ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রতিবাদে উত্তাল দেশ

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৪, ১২:৪২ এএম

প্রতিবাদে উত্তাল দেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ ও দিল্লির আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এর আগে গত সোমবার রাতেই হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এ সময় তারা ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দেওয়ার পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। 

বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর গতকাল থেকে সেখানে কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার। এ ছাড়া সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দপ্তর।

এদিকে আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা সুস্পষ্টভাবে ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। এমন ঘটনায় ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।

ভারত সরকার গায়ে পড়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তারা ভালো থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

জানা গেছে, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটি। এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার কার্যালয়ের নিচে গিয়ে শেষ হয়।

প্রতিবাদী এই মিছিলে ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন ভেঙে দাও, ভেঙে দাও’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘দিল্লির আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে হামলা কেন? নরেন্দ্র মোদি জবাব চাই’, ‘ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। একই সময়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এ ছাড়াও দিল্লির আগ্রাসনের প্রতিবাদে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার দিন রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

দিল্লির আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ: গতকাল দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশে রিজভী বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের জন্য ভারতের নরেন্দ্র মোদি সব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা গুম-খুন করেছে, এর জন্য তো কোনোদিন কথা বলেনি। শেখ হাসিনা বিতাড়িত হওয়ার পর এ দেশের মানুষ আনন্দে আছে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে। কিন্তু দিল্লি তার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমাদের ভালো কিছু দিল্লি কখনো ভালো চোখে দেখেনি। আগরতলায় আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনে আক্রমণ, পতাকা ছিঁড়েছে তারা। নিজ বাড়িতে মেহমানকে আক্রমণ করাকে কাপুরুষ বলে।

তিনি তীব্র নিন্দা ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও পতাকা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের দেশ। আমরা জানি, কী করে দেশের পতাকা সমুন্নত রাখতে হয়।’

ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারত যদি বাংলাদেশের হাইকমিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনা হোক। কারণ ভারতে যা ঘটানো হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে।

গতকাল দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শেষে এসব কথা বলেন তিনি। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে দুপুরে বায়তুল মোকাররম থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার বায়তুল মোকাররমে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, ভারত গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে গিলে খেয়ে আসছিল। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে। তাই ভারতের অন্তর জ্বালা শুরু হয়েছে। তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তারা বাংলাদেশের হাইকমিশনের সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ফিরিয়ে আনা হোক। কারণ ভারতে যা ঘটানো হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। সমাবেশে অন্যান্যরা ভারতের পণ্য বর্জনের দাবি তোলেন।

বক্তারা ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের ৩০ কোটি হাত, কাজেই বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ: আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবং বিএনপি পৃথক বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভে হামলাকারীদের বিচার ও ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া গত সোমবার রাতে খুলনায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে আমরা এখানে একত্র হয়েছি। দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব। স্বৈরাচারের দালালরা আর কিছুই করতে পারবে না।

তারা আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তনশীল বাংলাদেশ গঠনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ছাত্র-জনতা আজ এক। দেশ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা একত্র। আমরা সবাই  হাতে হাত রেখে লড়াই করব। আমরা আর কারও দাসত্ব করতে চাই না। এ সময় ইসকনকে অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি জানান তারা।

এ ছাড়াও খুলনায় কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় থেকে গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে নানা অপপ্রচার চলছে। এর বিরুদ্ধে ভারতকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাবনায় বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের উগ্রবাদীরা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির জন্য আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কের বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াছিন। এ ছাড়াও, নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এ সময় বক্তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান।

এর আগে গত সোমবার রাতে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, ফেনী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত ৮টার দিকে নগরের ষোলশহর স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

রংপুরে যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। রাত ৮টার দিকে নগরের প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার প্রেস ক্লাবে ফিরে আসে। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এ ছাড়া রাত ৯টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। খুলনা শহরে রাত সাড়ে ৯টায় নগরের শামসুর রহমান রোড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে ট্রাফিক মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

গত সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে মিছিলে যোগ দেন। পরে মিছিলটি ভিসি চত্বর হয়ে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়। শিক্ষার্থীরা ‘গোলামী না আজাদি, আজাদি আজাদি’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’; ‘হাইকমিশনে/আগরতলায় হামলা কেন, দিল্লি তুই জবাব দে’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান।

একই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আগরতলার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে ভাস্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। ওই রাতে আগরতলার ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে মশাল মিছিল বের করেন তারা। মিছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শেষ করে।

আগরতলায় বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা বন্ধ: আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানে কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার কারণে আপাতত আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।

ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার: এদিকে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন ভবনে বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনার পর রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার। গত সোমবার রাত থেকে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের আশপাশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ।

ভারতীয় দূতাবাসের সামনে তিন লেয়ারে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন বাজার থেকে গুদারাঘাট যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে রেখেছে সেনাবাহিনী। কেউ কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে যেন না পারে, সেজন্য সজাগ রয়েছে যৌথবাহিনী। গতকাল দুপুরে ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। বাঁশতলা থেকে ভারতীয় দূতাবাসগামী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। তাদের পেছনে রয়েছে এপিবিএন এর সদস্যরা। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এ এলাকায় মোতায়েন রয়েছেন।

ডিএমপির গুলশান জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. তারেক মাহমুদ জানান, কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে পুলিশের চেন্সারি বিভাগ। আর দূতাবাসের নিরাপত্তায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা আছে। দূতাবাসে প্রবেশের তিনটি এন্ট্রি পয়েন্টে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এমন শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানান তিনি।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচি কেন্দ্র করেই মূলত এ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সীমান্তে সতর্ক বিজিবি: যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে সতর্ক রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অপতৎপরতা এড়াতে বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দপ্তর। গতকাল বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বার্তায় বলা হয়েছে, সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে বিজিবি প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এই সতর্কতা জারি করে সব ইউনিটকে বার্তা পাঠিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ওই হামলা হয়। সেখানে হামলা, ভাঙচুর, ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ভেঙে বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে পোড়ানোর নিন্দনীয় ঘটনায় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাকে জরুরিভিত্তিতে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া উগ্রপন্থিদের বিক্ষোভে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আগরতলাসহ ভারতে বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আগেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর প্রতিবাদের সঙ্গে ওই নোট পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আগরতলা মিশনে হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত সাতজনকে আটক এবং নির্লিপ্ততার জন্য পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ওই ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্ম। এটাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশের সুতারকান্দি স্থলসীমান্ত দিয়ে উগ্র প্রতিবাদকারীরা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার মধ্যেই আগরতলায় হামলার ঘটনা ঘটে।

আরবি/জেডআরে

Link copied!