বিগত দেড় দশকে পতিত শেখ হাসিনার দাসত্ব নীতির ফলে বিজিবিকে বিএসএফের গোলামে পরিণত করার পাঁয়তারা চালিয়েছিল। ভারতের মাধ্যমে বিজিবিকে ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা করে পতিত সরকার এমন অভিযোগ উঠেছে। পিলখানায় বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের পর এমন দাবি আরও জোরালো হয়। অথচ ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র ৮ জন বিডিআর সদস্যের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
তাদের এই বীরত্বের পরেও তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালককে তার পদ থেকে সরিয়ে দেন শেখ হাসিনা। কুড়িগ্রামের রৌমারি সীমান্তে তৎকালীন বিডিআরের চৌকিতে হামলা করে বিএসএফ। এ সময় বিডিআর সদস্যরা পাল্টা আক্রমণ চালায়। এতে ১৬ জন বিএসএফ সদস্য মারা যান। ঘটনার পর বিএসএফ সদস্যদের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সেই সময় বিডিআর মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান। হামলাকারী শত্রুসেনাকে পরাজিত করায় হিসাব অনুযায়ী ফজলুর রহমানের পুরস্কৃত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। তৎকালীন হাসিনা সরকার ফজলুর রহমানকে বিডিআর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন।
এসব বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেন, রৌমারি সংঘাতের পর অনেকে বিডিআরের ভূমিকাকে ‘সাহসী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কিন্তু কেউ কেউ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে হাজিন হন। অনেকে মনে করেন, হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপদে ফেলার জন্যই এ ঘটনা হয়েছিল। কিন্তু আসলেই বিষয়টি সেটা ছিল না।
২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেছিলেন, সে ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করা হলেও এর কোনো ভিত্তি নেই। অনেকে বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য আমি এটা করেছিলাম। কেউ কেউ বলেন যে, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে গণ্ডগোল সৃষ্টির জন্য আমি এটা করেছিলাম। ফজলুর রহমান জানান, দেশের মানুষ এই ঘটনার একদিন বিচার করবেন। বর্ডারে রক্ষণাবেক্ষণ করবার দায়িত্বেই আমাকে নিয়োজিত করা হয়েছে। আমি যদি ওই সময়ে আপস করতাম, তাহলে এই সমালোচনা আমাকে শুনতে হতো না। আমার তো কাজই হলো সীমান্ত রক্ষা করা এবং সীমান্তের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি যেকোনো পরিস্থিতিতে কাজ করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধরে রাখতে সতর্ক থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজ করে থাকে।’
জানতে চাইলে মেজর (অব.) জহুর হক বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে প্রমাণ করে সে কীভাবে বিজিবিকে বিএসএফের গোলামে পরিণত করে রেখেছিল। শেখ হাসিনা ভারতের উৎকৃষ্ট এক দালালও বটে। হাসিনা পতনের পর দেশের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিজিবি।
পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিম ফেরদৌসি বলেন, বিজিবিকে বিএসএফের গোলামে পরিণত করেছিল শেখ হাসিনা। তা ছাড়া বিডিআর বিদ্রোহ ছিল ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ।
এসব বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. মোয়ায্যাম হোসাইন হেলাল বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ছিল ভারতের দালাল এবং সে বিজিবিকে বিএসএফের গোলামে পরিণত করেছিল। বিজিবি এখন দেশের কল্যাণে কাজ করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেছেন, ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে মাত্র ৮ জন বিডিআর সদস্যের কাছে শোচনীয় পরাজয় হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের। সেই বিডিআর আজ বিজিবি।
বিজিবি হাসিনার হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিজিবিকে বিএসএফের গোলামে পরিণত করে রেখেছিল শেখ হাসিনা সরকার। হাসিনার সময় ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল বিজিবি এবং হাসিনার পতনের পর দেশের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিজিবি।
বিজিবির সাবেক এক মহাপরিচালক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিজিবিকে ভারত ধ্বংস করে দিয়েছে। বিজিবি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ভারতের দাসত্ব করতে চাইত না। এ জন্য বিজিবির প্রতি হাসিনা সরকারের আমলে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত বিদ্রোহী ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং এই বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়, যেটার দায় হাসিনা সরকার কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, আজ হাসিনা সরকার নেই। বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। তারা সীমান্তে বিজিবিকে বিএসএফের গোলাম বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল এবং রাখে। হাসিনার পতনের পর বিজিবি ভারতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :