ঢাকা বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

কারাগারেও নির্ভার আ.লীগের মন্ত্রী-আমলারা

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৪২ এএম

কারাগারেও নির্ভার আ.লীগের মন্ত্রী-আমলারা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর সেদিনই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচারসহ নানা মামলায় জর্জরিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ মন্ত্রী-আমলা, সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এর মধ্যেই গ্রেপ্তারও হয়েছেন শতাধিক। এসব শীর্ষ দলবাজ নেতাকর্মীর অনেকে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। শুরু হয়েছে বিচার কার্যক্রম।

গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এসব নেতাকর্মী যেখানে অজানা ভবিষ্যতের আতঙ্কে ভয়ে থাকার কথা, সেখানে কারাগারে থেকেও তারা যেন রয়েছেন নির্ভার। থাকছেন রাজকীয় হালে। পাচ্ছেন ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা। এমনকি কারাগারে থেকেও চাপে রেখেছেন প্রশাসনকে।

গণঅভ্যুত্থানে দমে যাওয়া আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীর আবারও মাথাচাড়া নিয়ে ওঠার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে সূত্র জানিয়েছে, হাসিনার মন্ত্রী-আমলারা ভাবছেন তাদের কিছুই হবে না। আর এই আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত হয়েই তারা কারাগারে বসেও পুলিশকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আটক হওয়া গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড, সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত জিয়াউল আহসান পুলিশকে নিয়মিত হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, তার কিছুই হবে না। তার ধারণা, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।

এ বিষয়ে সূত্র জানায়, জিয়াউল আহসান পুলিশের সাথে নিয়মিত উদ্ধত আচরণ করছেন। পুলিশকে জিয়াউল আহসান বলেন, ‘তোমার মার খেয়েছ, সামনে আরও মার খাবে। সুতরাং সাবধান হয়ে যাও।’ অথচ তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন।

এদিকে নানা অপকর্মের অলরাউন্ডার সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকেও আদালতে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে। আদালতে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন-এই দিন তো দিন না, আরও দিন আছে।

কামরুল ইসলামের শুনানির সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুনানির সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বিচারকের লিফট ব্যবহার করে সরাসরি এজলাসের খাস কামরার সামনে চলে গেছেন কামরুল ইসলামের ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি সালমান এফ রহমান, শাজাহান খানসহ হাসিনার ক্ষমতাধর আট মন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলার সময় সবাইকে এক ফ্রেমে দেখা যায়, যেখানে সবাই ছিলেন বেশ হাসি-খুশি ও প্রফুল্ল। আবার কাউকে দোয়া চাইতেও দেখা গেছে। সবার মধ্যেই ছিল আত্মবিশ্বাস।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এই আত্মবিশ্বাস দেখে বিএনপির নেতারা বলছেন, আ.লীগের আর হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই, এরা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে প্রায় বেশির ভাগ মন্ত্রী-আমলা ছিলেন বেপরোয়া। অপরাধী ও বন্দি আওয়ামী লীগ নেতারা জেলখানায় থেকেও নির্ভার আছেন। তবে হাসিনার মন্ত্রী-আমলারা কারাগারে বসে কিছু ভুয়া হুংকার দিচ্ছেন। এসব হুমকি এ দেশের জনগণ আর নেয় না। কাজেই ফ্যাসিস্ট আর কখনোই বাংলার মাটিতে ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে প্রায় বেশির ভাগ মন্ত্রী-আমলা ছিলেন ব্যাপক বেপরোয়া, যার ধারাবাহিকতা এখনো রয়েছে বলেই মনে করছেন তারা।

আরবি/জেডআর

Link copied!