ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

মাসের ব্যবধানে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০১:১৫ এএম

মাসের ব্যবধানে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

এক মাসের ব্যবধানে ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ভোক্তাদের ফের বাজার খরচের ওপর বাড়তি আসবে। এমনিতেই চালসহ নিত্যপণ্য বাবদ বাড়তি খরচ রয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইতোমধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ ছুঁয়েছে। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০.৮৯ শতাংশ।

গত ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর পর ৬ জানুয়ারি ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম মোল্লা। চিঠিতে বলা হয়েছে,  আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে পুনরায় মূল্য সমন্বয়ের কথা রয়েছে।

জানা গেছে, বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট এখনো রয়ে গেছে।  দুই, তিন ও পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা সরবরাহ করলেও এক লিটারের তেল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না তেল। এতে ক্রেতাদের পণ্যটি কিনতে এখনো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো। যে কারণে এখনো বাজারে সরবরাহ করছে না।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা।

খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

দাম বাড়ানোর পর ভোক্তাদের আশা ছিলÑ দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বাজারে অস্থিরতা রয়েই গেছে। 

দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে সয়াবিন তেলের সংকটে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।

সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বোতলজাত তেল কেটে ড্রামে ভরে খোলা তেলের দামে বিক্রি করছেন, এতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছে তারা। আর ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। ভোক্তারা সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত এবং তেলের বাজারে স্বচ্ছতা আনতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

ভোজ্যতেলের খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তারা চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করছে না। ফলে খুচরা বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশের ডলার সংকট এখনো চলমান। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চক্রান্ত করে সরবরাহ বন্ধ করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এসব করে শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়াও সরকার নানা সুবিধা দিলেও তার সুফল ভোক্তা পায় না।

তিনি বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দাম বাড়ানোর বিষয়ে যতটা আগ্রহী, দাম কমাতে ততটা আগ্রহী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেন আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দীর্ঘদিনেও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না, যা খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে নানা অজুহাত দেখান ব্যবসায়ীরা।

আরবি/জেডআর

Link copied!