এসিল্যান্ডের নামে ঘুষ নিয়ে কোটিপতি বনে যাওয়া বগুড়ার শিবগঞ্জ ভূমি অফিসের আলোচিত ড্রাইভার শামীম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে বহাল আছেন নাইটগার্ড এনামুল হক। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের নানা প্রশ্নে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ শেষ পৃষ্ঠায় ‘ভূমি অফিসের ড্রাইভার গার্ড কোটিপতি’ শিরোনামে গত শনিবার (২ নভেম্বর) সংবাদ প্রকাশের পর পদক্ষেপ নিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। পরদিন রোববার এসি ল্যান্ডের ড্রাইভার শামীমকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। তাদের অনুসন্ধানেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ড্রাইভার ও নাইটগার্ডের মাধ্যমেই প্রতিদিন লেনদেন হতো অন্তত ১০ লাখ টাকা। ভূমি অফিসে জমির খারিজ, শ্রেণি পরিবর্তন, অসিয়তনামা দলিলসহ নানা কাজে লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি হয়। ড্রাইভার, সার্ভেয়ার এবং শিবগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারাও এসি ল্যান্ডের নামে ঘুষের টাকা গ্রহণ করে নাইটগার্ডের হাতে দেন। এরপর বিশেষ চিহ্ন স্বাক্ষর করা ফাইল পাঠানো হতো এসি ল্যান্ডের টেবিলে। এসি ল্যান্ড নিজে ঘুষ গ্রহণ করেন না। তার মাধ্যম হলো নাইটগার্ড।
এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিমুজ্জামান। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, কোনো দালাল বা কারো মাধ্যমে গিয়ে কেউ প্রতারিত হলে আমি কি দোষী? রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরদিন ড্রাইভার শামীমকে চাকরিচ্যুত করেছি। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এসি ল্যান্ড তাসনিমুজ্জামান বলেন, ভূমি অফিসে আমি থাকাকালীন কোনো দালালি ও চাঁদাবাজি চলবে না। শুধু ড্রাইভার শামীম নয়, অফিসের যেকোনো কর্মচারী অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি অফিস সব সময় দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চাই।
সূত্র মতে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা মুরাদপুরের বাসিন্দা শামীম হোসেন পাঁচ বছর আগে লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন ছিলেন দিনমজুর। সংসারে অভাবের কারণে একসময় ভ্যান-রিকশাও চালিয়েছেন শামীম। পৈতৃক সূত্রে চার ভাই পেয়েছেন দুই শতক জায়গা।
ভাগে আধা শতক জায়গার মালিক হন শামীম। পাঁচ বছর আগে তার হাতে আসে জাদুর কাঠি। উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেই শামীম এখন কোটিপতি। স্থানীয়দের কাছে তিনি এসি ল্যান্ড নামে পরিচিত। ড্রাইভার শামীম মোকামতলা মুরাদপুর এলাকার মহাসড়কসংলগ্ন সর্বোচ্চ মূল্যের তিন শতক জায়গার ওপর কোটি টাকায় ফ্ল্যাট বাড়ি করেছেন। পাশেই কিনেছেন আরও সাড়ে ১০ শতক জায়গা। এসি ল্যান্ডের গাড়িতেই পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। পাঁচতারকা হোটেলেও শামীমকে সময় কাটাতে দেখা যেত।
বগুড়া প্রেস ক্লাবে শিবগঞ্জ উপজেলার এসি ল্যান্ডের ড্রাইভার শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে জমি খারিজের নামে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলনের পর ভূমি অফিসের লাগামহীন দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। একটি জমির খারিজের জন্য ৪০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়। বেকায়দায় ফেলে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া, জমি দখল ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কাজে চাঁদা নেন শামীম। এমনকি খাসপুকুর এবং হাটের সরকারি জায়গা দখলের কাজেও কর্তার নামে টাকা নিতেন।
এসি ল্যান্ডের ড্রাইভার হওয়ার সুযোগে দুর্নীতি করে ফ্ল্যাট বাড়িসহ নামে-বেনামে পাঁচ-সাত বিঘা জমি কিনেছেন উল্লেখ করে গত ২০ অক্টোবর বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন শিবগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের বিধবা স্বপ্না খাতুন।
আপনার মতামত লিখুন :