# কারাগারে পাঠানোর আদেশ
# ১০ বছরে ৬০ গুণ সম্পদ বেড়েছে
# সব সম্পদ গড়েছেন বিদেশে
# বিমান সিন্ডিকেটের সঙ্গে আতাত
১০ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে এলাকার উন্নয়ন না হলেও হয়েছে নিজের পকেট ভারী। কাগজে সম্পদ বেড়েছে ৬০ গুণ। হবিগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের টাকা সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর পকেটে এমন গল্প ওপেন সিক্রেট। তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
অভিযোগ উঠেছে, গত ১০ বছরে তিনি এলাকায় উন্নয়ন না করে দেশ-বিদেশে একাধিক বাড়ি-গাড়ি করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার সম্পদ বেড়েছে ৬০ গুণ। এসব নিয়ে এলাকায় চলছে গুঞ্জন।
হোটেল কর্মচারী মো. সিয়াম সরদারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত সেই নির্দেশনা দেন। এর আগে, গত রোববার রাতে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মাহবুব আলী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে পান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। স্থানীয়রা বলছেন, সংসদ সদস্য বা প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। তবে দেশে-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। কোনো আয়ের খাত না থাকলেও স্ত্রী-সন্তানের নামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তি।
স্থানীয়রা বলেছেন, ওনার তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। উনি দেশ-বিদেশে বাড়িঘর করেছেন। কিন্তু এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। উনি যে সম্পদগুলো করেছেন, আমাদের এই এলাকায় করেন নাই। সব করেছেন দেশের বাইরে। অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদের পাহাড় করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে তিনি যে হলফনামা দিয়েছিলেন তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে মাহবুব আলীর সম্পদ বেড়েছে ৬০ গুণ।
হবিগঞ্জের আইনজীবী সিরাজ আলী মীর বলেন, এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব তদন্ত করে বের করা, কি পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ মাহবুব আলীর মাধ্যমে তছরুপ হয়েছে। যদি এটা হয়ে থাকে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সম্পদ যদি ওনার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সবশেষ নির্বাচনী হলফনামায় মাহবুব আলীর মোট বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৩৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর নির্ভরশীলদের নামে ব্যাংকে দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। মাহবুব আলী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন বাংলাদেশ বিমানের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে আতাত করে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত রোববার যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। গত সোমবার তাকে আদালতে তোলা হলে, কারাকারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের পাশাপাশি স্ত্রী ও পরিবারের নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি নির্মূলে কাজ করা সংস্থাটি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম আকতারুল ইসলাম বলেন, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহবুব আলী। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের জয় পেলে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটে হেরে যান মাহবুব আলী।
গত ১২ সেপ্টেম্বর নিহত সিয়াম সরদারের বাবা মো. সোহাগ সরদার বাদী হয়ে ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন অর রশীদ, মনির হোসেন, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই রাত ১১টার দিকে মিরপুর-১০ এ আবু তালেব স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে নির্বিচারে গুলি করে। এ সময় সিয়াম সরদার হোটেলের কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মারা যান।
আপনার মতামত লিখুন :