ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৪

শেখ হাসিনার নামে চাঁদা তুলতেন নজরুল মজুমদার

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম

শেখ হাসিনার নামে চাঁদা তুলতেন নজরুল মজুমদার

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের স্বৈরশাসন আমলে নানা অপরাধে নাম জড়িয়েছে ব্যাংকিং খাতের মাফিয়া নজরুল ইসলাম মজুমদার। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নজরুল। ব্যাংক খাতে হাসিনার নামে চাঁদাবাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দেশে-বিদেশে গড়েছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড়। নজরুল পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান। প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তনে তার প্রভাব খাটিয়েছেন। যেন নীতিগুলো তার ব্যবসার পক্ষে যায়। নিজের মতো আইন বানিয়ে এক্সিম ব্যাংককে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেন। সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মিলেই ব্যাংক খ্যাতের হরিলুটের খবর ধামাচাপা দেন তিনি। নাসা গ্রুপের নামে আর্থিক খাত থেকে লুটপাট হাজার কোটির বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএবি চেয়ারম্যানের দুর্নীতি-কুকৃর্তির শেষ নেই।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক সভাপতি, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুল ইসলাম। বিকেলে রিমান্ড শুনানিতে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।  

ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সীমার অতিরিক্ত শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এই মজুমদার। সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১৩টি ব্যাংকে নাসা গ্রুপ ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ঋণ আছে। এর মধ্যে আটটি ব্যাংক থেকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে শত শত কোটি টাকা নগদে উত্তোলন করেছেন। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব কাজে নিজের মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংককে ব্যবহার করেছেন।

ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হলেও তা আড়াল করতে ভূমিকা রেখেছেন সালমান এফ রহমান ও নজরুল ইসলাম মজুমদার। তাদের ভূমিকার কারণেই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যাংক মালিক, ব্যাংকার ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর না হয়েও উল্টো বিভিন্ন সময়ে সিআরআর কমানো, এক পরিবার থেকে চার পরিচালক নিয়োগ, সহজ শর্তে ঋণ পুনঃতপশিল করাসহ নানা সুবিধা দিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়। এরপর তাকে এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০০৯ সাল থেকে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের ফোরাম বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ দখলে রাখেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নজরুল ইসলাম মজুমদার বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য এই পদকে ব্যবহার করেছেন। প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তনে তার প্রভাব খাটিয়েছেন। যেন নীতিগুলো তার ব্যবসার পক্ষে যায়। এছাড়া নিয়ম-কানুন পাশ কাটিয়ে তিনি ঋণও নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নজরুল ইসলাম মজুমদার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত ১৫ বছরে ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তুলে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ার কারণে তিনি আলোচনায় ছিলেন। জানা যায়, বিএবির সভাপতি পদকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা তুলে সব ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে সাবেক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চেক তুলে দিতেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশেই তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন। এ ছবি পরদিন বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশ হতো। অনেক ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানরা শেখ হাসিনার হাতে চেক তুলে দেওয়ার ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করে ব্যাংকে ও বাসায় সবার নজর কাড়ে এমন জায়গায় টানিয়ে রেখে নিজেদের ধন্য মনে করতেন। শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়ার কারণে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন আলোচিত এ ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে কিস্তি পরিশোধ ছাড়াই এসব ঋণ নবায়ন হয়ে যেত।

হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মজুমদার: শেখ হাসিনার পতনের কয়েক দিন আগেও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবি) সাবেক সভাপতি ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে নানা বিতর্কিত বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে।

আরবি/এস

Link copied!