আড়ালে চলে গেছেন সিলেট জাতীয় পার্টির নেতারা। এতদিন তারা নিরাপদে ছিলেন। প্রকাশ্যেও দেখা গেছে অনেককে। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে থাকলেও আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সহযোগী ও দোসর হিসেবে চিহ্নিত দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন নির্বিঘ্ন-নিশ্চিন্ত।
যখন আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী অন্তরালে, কেউ পালিয়ে বিদেশে, কেউ যখন অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে; তখনো সিলেট জাপার অনেক শীর্ষ নেতাকে দেখা গেছে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে, ব্যবসা করতে।
এখন আর তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। নিজেদের সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া আটকের পর থেকে দলীয় পরিচয় বহন করেন এমন নেতারা চলে গেছেন অন্তরালে। সিলেটে আওয়ামী লীগের পর এবার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভেতরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। এখনো প্রায়ই মামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আটকের ঘটনা ছিল কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান সহযোগী এ দলটির বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্টের আগের রাজপথে থাকা শিক্ষার্থীদের রুখতে আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে সোচ্চার থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে একাধিক মামলা হয়। তবে উল্লেখ করার মতো কোনো নেতা আটকের খবর পাওয়া যায়নি।
কিন্তু গত সোমবার একই দিনে জেলার শীর্ষ দুই নেতা র্যাবের খাঁচায় আটক হলে সিলেটে দলের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যারা এতদিন নির্বিঘ্নে চলাচল করছিলেন, তারা সতর্ক হয়ে পড়েন। সোমবার রাতে জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়াকে ঢাকা উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে গত ২ অক্টোবর সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয় সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ইয়াহিয়া চৌধুরী ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানের কাছে পরাজিত হন। তিনি গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন তিনি। যদিও পরে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে একই দিন বিকেলে র্যাব-৯ এর একটি টিম সিলেটের গোলাপগঞ্জের ৭নং লক্ষ্মনাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খলকুর রহমানকে উপজেলা কার্যালয় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জেলা জাতীয় পার্টি নেতা।
দলীয় প্রতীকে তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লক্ষ্মনাবন্দে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে খলকুর রহমানের বিরুদ্ধে সিলেটের কোতোয়ালি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় দুটি মামলা করা হয়। আটকের পরদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিলেট জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, এতদিন তারা অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলেন যে, আওয়ামী লীগের ওপর দিয়ে আসা ঝড় তাদের আক্রান্ত করবে না। ফলে তাদের অনেকেই বিন্দাস ঘোরাঘুরি করছিলেন। কিন্তু এখন তাদের ধারণা পাল্টে গেছে। মূলত ওই দুজনের গ্রেপ্তারের পর তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই এখন বাড়িছাড়া। আছেন আত্মগোপনে। এ বিষয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির শীর্ষ কোনো নেতার বক্তব্য মিলেনি। গত মঙ্গলবার থেকে তাদের সবার ফোন নম্বর বন্ধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক সদস্য বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ৫ আগস্টের পরে সারা দেশে জাপার বেশ কজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতা মামলা হয়েছে। এসব মামলা মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক। কারণ- আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার পর্যন্ত হয়েছেন। ছাত্র-আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, জাতীয় পার্টি এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এরপরও ৫ আগস্টের পর আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :