বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। রাজধানী ঢাকার গা ঘেঁষা জেলা গাজীপুরে বেড়াতে এলে দিনেই বাড়ি ফেরা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাজীপুরে ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বেড়াতে আসার রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। ইচ্ছে করলে পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে গাজীপুরে পিকনিকও করতে পারবে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় কাক্সিক্ষত সাফল্য মিলছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ডে-ট্যুরের জন্য গাজীপুরই রয়েছে রাজধানীর সবচেয়ে কাছে। জেলার দর্শনীয় স্থান এবং রিসোর্টগুলোতে পর্যটক এবং পিকনিক পার্টির সবচেয়ে বেশি আগমন ঘটে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে।
শিল্পনগরী গাজীপুরে রয়েছে কয়েক হাজার শিল্পকারখানা। এ ছাড়াও রয়েছে টাকা ছাপানোর টাকশাল, বাংলাদেশ মেশিসট্যুলস ফ্যাক্টরি, সমরাস্ত্র কারখানা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, আনসার একাডেমি, বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্ক। ব্যাক্তিগত উদ্যাগেও জেলার বিভিন্নস্থানে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকশ পিকনিক স্পট-রিসোর্ট। জেলা দিয়ে বহমান বহ্মপুত্র, চিলাই, বালু ও পারুলী নদী দিয়ে নৌ-ভ্রমণও করতে পারবে দর্শনার্থীরা।
ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শাল-গজারির যে বন রয়েছে সেটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও শিল্পকারখানার জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে তোলা হচ্ছে উঁচু উঁচু স্থাপনা। এতে অপার সম্ভাবনাময় গাজীপুর জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনেকটা মৃত্যু ঘটছে। একটু পরিকল্পনা করে গড়ে তুললে গাজীপুর হতে পারে একটি মডেল সিটি। বর্তমানে গাজীপুরে রয়েছে শতাধিক পিকনিক স্পট, শুটিং স্পট, রিসোর্ট ও পার্ক।
শীতকালে প্রচুর পিকনিকের আয়োজন হয়ে থাকে গাজীপুরের বিভিন্ন পিকনিক স্পট ও রিসোর্টগুলোতে। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে নিতান্তই ফাঁকা। এই ফাঁকা সময়টাও কাজে লাগানো সম্ভব যদি কিছু পরিকল্পনা করা যায়। মানুষ সবুজে সতেজতা চায় আর এজন্যই বর্ষাকালীন এ সময়টাতে গাজীপুরে ঘুরতে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সড়কে জমে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে গাজীপুরে ভ্রমণপিপাসুদের উৎসাহিত করেও তেমন লাভবান হওয়া সম্ভব নয়।
ভাওয়াল রাজার অসাধারণ বাড়ি, জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলির স্মৃতিবিজড়িত গাজীপুরকে যদি পরিকল্পিত নগরায়ণের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয় তবে ঢাকার ওপর চাপ কমে যেতে পারে অনেকটুকু। ঢাকার ওপর চাপ কমানো এবং গাজীপুরকে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারলে তা হতে পারে বিশ্ব পর্যটনের ক্ষেত্রে চমৎকার একটি উদাহরণ।
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর পূর্বপাশে পূবাইলের অবস্থান। বেসরকারি বিনিয়োগে গাজীপুরে প্রথম রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে ওঠে পূবাইলের ভাদুন গ্রামে। তবে সেই ভাদুন গ্রামে পূবাইল-জয়দেবপুর সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে রিসোর্টগুলোতে যাতায়াত করতে অনেক বেশি বেগ পেতে হয় দর্শনার্থীদের। বর্তমানে শুধু পূবাইলেই আছে ছোট-বড় অর্ধশত রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম অরণ্যবাস রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট, পূবাইল রিসোর্ট ক্লাব, পিএসসিসি রিসোর্ট, গ্রিন ভিউ রিসোর্ট, জল-জঙ্গলের কাব্য, হাসনাহেনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট, কৃষ্ণচূড়া। এসব রিসোর্টে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক কটেজ, সুইমিং পুল, রেস্টুরেন্ট, জিমনেশিয়াম, শিশুদের খেলাধুলার নানা রাইড।
পূবাইল রিসোর্ট ক্লাবের ম্যানেজার অপারেশন ফয়েজ বিন হাকিম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের এই পর্যটন স্পষ্টের সড়কটি চলাচলের অযোগ্য। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আমরা অনেক সমস্যায় আছি। এ অবস্থায় আমাদের অনেক বেশি লোকশান গুনতে হচ্ছে। কারণ চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে পর্যটক আসতে চায় না। আমাদের জায়গা থেকে পর্যটকদের আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে থাকি। তবে আমি মনে করি, সরকার যদি আমাদের এই খাতের ওপর বিশেষ নজর দেয় তাহলে পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। সেই সাথে পর্যটন খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
এছাড়া গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, সারাহ রিসোর্ট, গ্রিন ভিউ গলফ রিসোর্টসহ অসংখ্য বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, গাজীপুরের পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটন খাতের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আমরা সবসময় পর্যটন খাতে বিশেষ নজর দিয়েছি, ঠিক একইভাবে আমরা এখনো কাজ করে যাব।
আপনার মতামত লিখুন :