রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৮:১৬ এএম

ফার্মগেটে বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৮:১৬ এএম

ফার্মগেটে বন্ধ হয়নি চাঁদাবাজি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ফার্মভিউ মার্কেটের সামনের রাস্তায় দোকান বসিয়েছেন আবুল হোসেন নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। দুই শিফটে ২৫ হাজার টাকায় পজিশন ক্রয়ে সেখানে দোকান বসিয়েছেন তিনি। মোজা বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা চাঁদাও দেন আবুল হোসেন।

রাস্তায় নগরবাসীর হাঁটাচলার জায়গায় কেন দোকান দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী পজিশন কিনেছি এবং প্রতিদিন চাঁদা দিচ্ছি। চাঁদার টাকা নিচ্ছে কে- জবাবে তিনি বলেন,  এটা তো বলা যাবে না। নাম বললে আমি আর এখানে বসতে পারব না। 

সেখানকার আরেক ব্যবসায়ী স্বপন জানান, মূলধন কম বলে ফুটপাতে ব্যবসা করি। মার্কেটে পজিশন নিতে পারব না বলেই ফুটপাতের পজিশন ক্রয় করে দোকান বসিয়েছি। প্রতিদিন দুই শিফটে ৬০০ টাকা করে চাঁদা দেই।

বিগত আ.লীগ আমলে ফার্মগেট এলাকার ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে গড়ে উঠেছে প্রায় আড়াই হাজার দোকানপাট। সরকার পরিবর্তনের পর ফুটপাত দখল করে দোকানের সংখ্যা আরও বেড়েছে। 

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেটে ২৪ ঘণ্টায় এ এলাকার ফুটপাত বিক্রি হয় তিনবার। স্বৈরাচারী আ.লীগের অনেক নেতা দেশছাড়া হলেও চাঁদাবাজি চলছে রাজনৈতিক ভোলপাল্টে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুটপাতের পজিশন বিক্রি এবং চাঁদাবাজিতে জড়িত বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। 

ফুটপাত দখল করে ব্যবসার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট, তাদের কাছে জিম্মি সবাই। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, লোকাল মাস্তান এবং পুলিশের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ এলাকায় মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি চলছে নিয়মিত। তবে ভয়ে সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত তা বলতে নারাজ ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। 

ফার্মগেট ও আশপাশের এলাকায় প্রায় এক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফুটপাতে দোকানদারি করে। এখানে দোকানের পজিশন নিতে গেলে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এখানে এক পজিশন তিন শিফট অনুযায়ী বিক্রি হয়। ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফট ভাগ করা থাকে। 

অনেক ব্যবসায়ী এক শিফট, দুই শিফট ও কেউ কেউ তিন শিফট ক্রয় করে নেন। এক শিফট নিলে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। দুই শিফট নিলে ২৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। একটি নির্দিষ্ট পজিশন তিন শিফট ক্রয় করতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া লাগে। 

এ ছাড়া প্রতিদিন ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। ফার্মগেট এলাকা থেকে প্রতিদিন ১২-১৫ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। মাসে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় তিন থেকে চার কোটি টাকা। বছরে তা ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। 

লাইনম্যানের মাধ্যমে তোলা প্রতিদিনের চাঁদার একটি অংশ পুলিশকে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সন্দ্বীপ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ৫ আগস্টের আগে ফার্মগেটের প্রতিটা দোকান থেকে পুলিশসহ বিভিন্নজন চাঁদা নিত। ৫ আগস্টের পর গত নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ডিসেম্বর থেকে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট পাল্টে যাওয়ার পর থেকে আর পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। 

গত দুই দিনে ফার্মগেট ও আশপাশের এলাকার ফুটপাতের একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আগে যুবলীগ-ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-শ্রমিক লীগ নেতা, কাউন্সিলর, পুলিশ সবাই চাঁদা নিত। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরানের সিন্ডিকেট ফার্মগেটে দখল ও চাঁদাবাজির পাশাপাশি সশস্ত্র মহড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। বর্তমানে ফার্মগেটের রাজা ইরান আত্মগোপনে রয়েছে। 

৫ আগস্টের পর বেশকিছু দিন চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। তবে, নভেম্বর থেকে ধীরে ধীরে ফার্মগেটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। জানুয়ারি থেকে আ.লীগ আমলের রেটে চাঁদা তোলা হচ্ছে। তবে আগে যাদের নামে চাঁদা তোলা হতো সেই নাম পরিবর্তন হয়ে নতুন নামে এখন চাঁদা উঠছে না। 

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ফার্মগেট এলাকায় বিভিন্ন খাতে চাঁদা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। চাঁদা দিতে না চাইলে হামলা ও মারধর করা হচ্ছে। আগের চাঁদা গ্রহীতা না থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি করছেন অনেকে। 

বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজিতেও নতুন লোক আসতে দেখা গেছে। ক্ষমতার পালাবদলের মাঝের কয়েকদিনে পুলিশ ও সরকারবিহীন দিনগুলোতে এসব ঘটনা ঘটেছে বেশি। এখনো অনেক জায়গায় চলছে নিজেদের আধিপত্য জানান দেওয়ার চেষ্টা। 

সরেজমিনে আনন্দ সিনেমা হল, ইন্দিরা রোড এবং তেজগাঁও কলেজের সামনের রাস্তায় দেখা গেছে, প্রতিদিন যেসব লাইনম্যান চাঁদা তোলে কৌশল হিসেবে তারা ভাসমান নারী ও টোকাই বাচ্চাদের কাজে লাগিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে টাকা নেয়। 

প্রতিদিন লাইনম্যানদের টাকা তুলতে সাহায্য করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে খাবারের জন্য। ভাসমান নারী ও টোকাই বাচ্চারা কেন টাকা তুলছে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

এ সময় দোকানদার কে জানতে চাইলে তারাও কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে একজন পিঠা ব্যসয়ায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দূর থেকে লাইনম্যানরা ভাসমান নারী ও টোকাই বাচ্চাদের হাতে প্রতিদিনের চাঁদার টাকা দিয়ে দেওয়ার ইশারা করে। ইশারা পেয়ে আমরা দোকানরা টাকা দিয়ে দেই। এরপর সেই লাইনম্যানের হাতে চলে যায়। 

ফার্মগেট এলাকার এক হাজারের বেশি দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করে হাসিব, মোটা বাবু, শাহ আলম, শফিক, দুলাল, রাজিয়া, আবদুল আজিজ, রাজু, স্বম্পা ও দেলোয়ার নামের লাইনম্যানরা। প্রতিরাতে লাইনম্যানরা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। 

ডিএমপির তেজগাঁও থানার ওসি মো. মোবারক হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ফার্মগেট এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ পুরোনো। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের ধরতে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পেলে দ্রুতই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ডের দুটি সড়ক দখল করে জুতা-কাপড় ও খাবারসহ নানা পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ফুটপাত ধরে হাঁটার কোনো উপায় নেই। ফুটপাত দখলের কারণে সিংহভাগ মানুষই রাস্তা ধরে হাঁটেন। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট। কলেজের সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে খামারবাড়ি পর্যন্ত ফুটপাত ধরে হাঁটার কোনো উপায় নেই। সবাই সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন। 

আরেক পথচারী বলেন, শুধু বিশেষ ছুটির সময় ফার্মগেটের ফুটপাত ধরে চলাচল করা যায়। এ ছাড়া আমি কখনো ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারিনি। ফুটপাত দখল করে অতিরিক্ত দোকানপাট থাকায় নারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। 

ফুটপাত দখল করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে রমরমা বাণিজ্য। সেই ফুটপাত থেকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে বড় অঙ্কের চাঁদা। সময়ের সঙ্গে হাত বদল হলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না চাঁদাবাজি। আগে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা চাঁজাবাজি করলেও এখন এর ধরন অনেক পাল্টে গেছে। 

বর্তমানে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা। আর এতে সহযোগিতা করছে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য। রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। 

চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে দলে কোনো স্থান নেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত বিএনপিতে কোনো অপরাধীদের স্থান নেই। যারাই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলদারী করবে তাদের বহিষ্কারের পাশাপাশি থানায় মামলা দেওয়া হবে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!