শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম

যত হাইপ তত কাইত!

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম

যত হাইপ তত কাইত!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ক্রেতা আকর্ষণে বর্তমানে সহজ যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ফুড ব্লগার কিংবা ব্যবসায়ী- নিজেরাই নানা ধরনের কন্টেন্ট বানিয়ে সেগুলো ফেসবুকে দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন, তোলেন পণ্যের হাইপ। যে কোম্পানি যত বেশি হাইপ তুলতে পারে পণ্য বিক্রিতে সাধারণত এগিয়ে থাকেন তারাই। হাইপ তোলার এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরাও। চোখ ঝলসানো এই হাইপ প্রতিযোগিতায় পণ্যের বিক্রি বাড়লেও পকেট ফাঁকা হয় ভোক্তাদের। বছরে তিন থেকে চার মাস পর্যটকের ভিড়ে লোকে লোকারণ্য থাকে কক্সবাজার। আর সে সুযোগে ভোক্তাদের পকেট কাটেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা- এমন অভিযোগ বেড়াতে আসা পর্যটকদের।

পরিবারসহ কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়া এক পর্যটক এই প্রতিবেদককে জানান, যে রেস্টুরেন্ট যত বেশি হাইপ তুলতে পারে তারা পর্যটকদের ততবেশি কাইত করতে পারে। তিনি আরও বলেন, থ্রি থেকে ফাইভ স্টার, ফুটপাত থেকে শুরু করে স্টার ছাড়া রেস্টুরেন্ট- কারো সঙ্গে কারো মূল্যতালিকার কোথাও কোনো মিল নেই। যে যেভাবে পারছে ভোক্তাদের পকেট কাটছে- অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের এক বেলা খাবার খেতে কক্সবাজারে ব্যয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। একটি পরিবার যদি দুই দিন কক্সবাজার থাকে তাহলে শুধু চারবেলা ভাত ও নাস্তায় সে পরিবারের ব্যয় হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকারও ওপরে। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ভাতের সঙ্গে শসা, গাজর, পেঁয়াজ কেটে দিয়ে ভোক্তার পকেট থেকে ৩শ’ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শালিক রেস্টুরেন্ট। এক প্লেট সালাদের দাম তিনশ টাকা নেওয়াকে কীভাবে জায়েজ করবেন আপনি। এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি।

সম্প্রতি কক্সবাজারে গিয়ে এই প্রতিবেদক সরেজমিনে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খোঁজ-খবর নেন। সংগ্রহ করেন কয়েকটি রেস্টুরেন্টের খাদ্যপণ্যের মূল্যতালিকা। কোনো কোনো রেস্টুরেন্ট সামুদ্রিক কোরাল বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা। আবার কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে একই কোরালের দাম রাখছেন দুই থেকে আড়াইশ টাকা। কোনো কোনো রেস্টুরেন্ট সোনালি মুরগির মাংস (সমপরিমাণ) বিক্রি করছেন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ। আবার একই পরিমাণের মুরগির মাংস অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে বিক্রি করছে দুই থেকে আড়াইশ টাকা। দেশি মুরগিতে দামের ফারাক আরও বেশি।

শালিক রেস্টুরেন্টের মূল্য তালিকায় দেখা গেছে রিটা, সুরমা, টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। কোরাল ৪০০ থেকে ৬১০ টাকা। চিড়িং ও বাইম মাছ প্লেটপ্রতি ৩১৫ টাকা। ফার্ম মুরগির এক প্লেট পোলাও ২২০, দেশি চিকেন পোলাও ৩৮০, খাসির পোলাও ৫০০ আর গরুর গোস্তের পোলাও জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছে শালিক।

শালিক রেস্টুরেন্টের চেয়ে প্রতিটি পণ্যে একশ থেকে দেড়শ টাকা দাম কম রাখতে দেখা গেছে পোউসী ও আলগনি রেস্টুরেন্টের মূল্যতালিকায়। এই দুই রেস্টুরেন্টে সোনালি মুরগির মাংস ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দেশি মুরগি ৩০০। রূপ চাঁদা ৩৫০ থেকে ৪০০। কোরাল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। এই দুই রেস্টুরেন্টে চিকেন বিরিয়ানির দাম রাখা হয়েছে আড়াইশ থেকে ২৮০ আর কাচ্ছি বিরিয়ানি ৩৮০।

শুধু হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁতেই নয়, ভোক্তারা মূল্য বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন ফুটপাতে থাকা ফুড স্টলগুলোতেও। সৈকতের পাশে ফুটপাতে গড়ে ওঠা এসব স্ট্রিটফুডেও দামের নাগাল টানতে পারছে না প্রশাসন। যে যার মতো হাঁকাচ্ছেন মাছের বার্বিকিউর দাম। কয়েক কদম ব্যবধানে একই মাছ এবং একই সাইজের বার্বিকিউ বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। কেউ নিচ্ছে হাজার টাকা। কেউ আবার দেড় হাজার।

চাইলেও নিজের মতো করে দামাদামিও করতে পারেন না পর্যটকরা। দাম নিয়ে টানাটানি করলে পর্যটকের ওপর ক্ষেপে যান বিক্রেতারা। মারতে তেড়ে আসে আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সেজন্য অনেক দোকানেই দাম নিয়ে খুব বেশি দর কষাকষির সুযোগ পান না ভোক্তারা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার-সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসান আর মারুফ মূল্যভেদের বিষয়টি স্বীকার করলেও ভিন্ন ভিন্ন রেস্টুরেন্টে ভিন্ন ভিন্ন দাম নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা জাতীয় ভোক্তা অধিকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা জানি কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, কোন রেস্টুরেন্টে কোন পণ্যের মূল্য কত টাকা রাখবে সেটা নিতান্তই সে রেস্টুরেন্টের নিজস্ব বিষয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদারকে মুঠোফোনে কল করা হলে দাম হেরফেরের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, সব রেস্টুরেন্টের মূল্যতালিকা যদি এক হয় ভোক্তাদের উপকার হবে। তিনি আরও বলেন, শালিক রেস্টুরেন্টসহ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে দাম বেশি রাখার বিষয়টি নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। সংগঠনের সামনের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথাও জানান তিনি। পরপর দুই দিন কল করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ করেননি শালিক রেস্টুরেন্টের মালিক নাছির উদ্দিন।

রেস্টুরেন্টগুলোর মূল্যতালিকার পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, যে যেভাবে পারছে সেভাবেই দাম নিচ্ছে। এটা উচিত না। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটা পর্যটন এরিয়া সেহেতু সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করে মূল্যতালিকা নির্ধারণ হওয়া উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, রেস্টুরেন্টগুলোর খাদ্যপণ্যের মূল্য এক তালিকায় আনার চেষ্টা করছি। এলাকা ভেদে ৫-১০ টাকা ব্যবধান হতে পারে। এর চেয়ে বেশি নয়।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জানান, কক্সবাজার যেহেতু পর্যটন এলাকা সেহেতু জেলা প্রশাসনের মূল কাজ হওয়া উচিত পর্যটননির্ভর। জেলা প্রশাসক যদি শক্তভাবে বিষয়গুলো তদারকি করেন তাহলে কক্সবাজারে পর্যটক হয়রানি কমে যাবে। 
 

আরবি/জেআই

Link copied!