হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ এর চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। তিনি হামদর্দ বাংলাদেশকে আত্মপ্রকাশ করেছেন একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। রোগের আধুনিক ও মানসম্মত সেবা প্রদানের লক্ষ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি প্রকৃতি। প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়েই হাজার বছর আগে অগ্রযাত্রা শুরু করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা খাত। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ইউনানী চিকিৎসকদের অধ্যয়ন ও জ্ঞান আহরণ করা প্রয়োজন। হাকীমদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা বাড়ানোসহ সাধারণ মানুষ ইউনানী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ধারণাসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ।
রূপালী বাংলাদেশ: কেমন আছেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: জ্বি ভালো
রূপালী বাংলাদেশ: ছোটবেলায় কী স্বপ্ন দেখতেন, কী হতে চেয়েছিলেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমি জন্মেছিলাম লক্ষীপুরের ছায়াঢাকা দক্ষিণ মাগুরী নামের এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা গ্রামে। অপার সবুজ প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা আমার শৈশব ও কৈশর ছিলো অন্যরকম। বিশেষ করে আমার পিতা মরহুম ছায়েদ উল্লাহ ভূঁইয়া’র জীবনযাপন, আদর্শ আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলো। পরম শ্রদ্ধেয় মা মরহুমা রওশন জাহান বেগম আমাদের সব ভাই বোনের প্রতি ছিলেন যত্নবান ও আন্তরিক। বাবা এবং মায়ের প্রভাব পড়েছিলো আমার উপর। তাই শৈশবে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো যে, আমি মানুষের মতো মানুষ হবো, মানুষের কল্যাণ ।করবো। মানুষের উপকার করার মধ্য দিয়ে আমি সৃষ্টিকর্তার একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চেয়েছি সবসময়।
রূপালী বাংলাদেশ: পুলিশ সার্ভিসের দাপুটে ও লোভনীয় চাকরি ছেড়ে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ভুবনে কীভাবে ও কেন প্রবেশ করলেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমার পুলিশ অফিসার হবার কোনো স্বপ্ন ছিলোনা। ১৯৭১ সাল, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। সুযোগ এলো পুলিশে চাকরি করার। তখন মনে হলো, পুলিশে থাকলো তো মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করা যাবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে কাজ করা যাবে। সেই চিন্তা থেকেই আমি থেকে গেলাম। আমি ছিলাম তেজগাঁও থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার, ঢাকার এই অঞ্চলটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করা, সহযোগিতা করা, তথ্য দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর কাজ ও উপকার আমার মাধ্যমে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমার জীবন বিপন্ন করে তুলেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে নালিশ করা হয়। ঊর্ধতন কর্মকর্তারা আমাকে ডেকে পাঠালেন, উর্দু ভাষা ভালোভাবে জানা থাকার কারণে আমি তাৎক্ষণিক প্রজ্ঞা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছিলাম।
মুক্তিযোদ্ধারা আমার প্রতি এতো সন্তুষ্ট ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের পর অন্য পুলিশ অফিসাররা যখন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তখন আমার নামে মুক্তিযোদ্ধারা শ্লোগান দিয়েছেন, জয় বাংলা, জয় হারুন দারোগা! মুক্তিযুদ্ধের পরে আমার মনে হয়েছে, এই পেশায় থাকা আমার জন্য ঠিক হবেনা। আমাকে আরো বড় মানবসেবার কাজ করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই হামদর্দে সম্পৃক্ত হওয়া। শুরু থেকেই আমার মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে, হামদর্দকে আমি সফলভাবে এগিয়ে নিতে পারবো।
রূপালী বাংলাদেশ: হামদর্দ বাংলাদেশকে আপনি নিজের মেধা, অধ্যবসায়, নিষ্ঠা, সাধনা ও অঙ্গীকার-প্রত্যয়ে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আপনার এই দীর্ঘ অভিযাত্রায় কী কী প্রতিবন্ধকতামোকাবেলা করতে হয়েছে?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: অনেক প্রতিবন্ধকতা। অনেক চড়াই উতরাই। এ এক সুবিশাল ইতিহাস। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো, হামদর্দবিরোধী ষড়যন্ত্র। প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অসংখ্যবার হামদর্দকে দখল করার চেষ্টা করা হয়েছে। পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি এবং ছয় গুণ দায়দেনা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিলো যে, হামদর্দ যেনো আদমজী, বাওয়ানী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতো ধ্বংস হয়ে যায়, যাতে অবশিষ্ট যা কিছু থাকবে তাই তারা লুটেপুটে খেতে পারে, দখল করতে পারে।স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে দিলে, সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান উদার মনে সহযোগিতা করলে হামদর্দ আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহর রহমত এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের দৃঢ় ঐক্যের কারণে সেইসব ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্যায়-অনিয়ম পর্যুদস্ত হয়েছে।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনি সব সময় ‘ খাঁটি মানুষ’ খুঁজে বেড়ান। তাদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য কী রকম? মুষ্টিমেয় যে ক’জনকে খুঁজে পেয়েছেন, তারা আপনার চাহিদা ও প্রত্যাশার তুলনায় কতটা সন্তোষজনক?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমরা আসলে দক্ষ, যোগ্য এবং সৎ মানুষের সন্ধান সারাজীবন ধরেই করেছি এবং এখনো করি। দেশপ্রেম, মূল্যবোধ এবং যোগ্যতা যাদের আছে তারাই আমাদের কাছে প্রকৃত মানুষ। আমরা খুঁজে খুঁজে এরকম অনেককেই হামদর্দে যুক্ত করেছি, যারা হামদর্দকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাকে প্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং করছেন।
রূপালী বাংলাদেশ: এই ‘মানুষ’ খোঁজার প্রক্রিয়ায় অর্জিত তিক্ত ও মধুর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: বিশাল অভিজ্ঞতা। অনেক ভালো, যোগ্য ও দক্ষ মানুষ যেমন আমরা পেয়েছি, তেমনি অকৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসঘাতক কিছু লোকও আমি পেয়েছিলাম, যারা হামদর্দকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। এরপর ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে তারা ছিটকে পড়েছে প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব লোক হামদর্দের কারণে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, কিন্তুষড়যন্ত্র করায় এখন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
রূপালী বাংলাদেশ: হামদর্দ -এর ভেষজ ঔষধপত্র কি বিদেশে রপ্তানি হয়? বিশ্বমানের নিরিখে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ হামদর্দের অবস্থান ঠিক কোনখানে বলে আপনার ধারণা?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: না রপ্তানি হয়না। প্রবাসীদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশ থেকে হামদর্দের ওষুধ বিদেশে নিয়ে যায়। তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটায় এবং সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করে। এর আগে ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে হামদর্দের ওষুধ পাঠানো হয়েছে।তবে হামদর্দ এর ওষুধ বিদেশে রফতানি করার প্রশাসনিক যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো শিগগিরই দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। এজন্য শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে চেষ্টাও করা হচ্ছে।এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের জন্য এ সংক্রান্ত যে আইন আছে, সেটি ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেই ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর হয়ে যাবে।
উপমহাদেশে হামদর্দ একটি প্রতিষ্ঠিত নাম, যার বিকল্প আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তাছাড়া সারাবিশ্বেই হামদর্দ একনামে পরিচিত, অনেকে দেশে হামদর্দের আদলে ইউনানী আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্প গড়ে উঠেছে।
রূপালী বাংলাদেশ: বাংলাদেশে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: দিন যত যাচ্ছে ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। আমাদের এ খাতের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ¦ল।এই চিকিৎসাব্যবস্থা এখন সবার কাছে পরম আকাক্সিক্ষত । ঘরে ঘরে এ ধরনের চিকিৎসার জন্য মুখিয়ে থাকেন মানুষ। শিল্প হিসেবেও এটি জাতীয় অর্থনীতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে এখন হারবাল চিকিৎসাব্যবস্থার কাছে ফিরছে কোটি কোটি মানুষ। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তি সময়ে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে। এই খাত স্বীকৃতি লাভ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ওষুধ হিসেবে এখন ভেষজ চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকছে বিশ্বের অগণিত মানুষ। সেই বিপুল আলোড়নের ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। এখন শুধু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পালা।
রূপালী বাংলাদেশ: অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও নাকি ওয়াক্ফ আইন, বিধিমালা, রেওয়াজ-ঐতিহ্য সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নন (অবশ্যই ব্যতিক্রম বাদে)। এটা কেন ঘটে, আর কী ই বা হতে পারে এই সমস্যার সমাধান?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ওয়াক্ফ সম্পর্কে অনেকেরই সুষ্পষ্ট ধারণা নেই, ফলে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বিবাদ তৈরি হয়। এটা জানা থাকা দরকার যে, পাবলিক প্রপার্টি এবং ওয়াক্ফ এস্টেটের জন্য দুটি ভিন্ন আইন রয়েছে। ওয়াক্ফ সম্পত্তি হচ্ছে আল্লাহ’র সম্পত্তি। এ কারণে সরকার কর্তৃক প্রণীত আলাদা আইনে ওয়াক্ফ এস্টেটগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আইনে আছে বেনিফিশিয়ারি বা সুবিধাভোগীরা ছাড়া কেউ মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন তুললে সেটি গ্রহণযোগ্য হবেনা। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে অনেক জায়গায় বহিরাগতরা ব্যক্তিস্বার্থে ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এমনকি মামলা মোকাদ্দমাও করছে। বেআইনী হবার পরও সেইসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত পর্যন্ত করা হচ্ছে। ফলে ওয়াক্ফ এস্টেট পরিচালনায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন মোতাওয়াল্লীরা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায়।অবিলম্বে বহিরাগতদের এসব কর্মকান্ড ও অনিয়ম বন্ধ করতে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
রূপালী বাংলাদেশ: ইউনানী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষালাভের ব্যাপারে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের আগ্রহ উৎসাহ উদ্দীপনার হালফিল চিত্রটা কেমন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: এই খাত নিয়ে বিপুল আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। শুধু প্রয়োজন খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করা।ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ওষুধের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা এখন সারাবিশ্বে । বাংলাদেশেও এই খাতে সূচনা হয়েছে নতুন দিগন্তের।
২০১২ সালে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস অব মেডিসিন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর ব্যাচেলর অব ইউনানী মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) এবং ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএএমএস) প্রোগ্রাম দুটিকে আইনসম্মতভাবে অনুমোদন প্রদান করে ।শুধু তাই নয়, প্রোগ্রাম দুটির সিলেবাস ও কোর্স কারিকুলামও ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত। পাশাপাশি উক্ত অনুষদে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে তারা ।ব্যতিক্রমী বিষয় হলো, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একমাত্র হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ই সরাসরি বিইউএমএস ও বিএএমএস প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশে ৩টি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে একটি সরকারি। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজটি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধিভূক্ত। অপর দুটি প্রতিষ্ঠান হামদর্দ পরিচালিত। লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত এবং বগুড়ায় অবস্থিত হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হিসেবে বিইউএমএস প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে।
রূপালী বাংলাদেশ: হামদর্দ ইতোমধ্যেই ভারত, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করার মত গৌরব অর্জন করেছে। এই প্রক্রিয়া ক্রমেই সম্প্রসারিত ও জোরদার হয়ে চলেছে। ইনডিজেনাস চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রণী দেশ হচ্ছে চীন। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাজের পরিধি কেমন ?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: যৌথভাবে ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল খাতের অগ্রগতির জন্য চীনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ ইতোমধ্যে সরকার হাতে নিয়েছে। তাছাড়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাখাত আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চশিক্ষার আঙিনায় পা রেখেছে। অত্যাধুনিক ল্যাবের মাধ্যমে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানে রয়েছে উচ্চতর এমপিএইচ ডিগ্রীও।হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিইউএমএস ও বিএএমএস প্রোগ্রাম দুটি প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির এমবিবিএস এর সমমর্যাদার । প্রোগ্রাম দুটি সম্পন্ন করলে বেসরকারি চাকুরির পাশাপাশি রয়েছে সরকারি চাকুরির সুযোগ। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ; ভারত, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে। ইতোমধ্যে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ শিক্ষক পাঠদান করেছেন। ভারত সরকারও একজন ইউনানী বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদকে পাঠিয়েছে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে।বাংলাদেশে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ই অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করাচ্ছে।
রূপালী বাংলাদেশ: ভারত ও অন্যান্য দেশে প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিষয়ক স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাংলাদেশে আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় গঠনের কোনো চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা কতখানি?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ভারতে আয়ুশ মন্ত্রণালয় আছে, তারা ইউনানী আয়ুর্বেদিক এবং হারবাল শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে অসাধারণ কাজ করছে। বাংলাদেশেও আয়ুশের আদলে মন্ত্রণালয় করা গেলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে এ ওষুধ শিল্প খাতটির। পাশাপাশি যেসকল সমস্যা রয়েছে ইউনানী আয়ুর্বেদিক এবং হারবাল শিল্পে, সেগুলো দূর করে আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম করা যাবে।
রূপালী বাংলাদেশ: বাংলাদেশের বর্তমান যে জাতীয় ঔষধনীতি, সেখানে ইউনানী, আয়ুর্বেদী ঔষধের স্বীকৃতি ও গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। সেটা কীভাবে সম্ভবপর হলো? আসলে এর নেপথ্যকথা জানতে চাইছি।
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ১৯৮২ সালের ঘটনা। তখন হারবাল ওষুধ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বীকৃত ছিলনা। আমি চেষ্টা শুরু করলাম। আমার স্বপ্নের কথা জানালাম জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম স্যারকে। এরপর বিষয়টি অবগত করলাম ওষুধ প্রশাসনে তৎকালীন পরিচালক ড.হুমায়ুন কে এম এ হাই সাহেব এবং সংশ্লিষ্টদেরকে। এ বিষয়ে তখন আন্তরিকতা দেখালেন ইউনানী আয়ুর্বেদিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হাকীম আজিজুল ইসলাম। আমার লেগে থাকা এবং সবার আন্তরিকতার কারণে জাতীয় ওষুধ নীতিতে অন্তর্ভূক্ত হয় হারবাল ওষুধ। এর ফলে যুগান্তকারি পরিবর্তন শুরু হয় ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ সেক্টরে।১৯৯২ সালের দিকে, এই ওষুধ নীতি থেকে হারবাল খাতকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমরা হাইকোর্টে মামলা করি। সেই মামলার আইনজীবী হতে ড. কামাল হোসেন সাহেবকে অনুরোধ করি। তিনি রাজি। আমরা ওই মামলায় জিতে যাই, সরকার হেরে যায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই খাতকে।
রূপালী বাংলাদেশ: হামদর্দের যে নিজস্ব ঔষধি উদ্যান রয়েছে, সেখানকার গাছ-গাছড়ার প্রজাতি কতগুলো এবং কী ধরনের? এসব কী পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে? বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ বা আমদানি করার কোনো প্রক্রিয়া কী চালু আছে?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে হামদর্দের আধুনিক কারখানা এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে হামদর্দের নিজস্ব ওষুধি বাগান আছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য উদ্ভিদ রয়েছে। সবমিলিয়ে ২০০ প্রজাতির ওষুধি উদ্ভিদ, লতা, গুল্ম, ফুল ও ফল রয়েছে, যেগুলো আমাদের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চল ও মার্কেট থেকে আমরা ভেষজ উপাদান সংগ্রহ করি। তবে সরকারের উদ্যোগে ভেষজ বাগান করা হলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা আর বিদেশে যাবেনা এবং এই খাতের অগ্রগতিতে অসাধারণ কাজ হবে।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনি অসম্ভব স্বাপ্নিক, ধৈর্যশীল, আশাবাদী ও উদ্যমী একজন মানুষ। জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়েও আপনি কর্মঠ, নিরলস, সচল ও সক্রিয়। এর রহস্য কী?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমি সবসময় কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছি। হামদর্দ ছাড়া জীবনে আর অন্য কিছু ভাবিনি। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, কাজ কখনো কাউকে খালি হাতে ফেরায় না।
রূপালী বাংলাদেশ: নিকট ভবিষ্যতে কোনো বড় ধরনের কর্মকাণ্ডে হাত দিচ্ছেন কী?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ইউনানী আয়ুর্বেদিক শিল্পকে এগিয়ে নিতে সর্বপ্রকারের আধুনিকায়নের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ জন্য ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সেটি নিতেও আমরা প্রস্তুত আছি।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটি বলে মনে করেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ধ্বংসপ্রাপ্ত হামদর্দকে গড়ে তোলার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার জীবনের বড় অর্জন বলে মনে করি।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ব্যর্থতা কিছু নেই । তবে মৃত্যুর আগে আমি হামদর্দ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে যেতে চাই।
রূপালী বাংলাদেশ: নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জন্য আপনার উপদেশ পরামর্শ কী কী থাকবে?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: সততার সঙ্গে কাজ করো, বসে থেকোনা, চেষ্টা করে যাও, কাজ তোমাকে কখনোই হতাশ করবেনা, সাফল্যের মুখ দেখাবেই।
রূপালী বাংলাদেশ: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় আপনার একটি স্বপ্নিল ওউচ্চাভিলাষী প্রকল্প। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎচিত্রটি আপনার মানস-কল্পনায় কেমন? অর্থাৎ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে আপনি কেমন দেখতে চান, কীভাবে সেটা নির্মাণ করে তুলছেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে হামদর্দ বিজ্ঞান নগর। আমাদের স্বপ্ন এই বিজ্ঞাননগর হবে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ এডুকেশন কমপ্লেক্স, যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব জ্ঞান বিজ্ঞানে উপকৃত হবে। এখান থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সারাপৃথিবীতে নতুন নতুন গবেষণা ও আবিষ্কারে নেতৃত্ব দেবে এটাই আমরা চাই।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনি কাকে আদর্শ, অনুসরণীয় মানুষ হিসেবে মনে করেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমি রাসূল সা. এর আদর্শকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আর বাংলাদেশে হামদর্দ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হাকীম হাফেজ আব্দুল মজিদ এবং তার দুই পুত্র হাকীম আব্দুল হামিদ ও হাকীম মোহাম্মাদ সাঈদ আমার কাছে অনুপ্রেরণা।
রূপালী বাংলাদেশ: কমিটেড একজন শিক্ষাব্রতী হিসেবে আপনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ ব্যাপারে কোন বিষয়টি আপনাকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছে? আপনার শিক্ষায়তনগুলোর আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য আছে কী?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: দক্ষ এবং সৎ মানুষ তৈরির জন্যই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো করেছি। আমাদেরপ্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকেটি প্রতিষ্ঠান আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকার। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় হামদর্দ পাবলিক কলেজ, ৩টি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ, মহিলা মাদ্রাসা থেকে শুরু করে সবগুলো প্রতিষ্ঠান অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
রূপালী বাংলাদেশ: হামদর্দের ট্রাস্টি বোর্ডে দেশ ও সমাজের গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এমনকি এ্যালোপ্যাথিক স্বনামধন্য চিকিৎসকরাও অন্তর্ভুক্ত। তাঁদের ইনভলভ করার মত সাহসী দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা তেমন একটা দেখি না। মূলত কোন ধরনের চিন্তা থেকে আপনি এ ধরনের ব্যতিক্রমী প্রয়াস গ্রহণ করলেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত একজন মোতাওয়াল্লীই নিয়ন্ত্রণ করতেন সবকিছু। কিন্তু আমরা দায়িত্ববিভাজন করতে এবং সবার পরামর্শ নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে হামদর্দকে পরিচালনা করতে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের সমন্বয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয় । সেই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত আছে ট্রাস্টি বোর্ডের মতামত নিয়ে হামদর্দ পরিচালনার প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রীতি।
রূপালী বাংলাদেশ: আমরা জানি, বর্তমান বাংলাদেশে কয়েক হাজার ওয়াক্ফ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সুনাম ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে তার মধ্যে হামদর্দ প্রথম সারিতে ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভবপর হলো?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমরা নিয়মের প্রতি সবসময়ই অনুগত থেকেছি। ওয়াক্ফ আইনকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণে অন্যদের কাছে এই প্রতিষ্ঠান অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তাছাড়া সবাই মিলে অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালানোর কারণে এই প্রতিষ্ঠান এত সফলতা পেয়েছে।
রূপালী বাংলাদেশ: অবসরে কী করেন?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আমার কোনো অবসর নেই । সবসময় হামদর্দের নানা বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়, পরিকল্পনা করতে হয় এবং কর্মকর্তা কর্মীদের নিয়ে কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হয়। তবে হঠাৎ যদি অবসর পাই তাহলে ধর্মীয় টিভি সিরিয়াল দেখি, যার মাধ্যমে আমি নিজেকে আরো ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে পারি।
রূপালী বাংলাদেশ: আপনার জীবনঅবসানের আগে হামদর্দকে কীভাবে দেখতে চান?
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: হামদর্দ এখন বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা দিচ্ছে। আমার স্বপ্ন হামদর্দের সেবা থেকে বাংলাদেশের একজন মানুষও বাদ পড়বেন না। মৃত্যুর আগে আমি এটা দেখে যেতে চাই । এটাই আল্লাহ’র কাছে আমার চাওয়া ।
রূপালী বাংলাদেশ: ধন্যবাদ আপনাকে ।
ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনার মতামত লিখুন :