ঢাকা শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

অতিরিক্ত ভারে ন্যূব্জ ডিএনসিসি

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১১:৫৫ এএম

অতিরিক্ত ভারে ন্যূব্জ ডিএনসিসি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অতিরিক্ত ও ভারপ্রাপ্তের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ফলে বলতে গেলে লাঠিতে ভর দিয়ে চলছে তাদের কাজকর্ম। আগস্টে পট পরিবর্তনের পর সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে করে সব সিটি করপোরেশনই মেয়র-শূন্য হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সরকার এতে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতো অনেক জায়গায়ই প্রশাসক স্থায়ী হয়নি। প্রশাসকদের আসা আর যাওয়ার মধ্যেই অতিবাহিত হয়েছে করপোরেশনগুলোর প্রাত্যহিকতা। সেই সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদই খালি রয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত অথবা ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে ছয় মাস ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড।

খোদ রাজধানীর ডিএনসিসিতেই খালি রয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রায় ২৬টি কারিগরি পদ। মাসের পর মাস সংস্থাটি ধুঁকে ধুঁকে চলছে অতিরিক্ত ও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। অথচ পদগুলো পূরণের বিন্দুমাত্র লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ আল মাসুদ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। একাধারে দুই পদ সামলাতে গিয়ে কোনো পদেই কাজকর্ম সুচারুরূপে চালানো যাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। তাছাড়া ওয়েবসাইট ঘেঁটে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা গেছে, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের পদটিতে স্থায়ী কেউ নেই। এস এম শফিকুর রহমান অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। আইন কর্মকর্তার দায়িত্বও চালানো হচ্ছে অতিরিক্ত দিয়ে। সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম সামাল দিচ্ছেন এই পদ। মোহাম্মদ মামুন-উল-ইসলাম পালন করছেন নিরীক্ষা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। ডা. মো. ফিরোজ আলম ও ডা. মাহমুদা আলী রয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে। রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সামলাচ্ছেন উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদ।

বিভিন্ন সার্কেলে কর কর্মকর্তার পদ খালি ১০টির মতো। এসব পদই চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ অহিদুজ্জামান, মাহবুব আলম, যুবরাজ দেবনাথ প্রমুখ। সিস্টেম এনালিস্ট পদটিও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে। এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন আবুল হাসনাত মো. নুরুজ্জামান খান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. কামরুল হাসান, ফজলে বারী, নুরুল আলম, মো. শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, খন্দকার এনামুল কবীর, মো. হারুন-অর-রশীদ, শফিকুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া প্রকৌশল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বেশ কয়েকটি পদও দীর্ঘদিন পূরণ করা হয়নি। একটিতে ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ ভারপ্রাপ্ত এবং অপরটিতে মো. ফরহাদ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সিভিল ও বর্জ্য সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর গুরুত্বপূর্ণ দুই পদ সামাল দিচ্ছেন। সার্বিক এই চিত্রে ডিএনসিসির কাজকর্মের শোচনীয় অবস্থা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, রীতিমতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজধানীর এই সেবাধর্মী সংস্থা।

২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন বিভাজিত হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যাত্রা শুরু। এর আয়তন প্রায় ১৯৬ দশমিক ৬২ বর্গ কিলোমিটার। সংস্থাটির এই দৈন্যদশা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে অসুবিধা বোধ করছি না। চালিয়ে নিচ্ছি।’
অন্যান্য অতিরিক্ত ও ভারপ্রাপ্ত পদ সম্পর্কে তিনি বলেন, সংস্থার নিয়মানুযায়ী চাকরির মেয়াদ ১২ বছর না হলে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। দেখা গেছে, তাদের অনেকেরই ১২ বছর পূর্ণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।

মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, গত দুই বছরে ডিএনসিসিতে ৫০০ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই আরও ভালো চাকরি পেয়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ছোট পদগুলো শিগগির পূরণ হবে। প্রায় ৩০০ লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাছাই চলছে। 
 

আরবি/জেআই

Link copied!