এই উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার কথা বলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ১২ থেকে ৩০ টাকা করেছিল। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এরপরও গ্যাস পাচ্ছি না। বরং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এখন আবার নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে যদি গ্রাহককে এলএনজির দামে গ্যাস বিল দিতে হয়, তাহলে তা ৬০ টাকা বা তারও বেশি হবে। ফলে নতুন এবং পুরাতন গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।

উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকা যাবে না। ফলে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে নতুন শিল্পায়ন থেমে যাবে।

জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দাম বাড়াতে গত সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা পুরো গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিল্পকারখানায় দুই ধরনের গ্যাস-সংযোগ আছে। একটির মাধ্যমে কারখানায় বয়লার চালানো হয়। অন্যটি বড় কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ক্যাপটিভ সংযোগ। দুটি সংযোগের ক্ষেত্রেই ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম এখন একই।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে বিদ্যমান, প্রতিশ্রুত ও সম্ভাব্য গ্রাহকের গ্যাস ব্যবহার/লোড বৃদ্ধি অথবা নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে ট্যারিফ (গ্যাসের দাম) পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবটি গত ২৭ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহার করা গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বাইরে বাকিটুকুর জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন পর্যালোচনা করে (বিইআরসি) এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে সম্ভাব্য নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকরা এলএনজি আমদানির মোট ব্যয়মূল্যে পরিশোধ করবেন। তবে গ্যাস সংযোগের জন্য আগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাদের প্রাথমিক সম্মতিপত্র বা চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে, সেসব গ্রাহক তার ব্যবহারের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যমান শিল্প/ক্যাপটিভ পাওয়ার শ্রেণির দামে বিল পরিশোধ করবেন। এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলএনজি আমদানির মোট ব্যয়মূল্যে দাম পরিশোধ করতে হবে তাকে।

এ ছাড়া শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণির বিদ্যমান গ্রাহককে অনুমোদিত লোড অপেক্ষা অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তাকে এলএনজি আমদানির মূল্যে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হবে।

জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, এলএনজি আমদানি মূল্য বলতে দাখিল করা বিলের পূর্ববর্তী তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ও স্পট এলএনজি ক্রয় বাবদ ব্যয় (এলএনজি ক্রয়মূল্য, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ, ভ্যাট, ট্যাক্স বিভিন্ন মার্জিনসহ সার্বিক মূল্য) গড়মূল্য বোঝাবে।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন অযাচিত ব্যয়, লোকসান আর অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জ্বালানি খাতের সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে যায়। এই ব্যয় সামাল দিতে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা আর ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৩০ টাকা। এক বছরের মাথায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪.৭৫ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০.৭৫ টাকা করে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর চুরির নামে যে বিপুল সিস্টেম লস দেখানো হয়, তা বন্ধের পাশাপাশি গ্যাস অনুসন্ধান এবং পুরোনো কূপ সংস্কারে জোর দিলে নতুন উদ্যোগের দরকার হবে না। একই সঙ্গে সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে।

অপর দিকে ১৪ বছরে ১৩ দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অন্তত ১২১ শতাংশ। আর পাঁচ দফায় গড়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭৫ শতাংশ। পরিবহন খাতের সিএনজির দাম বেড়েছে ছয় দফা। সর্বশেষ গত বছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিন দফায় ১৫ শতাংশ এবং ৬ শ্রেণির গ্রাহকের জন্য বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৭৯ শতাংশ, শিল্পে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।

সরকারের উদ্যোগের কারণে ১৪ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ৫ গুণ। শতভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় এলেও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ এবং এর উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বর্তমান গ্রাহকের তুলনায় নতুন গ্রাহককে কিংবা লোড বাড়ালেও গ্যাস বিল অনেক বেশি দিতে হবে। গ্যাস বিলের এই বৈষম্যের কারণে নতুনদের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এতে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। ফলে নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে। সব মিলে দেশে শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে।

জ্বালানি বিভাগ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হয় গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় কূপ থেকে ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে ৮০০ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। 

পেট্রোবাংলা দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন দামে যে গ্যাস কেনে, তাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের গড় দাম দাঁড়ায় ৬ টাকা ৭ পয়সা। অন্যদিকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭১ টাকা পর্যন্ত। দেশীয় এবং আমদানি করা এলএনজি মিলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্য ছিল ২৪.৩৮ টাকা, যা পাইকারি দামে বিক্রি করা হয় ২২.৮৭ টাকায়। এতে ইউনিটপ্রতি ১.৫৬ টাকা লোকসান হয়েছে পেট্রোবাংলার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে তিতাস সিস্টেম লসের নামে যে গ্যাস ডাকাতি করছে, সেটা বন্ধ করা গেলে ১২৫ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় বন্ধ করা সম্ভব। এর সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে পুরোনো গ্যাসকূপ সংস্কারের মাধ্যমেও কিছু গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এগুলো করতে পারলে ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই সোজা কাজ না করে সরকার কঠিন কাজ করতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতে, গ্যাস ডাকাতি বন্ধ আর কিছু পুরোনো কূপ সংস্কারের মাধ্যমে যে গ্যাস পাওয়া যাবে, তাতে অনেক শিল্পে সংযোগ দেওয়া যাবে। এলএনজি আমদানির চাপও কমবে। আর গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে সাগরে ও স্থলভাগে ব্যাপকহারে অনুসন্ধানের তাগিদ দেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।

সর্বশেষ ২০২২ সালে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল বিইআরসি। তখন সরকার চাইলেই খেয়াল-খুশিমতো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে পারত না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ইচ্ছামতো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে মূল্য বৃদ্ধি করছিল কমিশনকে পাশ কাটিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেই নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণসংক্রান্ত আইন বাতিল করে দিয়েছে। ফলে নতুন করে গ্যাসের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার এখন কমিশনের।

জ্বালানি বিভাগ ওই প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর গত ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনকে (পেট্রোবাংলা)। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির বিদ্যমান গ্রাহক অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করছেন, সে-সংক্রান্ত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়ার পর গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব পাঠানো হবে কমিশনে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিইআরসি যদি ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে, তাহলে বর্তমান এলএনজির দর বিবেচনায় নতুন গ্রাহককে প্রতি ইউনিট গ্যাসের বিল দিতে হবে প্রায় ৬০ টাকা। আর প্রতিশ্রুত গ্রাহককে তার ব্যবহৃত অর্ধেক গ্যাসের জন্য ইউনিটপ্রতি প্রায় ৬০ টাকার মতো পড়তে পারে।

অর্ধেকের জন্য বিদ্যমান দর ৩০ টাকা হারে দিতে হবে। একই হারে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হবে, যেসব গ্রাহক তাদের অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত লোড বৃদ্ধি করতে চান তাদেরও। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দাম বাড়বে আর কমে গেলে কমবে।

বিএসএমএর সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার এই উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত সরকারের সময় দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অস্তিত্বসংকটের মুখে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়ানো হলে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে ইস্পাতসহ স্থানীয় সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

খান কনসালটেন্সির প্রধান নির্বাহী এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের সাবেক পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমদানিনির্ভর না হয়ে গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎস সন্ধান এবং উন্নত কারিগরি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে গ্যাসের জন্য নিরাপদ এবং অর্থ ও সময়সাশ্রয়ী পদ্ধতি নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিল এবং চলমান গ্যাস সংকট নিরসন করে কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে দেশের টেক্সটাইল এবং সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকদের সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি এক্সিকিউটিভ ফোরাম (আইইএফ)।

তারা বলছেন, নতুন শিল্পে জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে শিল্প ধ্বংস হবে। কর্মসংস্থান এবং রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বন্ধ হবে। কারণ নতুন শিল্প স্থাপন বা শিল্প সম্প্রসারণ না করলে উদ্যোক্তা তার ব্যবসায়িক সক্ষমতা হারান।

আরবি/জেডআর

Link copied!