ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লোটাস কামালের রাহুমুক্ত হচ্ছে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্প

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ১২:০৬ এএম

লোটাস কামালের রাহুমুক্ত হচ্ছে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) রাহুমুক্ত হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প। কাগজে-কলমে কোথাও এই প্রকল্পে মুস্তফা কামালের নাম না থাকলেও তারই প্রত্যক্ষ প্রভাবে মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি নামসর্বস্ব কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্পের ১৬০ একর জমি। এ সময়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে প্রকল্পটি বাতিলের উদ্যোগ নেয় রাজউক।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রূপালী বাংলাদেশকে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঝিলমিল প্রকল্পের কাজ একদমই এগোয়নি। আমরা ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চাই। এ জন্য গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

জানা গেছে, সাত বছর আগে বিএনজি গ্লোবালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল রাজউক। চুক্তি অনুযায়ী, ওই জমিতে তাদের ১৪ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল।

পাশাপাশি লেক, খাল, খেলার মাঠসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অবকাঠামো তৈরিরও কথা ছিল। রাজউকের নির্ধারিত মূল্যে সেগুলো বিক্রি করে কোম্পানিটি তাদের নির্মাণ খরচ তুলে নেবে। চার বছরের মধ্যে ওই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সাত বছরে কোনো কাজই করেনি কোম্পানিটি। 

বিভিন্ন সময় রাজউক ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করলেও লোটাস কামালের অদৃশ্য হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সেই চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

প্রকল্প পরিচালক ওয়াহিদ সাদিক বলেন, প্রকল্পের কাজে দেরি হওয়া নিয়ে রাজউক অনেক দেনদরবার করেছে। একপর্যায়ে চুক্তি বাতিলেরও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বারবারই রাজউক ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি বিএনজি গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালয়েশিয়ার নাগরিক শরিফা সাবরিনা বাংলাদেশে এসে রাজউক চেয়ারম্যান, পূর্তমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, পূর্ত সচিবকে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে গেছেন। পাশাপাশি আরও ৬০০ কোটি টাকার অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে রাজউকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি এমন কৌশলে করা হয়েছিল যার কোনো শর্তই রাজউকের পক্ষে ছিল না। এ জন্য রাজউক এটা বাতিল করতে পারেনি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিএনজি গ্লোবালের অফিসে গিয়ে দেখতে পান, কোম্পানিটির রয়েছে নামমাত্র একটি ছোট্ট অফিস। সেখানকার কর্মচারীরা রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের কোনো তথ্যই জানেন না। তবে তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থিত জিয়াংজি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। অথচ বিএনজি গ্লোবাল রাজউকের সঙ্গে চুক্তি করার সময় দাবি করেছিল, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে তাদের সিস্টার কোম্পানি রয়েছে। এ-সংক্রান্ত তথ্যও সঠিক নয় বলে দূতাবাস অভিমত দেয়। কোম্পানিটি নির্মাণ সম্পর্কিত কোনো কাজের সঙ্গে কখনো যুক্ত ছিল না।

অথচ রাজউকের সঙ্গে চুক্তি ছিল, ঝিলমিল প্রকল্পে ৪৮০ বিঘা জমিতে বিএনজি গ্লোবাল ৮৫টি বহুতল ভবন নির্মাণ করবে। ৬০টি ভবন হবে ২০ তলার, ২৫টি হবে ২৫ তলার। মোট ফ্ল্যাট হবে ১৩ হাজার ৭২০টি।

ফ্ল্যাটগুলোর আকার থাকবে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুট থেকে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের মধ্যে। ভবনগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী হবে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। 

রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়াভিত্তিক কোম্পানিটির পেছনে লোটাস কামাল সব সময় ছায়ার মতো লেগে থাকেন। তারা এ প্রকল্পের কথা বলে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও রাজউক জানতে পেরেছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প বাতিলের কাজ এখন জোরেশোরে শুরু করেছে রাজউক।

আরবি/জেডআর

Link copied!