ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
আসছে নতুন নির্দেশনা

খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের শঙ্কা

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ১২:২৪ এএম

খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের শঙ্কা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আওয়ামী সরকারের আমলেই বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন সময়ে ঋণগ্রহীতাদের তালিকা প্রকাশ ও ব্যবস্থা গ্রহণে পরামর্শ দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সুপারিশ আমলে নেয়নি আওয়ামী সরকার। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর তিন মাসে খেলাপি ঋণ ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

আগামী বছর বেড়ে তা দ্বিগুণ হবে। বিতর্কিত ব্যাংক পরিচালকদের ভাগাভাগির ঋণের বেশির ভাগ অংশই এখন খেলাপি। ফলে নতুন করে অর্থনীতি আরও সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সমস্যার সমাধান ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের সব শর্ত পূরণে নুতন পলিসি নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসের খসড়া তৈরি করতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে এবং শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। কৃষি ও এসএমই ঋণসহ সব ধরনের ঋণ বিধিমালার আওতায় আসবে।

নতুন নীতি ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হুসনে আরা শিখা। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে সব ধরনের ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা কঠোর করা হবে। খসড়া নির্দেশিকা অনুসারে, ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পর তিন মাসের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক যে কোনো ধরনের ঋণকে বকেয়া হিসেবে গণ্য করবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে ঋণ পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর সেই ঋণ বকেয়া হিসেবে গণ্য হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই ধাপে শ্রেণিবদ্ধকরণের নিয়ম কঠোর করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, জুলাই বিপ্লবে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ, ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বেড়েছে। নতুন করে আরও বাড়ার শঙ্কায় নতুন পলিসি নির্ধারণ করেছে কেন্ত্রীয় ব্যাংক।

আগামী বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। নুতন শর্তারোপ না করলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের অর্থনীতি। দেশের ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সংগঠনের নেতা হিসেবে তিনি বলেন, ঋণের শ্রেণিকরণের ধারায় কঠোর হতে হবে বলে জানান তিনি।  

সরকার পরিবর্তনের পরে তিন মাসে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এই সময়ে খেলাপি ঋণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। রেকর্ড ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই পাচার হয়েছে বিদেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রথম দফায় মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে। মেয়াদি ঋণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে নেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণের ঋণ। এটি পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে। এর নির্দিষ্ট বা ভাসমান সুদের হার আছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিতর্কিত চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোয় ঋণের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এই সময়ে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

আরবি/জেডআর

Link copied!