শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

নেত্রীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে পারদর্শী ছিলেন নাছিম

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

নেত্রীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে পারদর্শী ছিলেন নাছিম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের বিশেষ সহকারী ও দাদার বোনের নাতি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এই নেতা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। কৃষিবিদ হিসেবে পরিচিত নাছিম গত দেড় দশকে ক্ষমতার শীর্ষে থেকে টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও দলীয় পদ বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে গাড়ি-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গোপনে বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে একাধিক প্রপার্টির মালিক হয়েছেন। নাছিমের বিদেশে ‘অফশো কোম্পানী’র বিনিয়োগ করা নিয়ে আ.লীগ আমল থেকেই আলোচনা ছিল। বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা এই নেতা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিচার বিভাগে প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি মামলার দণ্ডিত রায় থেকেও খালাস পান নাছিম। আত্মগোপনে থেকেও জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের অর্থ দিয়ে মদদ দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনার হয়ে বিশেষ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে পারদর্শী বাহাউদ্দিন নাছিম আ.লীগের শীর্ষ মহলে বেশ সমাদর পেতেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নেত্রীর নির্দেশমতো আ.লীগের ঘরের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। আ.লীগ ঘরানার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ এবং বিতরণে দায়িত্ব পালন করতেন নাছিম। শেখ পরিবারের আত্মীয় এই পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। গোপনে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের রোজগার করা বিপুল অর্থ অফশোর কোম্পানি বিনিয়োগ করেছেন।

কৃষিবিদ নাছিম আ.লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হওয়ায় জন্মলগ্ন থেকেই কেন্দ্রীয়-জেলা কমিটি পর্যন্ত পদ নিজের পছন্দমাফিক নেতাদের বসাতেন। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করতেন। মৌসুমি রাজনীতিবিদদের পুনর্বাসন করতেন তিনি। বিশেষ করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ দিতেন।

সূত্র মতে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও দুর্নীতবাজ আমলারা অবসরের পর নাছিমকে অর্থ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের পদে আশিন হতেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নাছিমের নির্দেশমতো সংগঠন পরিচালনা করতেন। এতে তারাও চেয়ার দখল রাখতে পারতেন এবং ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করতেন।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা মাদারীপুরের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের বাসভবন ও তার পারিবারিক মালিকানাধীন মাতৃভূমি হোটেল ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অন্যদিকে, নাছিমের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে সারা দেশে। এর মধ্যে গত ২৬ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাওহীদ সন্নামাত নিহত হওয়ার ঘটনায় বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অন্তত ৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনা এবং শাজাহান খানও আসামি। শাজাহান খান এই মামলাসহ অন্যান্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর পৌর শহরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাহউদ্দিন সন্নামাতের ছেলে তাওহীদ সন্নামাত যোগ দেয়। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয় তাওহিদ। পরে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এই বিষয় নিয়ে কথা বলতেও ভয় পেতেন তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবৈধ  সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুদকের মামলায় দণ্ডিত হলেও সেই রায় ২০১৭ সালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খালাস পান। ২০০৭ সালের ৯ জুলাই  সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বাহাউদ্দিন নাছিমের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে দুদক। বাহাউদ্দিন নাছিমের মা নোটিশটি গ্রহণ করেন। এরপর ১৭ জুলাই নাছিম তার মা নুর জাহান বেগমের মাধ্যমে দুদকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণী যাচাই করে বাহাউদ্দিন নাছিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এক কোটি ৮৩ লাখ এক হাজার ৬৪৬ টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৭ সালের ২১ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক বেনজীর আহম্মদ রমনা থানায় বাহাউদ্দিন নাছিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।

গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের আয়-দেনা বাড়ার সঙ্গে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের আয়ও বেড়েছে। ২০১৪ সালে তার বার্ষিক আয়ের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যবসা থেকে। কিন্তু ২০২৩ সালে ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় দেখানো হয়নি হলফনামায়।

বরং এবারের হিসাবে সর্বোচ্চ ৮৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে এফডিআরের সুদ থেকে। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে বাহাউদ্দিন নাছিম আয় করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কোম্পানি থেকে পারিতোষিক পান ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ডিভিডেন্ড থেকে তার বছরে ৫০ লাখ টাকা, বাসভাড়া বাবদ ৩৯ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ হিসেবে ৮ হাজার ৪৮৬ টাকা এবং কৃষি থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়।

অন্যদিকে নাছিমের ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে বছরে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৮৭ টাকা। দশ বছর আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ টাকা। অর্থাৎ আয় বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। বেড়েছে নগদ টাকা ও এফডিআর।

দশ বছরের ব্যবধানে এই রাজনীতিবিদের অস্থাবর সম্পদ বাড়ে ২০ কোটি টাকার বেশি। ২০১৪ সালের হলফনামার ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছিল নাছিমের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ দশ বছর আগের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। দশ বছর আগে বাহাউদ্দিন নাছিমের হাতে নগদ ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ আগে দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৫ টাকা। এবার তা বেড়ে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হয়েছে। দশ বছর আগে আওয়ামী লীগের এ প্রার্থীর হলফনামায় ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল ২.৪৭ একর কৃষিজমি, ১৪৯.১৭ শতাংশ অকৃষি জমি এবং উত্তরায় দালান।

বর্তমানে এ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরায় ৫ কাঠা জমিতে সাততলা ভবনের সঙ্গে উত্তরায় আরও দুটি বাড়ি এবং রাজধানীর কাফরুলে একটি ফ্ল্যাট যোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, ২৫ একরের বন জমি এবং ১ দশমিক ৮৮ একর নাল জমি। সব মিলে নাছিমের স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের টাকার পরিমাণ ২৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়ার পাশাপাশি ১০ বছরের ব্যবধানে নাছিমের দায় বেড়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সাবেক এই এমপি এবার মোট দায় দেখিয়েছেন ৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে মো. সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যবসায়িক ঋণ হিসেবে নিয়েছেন ২ কোটি টাকা এবং বিএনবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বকেয়া মূলধনের দায় ২ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে নাছিমের দায় ছিল ১ কোটি ২১ লাখ টাকার মতো। অতীতের বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা থাকলেও এখন সব মামলা থেকে তিনি মুক্ত বলে হলফনামায় জানিয়েছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হওয়া ৭টি মামলা থেকে দুটি খালাস, দুটি থেকে অব্যাহতি এবং একটি খারিজ হয়েছে।

গত ২১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা এক পোস্টে নাছিম বলেন, ভুল করে থাকলে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষেই আমরা যদি ভুল করে থাকি, অথবা অন্যায় করে থাকি, সেই অন্যায়ের জন্য জাতির কাছে ক্ষমতা চাইতে আমাদের কোনো আপত্তি অথবা আমরা ক্ষমা চাইব না ধরনের গোঁড়ামি আমাদের ভেতরে কাজ করে না। এ ধরনের দল, এই মানসিকতার দল আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করা ‘জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক ভিডিও পোস্টে নাছিমের এই বক্তব্য প্রচার করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!