অন্তর্বর্তী সরকারের সঠিক পদক্ষেপে চারটি ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। তবে বেড়েছে চালের দাম। বন্যার পরে গত তিন সপ্তাহে বাজারে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। অন্যদিকে কমেছে সব ধরনের সবজির দাম। তবে শেষ প্রান্তিকে কৃষকের রোপণ চাহিদায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা।
দেশের বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ ও দিনাজপুরেও দাম বেড়েছে। গত ১৫ দিনে পাইকারিতে চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ।
বাজারে সরবরাহ ও চাহিদা ঠিক থাকলেও মজুদ শেষের পথে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, অঘ্রাণের শেষে নতুন চাল না আসা পর্যন্ত বা চাল আমদানি না হওয়া পর্যন্ত দাম কমবে না। নতুবা দেশে চাল আমদানি করতে হবে।
চালের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ অনেক কমেছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, বিআর ২৮ চাল সাধারণ মানুষের খাবার। সেই চাল আমাকে ৪০ বস্তার অর্ডার দিলে ২০ বস্তাও দিতে পারব না। কারণ আমার মজুদ নেই।
চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক হিসেবে রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, কার্তিকের মধ্যবর্তী সময়ে সব ধরনের ধান-চালের মুজদ শেষ হয়। এ সময় বাইরে বোরো ধানের চাল রাখা যায় না, পোকায় ধরে নষ্ট হয়। নতুন ধানের অপেক্ষায় পুরোনো সব চাল বাজারে ছাড়েন ব্যবসায়ীরা। নুতন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না বলে জানান বেলাল। তবে সরবরাহ বাড়াতে তেল, চিনি ও ডিমের মতো চাল আমদানি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান এই ব্যবসায়ী।
তবে এরই মধ্যে দেশে চালের সরবরাহ বাড়াতে গতকাল আমদানি ও রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়িয়ে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এবং চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালের ওপর সমুদয় আমদানি ও রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি শুল্ক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, চাল আমদানিতে বিদ্যমান মোট করভার ২৫ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে (অগ্রিম আয়কর) নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ৯.৬০ টাকা কমবে। সমুদয় আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে, ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং সাধারণ ক্রেতার জন্য তা সহজলভ্য হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
চালের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে ঢাকার মগবাজারের রাজ্জাক স্টোরের মালিক মেহেদী হাসান বলেন, ২৮ ও পাইজাম চালের দাম বর্তমানে সমান। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে।
তিনি রূপালী বাংলাদেশকে গতকাল বলেন, বিআর-২৮ চালের ২৫ কেজি বস্তার দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাইজাম ৫০ কেজি বস্তার দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা। দুই ধরনের চাল এখন প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন সপ্তাহ আগে ৫০ কেজি বস্তার দাম ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে বছরের শেষ সময়ে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা, দুই সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা কেজি। তবে মৌসুমের শেষ সময়ে বীজ হিসেবে চাহিদা বাড়ায় দামও বাড়ে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাতা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কমে আসবে বলে জানান মেহেদী হাসান।
দেশের অন্যতম বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। সবচেয়ে বড় চালের পাইকারি মোকাম আলুপট্টি। সেখানেও গত ১৫ দিনে পাইকারিতে চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। বৈরী আবহাওয়া এবং স্থানীয় বাজারে ধানের দাম প্রতি মণে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ার কারণে চালের দামও বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
নওগাঁ শহরের সিও অফিস এলাকার সোহেল ট্রেডার্সের মালিক সোহেল রানা বলেন, পাইকারিতে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে পাইকারিতে ৬৮ টাকা কেজি দরে জিরাশাইল চাল কিনে খুচরায় আমাদের ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বাজারে প্রতি মণ জিরাশাইল ধানের দাম বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬২০ টাকা। কাটারিভোগ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। বৈরি আবহাওয়া এবং বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধানের দাম বাড়তি। আর ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবে চালের দামও কিছুটা বেড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
ধানের দামের সঙ্গে চালের দাম বাড়ার সম্পর্ক আছে বললেন দিনাজপুরের চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রূপালী ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রবিউল আলম সোহেল। তিনি বলেন, নতুন ধান আসছে। পুরোনো ধান কৃষকের কাছে এখন খুব কম আছে, যা আছে মিলারের কাছে। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে ছাড়তেও হচ্ছে। তিনি বলেন, গত তিন সপ্তাহে বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ভোগ্যপণ্য হিসেবে চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিম্নবিত্তের অনেক মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :