ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

গুম কমিশনে ১৬ শতাধিক অভিযোগ, জড়িত ৬ সংস্থা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১১:৫৭ পিএম

গুম কমিশনে ১৬ শতাধিক অভিযোগ, জড়িত ৬ সংস্থা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ সরকার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের পর ১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এরই মধ্যে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে ১৪০ জনের। আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৪০০ অভিযোগ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলোর সঙ্গে পাশের দেশের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না- তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদেরও।

পাশাপাশি পাওয়া গেছে আটটি গোপন নির্যাতন সেলের (গোপন বন্দিশালা) সন্ধান। তবে তদন্তের স্বার্থে এই গোপন টর্চার সেলগুলো কাদের দ্বারা পরিচালিত হতো সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গুমসংক্রান্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি জানান, ডিজিএফআই, র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডির কর্মকর্তারা গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও সরকারের সমালোচনা করায় অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন।

কমিশনটির চেয়ারম্যান জানান, অনেক জায়গায় আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে র‌্যাব, যার সংখ্যা ১৭২টি। বিগত শেখ হাসিনা সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি বাহিনীকে সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাউকে গ্রেপ্তার করে সময়মতো আদালতে হাজির করা হয়নি।

গুমের সঙ্গে দেশি-বিদেশি কারা সম্পৃক্ত তা খুঁজে দেখা হচ্ছে জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যারা সরকারের সমালোচক ছিল তাদেরও গুম ও টর্চার করা হতো বলে উঠে এসেছে। এখন পর্যন্ত ডিজিএফআই, র‌্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি, পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এর মধ্যে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ১৭২টি, সিটিটিসি ৩৭, ডিবি ৫৫, ডিজিএফআই ২৬, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

কমিশন চেয়ারম্যান আরও বলেন, গুম হওয়া দুই শতাধিক মানুষকে এখনো ট্রেস (সন্ধান) করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারকর্মী ও কমিশন সদস্য নূর খান লিটন বলেন, ২৯৯ জনের মতো এখনো নিখোঁজের তথ্য তাদের কাছে আছে। তবে তাদের মধ্যে কতজন গুম আছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঢাকার মধ্যে র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে বেশকিছু টর্চার সেল দেখেছে গুম কমিশন, যা খুব ভয়ঙ্কর।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের সাড়ে ১৫ বছরের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করে সরকার। গত ২৭ আগস্ট কমিশন গঠন করা হয়।

পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!