ধরপাকড়ের ভয়। তাই দলবেঁধে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীরা। যাদের বেশিরভাগই মেক্সিকো, স্পেন ও ভেনিজুয়েলার নাগরিক। নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেছেন গত সোমবার। এর মধ্যেই মার্কিন অভিবাসীদের জীবনকে ভয়াবহ এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে একের পর এক নিচ্ছেন কঠোর পদক্ষেপ। দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর প্রথম দিনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তা কার্যত বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে থাকবে না। এগুলোর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বে।
এদিকে মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৫০০ সৈন্য পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে যেকোনো স্থানে গ্রেপ্তার অভিযানের অনুমতির পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ধরপাকড়ের খবর পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে চারজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তুলেছেনÑ এমন একটা কথা প্রচলিত থাকলেও অভিবাসনবিরোধী নীতির কারণে মার্কিন মুলুকে নথিপত্রহীন বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দেশে ফেরত আসার শঙ্কাও আছে কারো কারো মধ্যে।
অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থাও জারি করেছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় চেকপয়েন্ট বসিয়েছে মার্কিন পুলিশ। এমনকি গির্জা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরে আনা হচ্ছে। সান দিয়েগোতে এরইমধ্যে পুরোদমে চলছে ধরপাকড়। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে তা হলো অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে তার কঠোর নীতি।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। এই আদেশ অনুযায়ী, গণহারে অবৈধদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হবে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। সঙ্গে পাঠানো হবে দুটি ‘সি-সেভেনটিন’ ও দুটি ‘সি ওয়ান-হান্ড্রেট-থার্টি’ এয়ারক্রাফট। বিষয়টি নিশ্চিত করে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত সোমবার শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইদিনেই ট্রাম্প শতাধিক নির্বাহী আদেশে সই করে ঝড় তুলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমপ্রধান বা আরব দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্স বলছে, ট্রাম্পের ওই স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলো। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেড় হাজার সেনা, উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ সীমান্তে, অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ তাঁর।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদনকারীদের এখন থেকে আর করোনার টিকার সনদ দেখাতে হবে না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন এ ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের পুনরায় ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে এই কথা জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ইয়েমেনের হুতিদের ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশের ওপর ভিত্তি করে মুসলিমপ্রধান বা আরব দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দায়িত্ব গ্রহণের দিনই তিনি অনেক নির্বাহী আদেশে সই করেন। আরব বংশোদ্ভূতদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী সংগঠন আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (এডিসি) বলেছে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।
সেটিকে ন্যায্যতা দিতে যে আইন ও বিধি অনুসরণ করা হয়েছিল, সেগুলোর ওপর নির্ভর করে নতুন আদেশটি দেওয়া হয়েছে। নতুন আদেশটির আওতায় ভিসা-সংক্রান্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ও ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের অপসারণের সুযোগ আরও বিস্তৃত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করার জন্য একটি নতুন ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করেছে এডিসি।
এদিকে ভারতীয় ও মার্কিন কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে একটি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন। এমনটাই ভারতীয় দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। বৈঠকটি আয়োজনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে আগামী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ও স্থান হিসেবে ওয়াশিংটনের কথা উল্লেখ করেছে রয়টার্স। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরে প্রথম বৈঠক করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সূত্রগুলো বলছে, চলতি বছরের শেষে ভারতে কোয়াডের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তখন কোয়াড তথা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ভারতে উপস্থিত থাকবেন। এই শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে মোদি-ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে- এই সম্ভাবনা আগে থেকে ছিল। বৈঠকে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, চীনকে মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেই সম্পর্ক আরও জোরদারে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও দেশটির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো ও দক্ষ নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করা নিয়ে আলোচনা হবে। এর পাশাপাশি দুই নেতার মধ্যে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হবে, সূত্র জানিয়েছে। এদিকে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কিন্তু সূত্রগুলো বলছে, নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে ইচ্ছুক। যদিও এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কোনো পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রকাশ করেনি।
আপনার মতামত লিখুন :