যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচিত সভাপতি এম এ মালিক বলেন, ‘আমার মায়ের শেষ ইচ্ছেটা ছিল, দেশের মাটিতে তাকে যেন কবর দেওয়া হয়। কিন্তু হাসিনা সরকারের বাধায় আমার মায়ের শেষ আশা পূরণ হয়নি। আমার বাবা ও ছোট ভাইয়ের মরদেহও দেশে নিয়ে কবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ ১৯ বছর পর দেশে গিয়ে আমার হৃদয়টা ভেঙে গিয়েছিল। আমার বাড়িতে ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল ফ্যাসিস্ট দলের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসব দেখে আমি খুব আবেগাপ্লুত ছিলাম।
ফ্যাসিস্ট সরকার আমার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে দীর্ঘ ১৮ বছর পর আমি পাসপোর্ট ফিরে পাই। দেশে ফিরে দীর্ঘদিন পর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক নেতাসহ সবার সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুবই আনন্দিত ছিলাম।’
আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী দল আখ্যা দিয়ে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তাদের লজ্জা বলতে কোনো জিনিস নেই। দেশের অর্থ লুণ্ঠন করে নিয়ে এসে বিদেশে বসে বিবৃতি দিচ্ছে। বিনা ভোটে মেয়র-এমপি নির্বাচিত হয়ে এরা মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা। ১৭ বছর স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার এ দেশের মানুষের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, আইনের শাসন ধ্বংস করেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। সামাজিক ন্যায়বিচার ধ্বংস করেছে। মানুষকে স্বাধীনভাবে মুখ খুলে কথা বলতে দেয়নি।
এম এ মালিক বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকায় গেলে সেখানে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জন্য আমি যাই। আগের রাতে জ্যাকসন হাইটসে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ মিছিল করি আমরা। সেখানে কিছুসংখ্যক আওয়ামী কর্মী আনন্দ মিছিল করে। আমাদের ধাওয়া খেয়ে পালাতে বাধ্য হয় হাসিনার নেতাকর্মীরা। অবস্থা খারাপ দেখে শেখ হাসিনার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান সেখানে আমাকে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। সেটি প্রাথমিকভাবে আমি প্রত্যাখ্যান করে বলি, আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) অসুস্থ। ওনার সুস্থতার জন্য বিদেশে আসা দরকার। উনি যদি নেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর ঘোষণা দেন, তাহলে আমরা ওনার সঙ্গে চা খেতে রাজি। কিন্তু হাসিনা তা করেননি। আমিও সিদ্ধান্ত নিই, যেখানে হাসিনা সেখানেই বিক্ষোভ। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের যেখানে হাসিনা গিয়েছিল, আমি মালিক সেখানে ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ফ্যাসিস্টরা যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আমরা তাদের কঠিন ও কঠোরভাবে প্রতিহত করব। তিনি আরও বলেন, বিগত ১৭ বছরে ১০০ কোটি ডলার পাচার করেছে আওয়ামী লীগ। হাসিনার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার সম্পদের তথ্য ফাঁস করেছে মিডিয়া। তার শুধু ব্রিটেনেই ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে। যেখানে সারা জীবন কষ্ট করে ব্রিটেনে আমাদের একটি বাড়ি করা কষ্টসাধ্য। এত এত দুর্নীতি করেও এরা কীভাবে গলার স্বর উঁচু রাখতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। তাদের অনুসারীরা বিদেশে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। একটা কথা স্পষ্ট এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই।’
মালিক আরও বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তবে তাদের দ্রুততার সঙ্গে সংস্কার করে একটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, যার মধ্যে সব দল অংশ নেবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, যেখানে জনগণ ভোট দিতে যাবে। জনগণ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :