বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ অংশীজনদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৫৮১ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। যদিও প্রকৃতপক্ষে নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং আন্দোলনকারীদের।
জুলাই-আগস্ট কোটা সংস্কার থেকে সরকারের পতনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজপথে নেমে আসে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের নির্দেশে সে সময় গুলিতে আহত-নিহত হন অসংখ্য ছাত্র-জনতা। চার মাস পেরিয়ে গেলেও রয়ে গেছে নিহতদের পরিবারের শোক। আহতদের সুস্থ হয়ে ওঠার আহাজারি। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলার সময় থেকে এখন পর্যন্ত কিছু ব্যক্তি, সংগঠন কিংবা প্রতিষ্ঠান তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে কাজ করছে। যেসব প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের সময় থেকে আহতদের পাশে ছিল তাদের মধ্যে ইবনে সিনা হাসপাতাল অন্যতম। ইবনে সিনা হাসপাতাল এখন পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসাসেবা বাবদ বিল মওকুফ করেছে পাঁচ কোটি টাকার বেশি।
ইবনে সিনার দেওয়া তথ্য মতে, ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী ইউসুফের ১৫ লাখ টাকার বেশি বিল মওকুফ করেছে। ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ইউসুফের ডান চোখে গুলি লেগে তা বের হয়ে যায় মাথার পেছন দিয়ে। ইবনে সিনায় তার চিকিৎসা এখনো চলছে। এ ছাড়া ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে আরো কয়েক শ আহতের চিকিৎসার বিল মওকুফ করছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
জুলাই আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ইবনে সিনা রাজধানীতে আহত যাদের বিল মওকুফ করেছে তাদের মধ্যে মো. কামালের এক লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ টাকা, মো. তাহমীদ হাসানের ছয় লাখ ৪০ হাজার ৮২২ টাকা, মো. শাহীনের এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৯৮ টাকা, মো. শিহাব উদ্দিনের দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
এ বিষয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালের ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) মো. আনিসুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সব শাখায় ছাত্র আন্দোলনে আহতদের ফলোআপে আমরা ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গুলি লাগা রোগীদের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান থেকে শুরু করে সব সেবা এখন পর্যন্ত ফ্রি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে পরিমাণ চিকিৎসা ফি মওকুফ করেছি, তার পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় কোটির বেশি হবে। একই সঙ্গে আন্দোলনের সময় আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার আওয়ামী সরকারের সারাসরি যে চাপ ও হুমকি ছিল, তা উপেক্ষা করে নানা কৌশলে আমরা নির্যাতিত গণমানুষের সেবায় কাজ করে গিয়েছি।
ইবনে সিনা হাসপাতালের এই ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) মো. আনিসুজ্জামান আরও বলেন, ১৯ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ধানমণ্ডি ১৫/এ হাসপতাল ৯/এ এবং ঝিগাতলাসহ ঢাকায় আমাদের অন্যান্য শাখায় গুলিতে আহত রোগীর যে চাপ ছিল তা অবর্ণনীয়। সে সময় আমরা যতটা সম্ভব রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের ওপর নানা চাপ এসেছে। পুলিশসহ নানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখার চাপ দিলেও বিবেকের তাড়নায় আমাদের সব শাখায় চিকিৎসাসেবা চালিয়ে গিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, সর্বস্তরের মানুষের সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে ইবনে সিনা ট্রাস্ট। আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমরা শুধু সেবাই প্রদান করি না, আমাদের ট্রাস্টের লভ্যাংশ অসহায় দরিদ্র মানুষকে প্রদান করে থাকি। ইবনে সিনা একটি ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান এবং আমরা সারা দেশে মানুষের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :