ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

জনশূন্য সিলেট আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৩:০৫ এএম

জনশূন্য সিলেট আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জনরোষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সিলেট আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এখনও লেগে আছে ৫ আগস্টের ক্ষতচিহ্ন। এসব বাড়ি থেকে আগুনে পোড়ার গন্ধ এখনও বাতাসে ভেসে আসে। মুছে যায়নি মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়ে যাওয়া দাগ। কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার করা হলেও বাকিগুলো রয়েছে ক্ষত নিয়ে। বাসা-বাড়ির বেশির ভাগই ভয়াবহ ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে এখনও। দু-একটির পোড়া অংশে রং দিলেও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের বাড়িসহ অধিকাংশ বাড়িই এখন পর্যন্ত বিপ্লবে জ্বলে ওঠা মানুষের ক্ষোভের তাপ বয়ে বেড়াচ্ছে।

এসব বাড়ি এখন মালিকশূন্য। শীর্ষ নেতারা পলাতক। কেউ আত্মগোপনে। কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনও কেউ নেই। বাড়িগুলো তাই খালি পড়ে আছে। শুধু কেয়ারটেকার ও পাহারাদার ছাড়া আর কারও দেখা মিলছে না সেসব বাড়িতে। শেখ হাসিনার পালিয়ে দেশত্যাগের পর ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের অন্তত ২৫ শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই পৃথক মিছিল নিয়ে প্রতিবাদী মানুষ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত নেতাদের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালান। এর মধ্যে ছিল পতিত সরকারের সাবেক প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ (সদর ও নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আবদুল মোমেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসভবন। এ ছাড়া একাধিক কাউন্সিলরের বাসভবন ভাঙচুর করা হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বাসায়ও হামলা চালানো হয়।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের শ্বশুরবাড়িও আক্রমণের শিকার হয়। সম্প্রতি এসব নেতার বাসা-বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে শূন্যতা বিরাজ করতে দেখা যায়। বাড়িগুলো খাঁ-খাঁ করছে। একসময় এসব বাড়ি নেতা-কর্মীর পদচারণে সরগরম থাকলেও এখন সেগুলোতে কেউ ফিরেও তাকান না। অনেক বাড়ির আঙিনায় কুকুর-বিড়াল বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে কয়েকটি। ভেতরেও বয়ে বেড়াচ্ছে ৫ আগস্টের ক্ষত।

সাবেক প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবনে একজন কেয়ারটেকার ছাড়া আর কেউ থাকেন না। বাড়িটি এখনও ৫ আগস্টের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ (সদর ও নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে আবদুল মোমেনের বাসভবনের সামনে ঝুলছে বড় একটি তালা। দুজন পাহারাদারকে বাড়ির সামনে বসে থাকতে দেখা যায়। সেই বাড়ির দরজা-জানালার কাচ এখনও ভাঙা। সামনে পোড়া জিনিসপত্র এখনও এদিক-ওদিক ছড়িয়ে আছে। ৫ আগস্টের পর বাড়ির কোনো সদস্যকেই বসতে দেখ যায়নি।

নগরের চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মো. মবশ্বির আলী এবং সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সিলেট নগরের বড় ফার্মেসিগুলোর মধ্যে এ দুটি ফার্মেসিও ছিল। এগুলো আর খোলা হয়নি। টিন দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও লুটপাট হলেও সেটি আবার নতুন করে চালু করা হয়েছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!