ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৪, ১২:৪১ এএম

সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ এখন তলানিতে। তবুও বিদেশি ঋণের সুদ প্রদান ও পরিচালন ফি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে কমেছে রিজার্ভ। ফলে সাময়িক স্বস্তিতে ব্যাংকঋণ গ্রহণের বদলে সঞ্চয়পত্রের দিকে এবার আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রবাসী আয় বাড়াতে দীর্ঘ মেয়াদে সুকুক বন্ড ও গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগও প্রসারিত করেছে।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের আগে প্রতি তিন মাসে একবার নির্দিষ্ট পরিমাণের মুনাফা ফেরত দিলেও এখন প্রতি মাসে (মোবাইল ফোন ও ব্যাংক) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনাস্থার বাংলাদেশে পেনশনারদের আস্থা ফেরাতেই প্রথম কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

একই সঙ্গে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বন্ডে বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে সরকার। যার কারণে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম’-এর আওতাভুক্ত ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মতো ‘ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড’ এ বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এবং সময়সীমাও প্রত্যাহার নিয়েছে সরকার।

অন্যদিকে, সরকারের পরিচালন ফি মেটাতে মোট ৭ হাজার কোটি টাকার বন্ড আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ডিসেম্বরে আসছে ২ হাজার কোটি টাকার এবং আগামী অর্থবছরের জুনে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার গ্রিন ও সুকুক বন্ড। চলতি নভেম্বরে ও ডিসেম্বর মাসে এফআরটি আরও দুটি বন্ড ইস্যু করছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে অক্টোবর মাসের শুরুতে ফ্লাটিং রেট ট্রেজারি বন্ডের (এফআরটি) নিলাম সম্পন্ন হয়েছে।
এই বন্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে আনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বন্ড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চলতি নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এফআরটি আরও দুটি বন্ড ইস্যু করছে। তা ছাড়া আগামী জুনে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড আসছে। তিনি আরও বলেন, তিন বছর মেয়াদি একটি ফ্লাটিং রেট ট্রেজারি বন্ডের (এফআরটি) নিলাম গত মাসে (অক্টোবরে) শেষ হয়েছে। নতুন বন্ডের প্রস্তুতি চলছে।

যদিও বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের সুকুক বন্ড ও আইএফআইসি আমার বন্ড নিয়ে অভিজ্ঞতা নেতিবাচক। তবুও বিনিয়োগ আকর্ষণে এখনো সেরা বিভিন্ন ধরনের বন্ড। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সমন্বয়ে নতুন করে বিভিন্ন বন্ডের ডিজাইন শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রতি মাসেই পাবেন। এ ছাড়া পরিবারিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে পুন:বিনিয়োগের সুবিধা ও সময়সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ রোববার এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং, এয়ার ওয়েজ কোম্পানির বিদেশে চাকরিরত অনিবাসী বাংলাদেশিরা। মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জন্য ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা না থাকলে অনিবাসী বাংলাদেশিরা যেকোনো অঙ্কের অর্থ এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

স্বয়ংক্রিয় পুন:বিনিয়োগ সুবিধা চালুর বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবের ক্ষেত্রে মুনাফাসহ মূল বিনিয়োগ করা অর্থ পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা পাবে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে একবার প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের অর্থ দ্বারা এক মেয়াদে বিনিয়োগ ও পরপর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের জন্য পুন:বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা যাবে। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে একবার প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের অর্থ দ্বারা এক মেয়াদে বিনিয়োগ ও পরপর সর্বোচ্চ চার মেয়াদের জন্য পুন:বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা যাবে।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ ও পুন:বিনিয়োগর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় বিনিয়োগ করতে হলে নতুন করে রেমিট্যান্স এনে সম্পূর্ণ নতুনভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন। জাতীয় সঞ্চয় স্কিম স্বয়ংক্রিয় পুনঃবিনিয়োগের ক্ষেত্রে, পুনঃবিনিয়োগের তারিখ হতে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য হবে।
জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র এবং বন্ড এখনো বিনিয়োগে আকর্ষণীয়। তবে বন্ডে বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার এখন সর্বোচ্চ ১৫.৮০ শতাংশ পর্যন্ত, যা ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তুলনামূলক নিরাপদ বিনিয়োগ হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই ও ২৯ মে সময়ে সরকার বিল ও বন্ড ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ৭৮ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ১৭ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার চেয়ে ৩৩৭ শতাংশ বেশি।

আরবি/জেডআর

Link copied!