# দম বন্ধ করা পরিবেশ
# ওয়েটিং রুমে স্থান সংকুলান হয় না
# এক ফ্লোরেই ডাক্তারদের চেম্বার
দেশের স্বাস্থ্য খাতের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও চলছে চরম অরাজকতা। অনিয়মই এসব হাসপাতালের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অব্যবস্থা, বিশৃঙ্খলা ও খেয়ালখুশি প্রাধান্য পাচ্ছে হাসপাতালগুলোর প্রাত্যহিকতায়। প্রতি পদে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থা। যেন দেখার কেউ নেই। দিনের পর দিন এই চিত্রের দেখা মিললেও প্রতিকারের উদ্যোগ নেই।সরকার যায় সরকার আসে, হাসপাতালের কোনো উন্নতি হয় না।
খোদ রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থাই করুণ। সেখানে বাইরের হাসপাতালের অবস্থা সহজেই আন্দাজ করা যায়। একটু ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্য সেবার আশায় মানুষ ছুটে যায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু সেখানে যে সেবার এমন বেহাল দশা, তা তারা কল্পনাও করতে পারে না।
ঢাকার বনশ্রী এলাকার ফরাজী হসপিটাল লিমিটেড বেসরকারি খাতের একটি মোটামুটি নামি হাসপাতাল। নামে অনেক ভারী মনে হলেও কাজে প্রায়ই হালকা। বাইরে থেকে চাকাক্যি, ভেতরে যারপর নাই কদর্য! ঠিক যেমন চকচক করলেই সোনা হয় না! কয়েক ভাই মিলে এই হাসপাতাল গড়েন। অনেকেই বলেন, এটি ভাই ভাই হাসপাতাল।
ওপরে ওঠার সিঁড়ি ভেঙে গেছে। সিঁড়ি এমনই খাঁড়া যে একতলা ওপরে উঠতেই হাঁপিয়ে উঠতে হয়। দোতলায় উঠলেই মনে হবে এ কোথায় এলাম! এ কী হাসপাতাল! নির্ঘাত মনে হয়, এ যেন হাটবাজার। অপ্রশস্ত পরিসর। এক ফ্লোরেই গাদাগাদি করে ডাক্তারদের চেম্বার। চারদিকে দম বন্ধ করা পরিবেশ। এমন এক চিলতে জায়গা নেই, যেখানে রোগীরা বসে না আছেন। অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ ঘোরাফেরা করেন। মূলত ডাক্তারদের সিরিয়ালের অপেক্ষায় রোগীদের ওয়েটিং রুম এটি। শত শত মানুষ। সঙ্গে আবার বাচ্চাকাচ্চা। এসি নেই। কয়েকটি পুরোনো স্ট্যান্ড ফ্যান ঘুরছে। তাতে হাওয়া-বাতাস পাচ্ছেন যারা বসে আছেন। বাকিরা গরমে ঘর্মাক্ত হচ্ছেন। অনেক রোগী বসতে না পেরে ডাক্তারদের চেম্বারের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ডাক পড়লেই চট করে ঢুকে পড়েন ভেতরে।
এমন অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আবার ঘন ঘন বেজে ওঠে ডাক্তারদের কলিং বেল। এ অবস্থায় চলছে হাসপাতালে ডাক্তারদের প্র্যাকটিস। রোগীরা বাধ্য হয়েই ভালো ডাক্তারকে দেখাবেন বলে এখানে ভিড় করছেন। ডাক্তারদের নামধাম না থাকলে আসতেন কি না, সন্দেহ।
ফরাজী হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন বেশ কয়েকজন নামী ডাক্তার। এদের মধ্যে অধ্যাপক আছেন, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক আছেন, আছেন সাধারণ এমবিবিএস। ডাক্তারদের খ্যাতিকে পুঁজি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিজিট ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ফি হলো: অধ্যাপক ৫০০, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০, সহকারী অধ্যাপক ৩০০ এবং সাধারণ চিকিৎসক ২০০।
অথচ ফরাজী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছে ১০০০, ৮০০, ৬০০ এবং ৫০০। হাসপাতালে প্র্যাকটিসরত ডাক্তারদের সক্ষমতা আছে প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী দেখার। অথচ দেখা হচ্ছে ৫০-৬০ জন। ফলে ডাক্তাররা সময় দিচ্ছেন মাত্র ৫-৬ মিনিট করে। এতে করে রোগীরা প্রার্থিত সুফল পাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
হাসপাতালে একটি ল্যাব আছে। এই ল্যাবের যন্ত্রপাতি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সুতরাং, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যে শুভংকরের ফাঁকি রয়ে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সব শেষে যে কথাটি না বললেই নয়, তা হলো হাসপাতাল কর্মচারীদের রূঢ় আচরণ। রোগীদের সঙ্গে তারা এমন আচরণ করেন, যেন তারাই প্রভু, রোগীরা ভৃত্য। ওদিকে ফরাজী হাসপাতালের সরকারি নিবন্ধন থাকলেও পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
হাসপাতালের বিলিং ম্যানেজার কৌশিক আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এম মোক্তার হোসেন রূপালী বাংলাদেশের কাছে অব্যবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রোগীদের চাপে আমরা অনেক কিছুই পারছি না।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন আছে বলে তারা জানান।
রোগীদের জটলা এবং অন্যান্য ছবি তুলতে গেলে হাসপাতালের উপ-মহাপরিচালক রুবেল হোসাইন বাধা দেন। তিনি কিছুতেই ছবি তুলতে দেবেন না। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
আপনার মতামত লিখুন :