ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

২৫ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন চায় দলগুলো

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ১২:০১ এএম

২৫ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন চায় দলগুলো

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। পরদিন প্রেসসচিব শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনে। দ্ইুজনের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেড়েছে উত্তাপ।

এলডিপির একাংশের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০২৫ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন চায় গণতন্ত্রকামী দলগুলো। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনও হয়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২৫-এর শেষে কিংবা ২৬-এর শুরুতে নির্বাচন। তার ওপর মাতব্বরি করে তার প্রেসসচিব বলে দিল ২৬-এর জুনে নির্বাচন এটা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার প্রয়াস। এটা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত। দুইজনের দুই ধরনের বক্তব্যেকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। এই সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ তারা, প্রশাসনে ব্যর্থতা স্পষ্ট হচ্ছে।’

তারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাইলে মাঠে আন্দোলনে নামা ছাড়া আমাদের আর উপায় থাকবে না। আমরা মনে করছি, পর্দার আড়ালে অন্য কোনো পরিকল্পনা চলছে। উপদেষ্টাদের ইশারায় সমন্বয়করা দল করছে, সেটা তো দিনের মতো পরিষ্কার। দল যে কেউ করতেই পারে তবে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে কিংস পার্টি তৈরি করে দল করা অন্যায়। এটা গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। তারা দল গঠন করতে চাইলে পদত্যাগ করে দল গঠন করুক আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। ভোটের দাবি করলে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে হুমকিধমকি দিচ্ছে তারা। এত ক্ষমতা পায় কোথা থেকে তারা। এরই মধ্যে দল গঠন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের তাদের দলে ভেড়ানোর পাঁয়তারা করছে। একাধিক অনুষ্ঠানে তারা পতিত স্বৈরাচারের কাউন্সিলরদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে। এটা তো জুলাই অভ্যুথানের শহিদদের সঙ্গে বেঈমানি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট শীর্ষ নেতা লায়ন মো. ফারুক রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেসসচিবের দুই ধরনের বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমরা চাই দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এক ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা কোনটা বিশ্বাস করব? গত ১৫ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি, ফ্যাসিবাদ সরকার মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়েছিল। আমরা চাই মানুষের ভোটের অধিকার ফিরবে এমন একটা ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। মানুষ যাকে ভোট দেবে, তারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন করতে হবে বলে মনে হয় না। আমরা আশা করব অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। তবে এটা ঠিক নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র বাড়তেই থাকবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করতে যেতে লগি বৈঠার হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যর্থ করার প্রয়াসেই কিন্তু সেটা করেছিল। এ সরকারও সময় বেশি নিলে পরাজিত ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার পথ তৈরি হতে পারে। পরাজিত শক্তি আবার শক্তির সঞ্চার করুক, সেটা আশা করি তারাও চাইবে না। বৃহৎ কোনো ষড়যন্ত্র হওয়ার আগে নির্বাচন দিলে সবার জন্যই মঙ্গল। আমরা দেখছি, জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে ছাত্র সমন্বয়করা নতুন দল করতে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সবারই দল করার অধিকার আছে। তাতে আমরা বিচলিত নই। দেখতে হবে নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না। পতিত ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনা কিংবা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করতে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। জনগণ তাদের তখন রুখে দেবে।

আমরা দেখছি, সিটি করপোরেশন ও পৌর কাউন্সিলরদের নিয়ে অনুষ্ঠান করছে একটি মহল। ফ্যাসিবাদের পৃষ্টপোষকতা করলে তার পরিণতিও ভোগ করতে হবে তাদের।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে। আমরা মনে করি, আগামী আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারে সরকার। সরকারি যদি তাদের কাজের মধ্যে গতি আনে পুরোদমে। একটি সুন্দর নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে তারা বেরিয়ে যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেসসচিবের বক্তব্যের মধ্যে একটা ফাঁক আছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমরা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব, তারা যাতে কম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকলে তাদের ওপর ঝুঁকি বাড়বে। আমি মনে করি, তাদের এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচনী ডেটলাইন প্রকাশ করাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি আমরা। তবে সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করতে চাইলে, নির্বাচন করতে পারবে না তারা (অন্তর্বর্তী সরকার)। আমরা ফ্যাসিবাদ বিদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছি, আশা করি নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তারা চাপের অপেক্ষা করবে না মনে হয়। মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারবে আশা করি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন আদায়ের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন হবে বলে মনে করি না। আমার মনে হয়, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন দেবে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার)।’

আরবি/জেডআর

Link copied!