থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী। এরইমধ্যে নিয়মিত টহল ও তল্লাশিচৌকি বাড়ানোর পাশাপাশি র্যাব-পুলিশি তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কেউ উচ্চস্বরে গাড়ির হর্ন বাজালে ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি বা মোটরবাইক চালালে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাঠপর্যায়ে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে পুলিশের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর ব্রিফ করার কথা রয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের রাতে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া পরিচয়পত্র ছাড়া এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গুলশান, হাতিরঝিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে র্যাবের হেলিকপ্টার, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড টিম ও ক্রাইম সিন ভ্যান।
অন্যদিকে ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে মেট্রোরেল এলাকায় ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবছরই থার্টি ফার্স্ট নাইটে পুলিশের তরফ থেকে নগরীতে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি না করতে নির্দেশনা দিলেও আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। ফলে প্রতিবছরই ফানুসের আগুন আর আতশবাজির শব্দে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। দিবসটি উদযাপনে নিয়ম ভাঙার উৎসবে মাতে নগরবাসী। প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও মানে না বেশিরভাগ মানুষ। গত কয়েক বছর ডিএমপি কমিশনারের সাক্ষর করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে রাত ১২টা থেকে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস ওড়ানো ও মশাল মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো কিন্তু তাতেও থামিয়ে রাখা যায়নি উদযাপন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে রাজধানীতে অভিযান চলছে। কয়েকদিন ধরে বিপুল পরিমাণ আতশবাজি-পটকা জব্দ করা হয়েছে। ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো ব্যবসায়ী ফানুস-আতশবাজি বিক্রি করতে পারবে না। যদি কেউ বিক্রি করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কেউ ফানুস-আতশবাজি কেনেন এবং ওড়ানোর চেষ্টা করেন তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহল ও তল্লাশিচৌকি বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশি তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত বা খোলা কোনো স্থানে আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে পরিচয়পত্র ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে সাইবার প্যাট্রোলিং জোরদারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও মনিটরিং করা হচ্ছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে র্যাবের গোয়েন্দা ও আভিযানিক দল প্রস্তুত রয়েছে। সব ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্ম টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সাইবার নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে রাত্রিকালিন টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। অভিজাত এলাকা এবং ডিপ্লোম্যাটিক জোনেও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, র্যাবের টহল/চেকপোস্ট জোরদার করতে ডগ স্কোয়াড দ্বারাও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। নতুন বছর উদযাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকাসক্ততা প্রতিরোধকল্পে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড টিম ও ক্রাইম সিন ভ্যান স্টান্ডবাই থাকবে।
সাইবার পেট্রলিং-সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি: র্যাব জানায়, ভার্চুয়াল জগতে যেকোনো ধরনের গুজব, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে। যারা সাইবার জগতে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার মাধ্যমে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মেট্রোরেল এলাকায় ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ: ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে এমআরটি-৬ এর রুট অ্যালাইনমেন্ট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু না ওড়ানোর অনুরোধ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। গতকাল সোমবার ডিএমটিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল ইসলাম ভূইয়ার স্বাক্ষর করা বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ করা হয়।
এতে বলা হয়, এমআরটি-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক চলাচল অব্যাহত আছে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখ যাত্রী এই রুটে মেট্রোরেলের সেবা গ্রহণ করছেন। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে প্রতিদিন মেট্রোট্রেন চলাচল করে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু ওড়ানো হলে ওই বস্তু অথবা এর অবশিষ্টাংশ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বৈদ্যুতিক লাইনে জড়িয়ে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাসহ মূল্যবান প্রাণ ও সম্পদহানির আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এমআরটি-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রুট অ্যালাইনমেন্ট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় থার্টি-ফার্স্ট নাইট এবং ইংরেজি নতুন বছর ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু না ওড়ানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু ওড়ানোর ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনের আওতায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত ঢুকতে মানা: এদিকে আজ বিকেল ৫টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়ি প্রবেশ সীমিত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী দিন (১ জানুয়ারি, ২০২৫) সকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাবি প্রবেশপথগুলোতে (শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, পলাশী মোড় ও নীলক্ষেত) বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের অন্যান্য সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, জরুরি সেবা (অ্যাম্বুল্যান্স, ডাক্তার, রোগী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য সরকারি গাড়ি) ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় কোনো ধরনের আতশবাজি, ফানুস ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো যাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :