আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই ঢাকা মহানগরীতে শুরু হয়েছে নতুন করে দখলদারত্ব। অনেক জায়গায় হচ্ছে হাতবদল। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় একের পর এক দখলদারত্ব চলেছে। কোথাও প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট কিংবা গোডাউন, আবার কোথাও গড়ে উঠেছে টিনশেডের নতুন নতুন স্থাপনা। ডিএসসিসি এলাকার অন্তত ১৬টি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে অঞ্চল-১-এর ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড, অঞ্চল-২-এর ৫ নম্বর ওয়ার্ড, অঞ্চল-৩-এর ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড, অঞ্চল-৪-এর ৩৪, ৩৫, ৩৮, ৪২ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং অঞ্চল-৫-এর ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৮, ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড।
এই দখলদারত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, ডিএসসিসি প্রশাসক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের দখল হয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছেন। শিগ্্গিরই উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরু হবে। নতুন করে যত জায়গা দখল হয়েছে বা আগে থেকেই যেসব জায়গা দখলে ছিল, এই অভিযানে সব উদ্ধার করা হবে।
৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পুরান ঢাকায় কবি নজরুল কলেজের পাশে সিটি করপোরেশনের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান থাকায় সেটা সিটি করপোরেশন বছরখানেক আগে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এখানকার স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেই জায়গা আবার দখল করে রাতারাতি দোকান করেছেন। এক দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার না হতেই আবার দখল। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের দোকান পর্যন্ত দখল করে সেখানে নতুন করে বিএনপির পতাকা টানানো হয়েছে। তা ছাড়া আগে কলেজের যে জায়গাগুলো দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে, সেটার এখন কেবল হাতবদল হয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের খালি জায়গায় এখন নতুন টিনের ঘর হয়েছে।
৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহবুব হাসান বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের পাশে সড়কের ওপর টিনের ঘর তুলে দিয়েছে। কে করেছে, কারা করেছে কেউ বলছে না। জিজ্ঞেস করলে বলে, এসব নির্মাণে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া আছে। রাস্তার ওপর টিনের ঘর তোলার অনুমতি ঠিক কোন সিটি করপোরেশন দিয়েছে তা বোধগম্য নয়। পরে জানতে পারি, স্থানীয় যুবদলের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। তারা আবার অন্য লোকদের কাজ করার জন্য ভাড়া দিয়েছে। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাত্তার বলেন, রোড ডিভাইডার থেকে শুরু করে ফুলবাড়িয়া এলাকার যেসব খালি জায়গা আছে, এমনকি ফ্লাইওভারের নিচের খালি অংশে নতুন করে টিনের ঘর দিয়ে গোডাউন করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। অনেকে সিটি করপোরেশনের লোক পরিচয় দিয়ে এ কাজ করছেন, অথচ তারা পদধারী নেতা। যে যেভাবে পারছে দখল শুরু করেছে।
এসব থামাতে সিটি করপোরেশন বা কেউ বাধা দেওয়ার নেই। কেউ কিছু বলতে গেলেই তারা বলে, ‘আমরা এতদিন নির্যাতিত ছিলাম।’
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দখলদারত্বের বিরুদ্ধে আমাদের কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবু অনেকে এই দখলদারত্বের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছি, কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কারণ, ব্যক্তির কুকর্মের দায় কখনো সংগঠন নেবে না।
সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল ছাড়াও ডিএসসিসির অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের স্থানীয় কার্যালয় দখল করে বিএনপির পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। বংশাল, সূত্রাপুর, কোতয়ালীসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিকে, ফুলবাড়িয়া সিটি মার্কেট, নগর মার্কেট ও জাকের মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড দখল করে দোকানপাট নির্মাণের চেষ্টা করছেন স্থানীয় একদল প্রভাবশালী। তারা সরকারের পটপরিবর্তনের পরপরই এই তিন মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড দখল করে ইট দিয়ে দোকানের আদলে ঘেরাও দিয়ে রেখেছেন। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এই তিন মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড দখলের চেষ্টায় প্রথমবার সিটি করপোরেশনের বাধায় প্রভাবশালীদের উদ্দেশ্য পণ্ড হলেও আবার দখলের চেষ্টা চলমান আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাড়িয়া সিটি মার্কেটের একজন দোকানদার বলেন, ‘এত বড় একটা মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড থাকবে না, সেখানে দোকান উঠাবে, এটা কোনো কথা! তাহলে এই যে মার্কেটের ক্রেতা বা ব্যবসায়ী যারা আছেন, তারা তাদের গাড়ি কোথায় রাখবেন? সবচেয়ে বড় কথা, আন্ডারগ্রাউন্ডে দোকান তৈরির উদ্যোগ সিটি করপোরেশন নেয়নি। এখানকার বিএনপি নামধারী কিছু নেতাকর্মী জোরজবরদস্তি করে দোকান তৈরির চেষ্টা করছেন। আমরা সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা একবার এসে নতুন করে ওঠানো ইটের দেওয়াল ভেঙে দিয়ে গেছে। এখন আবার সেখানে নতুন করে দোকান নির্মাণের চেষ্টা চলছে।’
আপনার মতামত লিখুন :