ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ঋণ পরিশোধ করেও ঋণগ্রস্ত পেট্রোবাংলা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

ঋণ পরিশোধ করেও ঋণগ্রস্ত পেট্রোবাংলা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১৩,২৭৮ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলাকে বিনা সুধে ঋণ দিবে অর্থ বিভাগ। এই ঋণ ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৫ বছরে পরিশোধের সুযোগ পেল পেট্রোবাংলা। এই ঋণের মাধ্যমে এনবিআরের দায় পরিশোধ হলেও  পেট্রোবাংলা দায় থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কারণ অর্থ বিভাগের এই ঋণ পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতেই হবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এই সংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।

চিঠি সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বকেয়া পরিশোধের জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫,০০০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলা থেকে অনুরোধ করা হয়। মূলত ২০০৯ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে বকেয়া ভ্যাট বাবদ ১৩,২৭৮ কোটি টাকা দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না করার জটিলতা তৈরি হয়। এই জটিলতা দূর করার জন্য বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জটিলতা নিরসনে ২০২৪ সালের গত ৪ জুন অর্থ বিভাগের অতিরিক্তি সচিব বাজেট ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স¤প্রতি অর্থ বিভাগ এই ঋণের অনুমোদন দিয়েছে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে ঋণ দিচ্ছে যা দিয়ে এনবিআরের দায় পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এই ঋণের দায় পেট্রোবাংলাকে বহন করতে হবে। যা অর্থ বিভাগকে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে যদি পেট্রোবাংলার আয় না বাড়ে তাহলে এই ঋণ পরিশোধেও জটিলতা দেখা দিবে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের দায় পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলা অর্থ বিভাগকে বহুবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু অর্থ বিভাগ বিষয়টি আমলে নেয়নি। কিন্তু গত অর্থবছর আইএমএফ এনবিআরের আয় বাড়ানোর জন্য জোড়ালো তাগাদা দিলে, এনবিআর অর্থ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। এনবিআরের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে ঋণ দিয়ে দায় মিটানোর উদ্যোগ নেয়।

জানা গেছে, পেট্রোবাংলার কাছে উত্তোলিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে এনবিআর বকেয়া ভ্যাট বাবদ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না হওয়ায় জটিলতা নিরসনে বকেয়া পরিশোধে এনবিআর ও পেট্রোবাংলার মধ্যে বেশ কয়েকবার সভা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তোলিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রাজস্বের ওই টাকা সুদ ছাড়া তিন অর্থবছরে পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগকে বিনা সুদে পেট্রোবাংলাকে ঋণ প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫,০০০ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫,০০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২৭৮ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে দেবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কিস্তি ৫,০০০ হাজার কোটি টাকা আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ হাজার কোটি টাকা পেট্রোবাংলাকে দেওয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে বাকি কিস্তি দেওয়া হবে।

অর্থ বিভাগের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের ২৩ জুন এক চিঠিতে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন কোম্পানিগুলোর জুলাই ২০০৯ থেকে জানুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত বকেয়া মূসক ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘ঋণ’ খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৫,০০০ কোটি টাকা পেট্রোবাংলার অনুক‚লে সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৩৫ বছরে পরিশোধের শর্তে প্রদান করা হয়েছে।

এ অবস্থায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বকেয়া পরিশোধের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলার অনুক‚লে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫,০০০ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বরাদ্দ না পেলে এই বকেয়া পরিশোধ করা কঠিন ছিল। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া এ মুহূর্তে পেট্রোবাংলার পক্ষে সম্ভব না। জদিও পেট্রোবাংলাও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা পায়।

এরমধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরেরও বকেয়া রয়েছে।

এর মধ্যে পেট্রোবাংলা ছাড়াও জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং এর বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের বকেয়া আরও ১৭ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বাবদ বিপিসির বকেয়া ছয় হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের বকেয়া দুই হাজার ২৮৪ কোটি টাকা, পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে বকেয়া দুই হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের বকেয়া এক হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বকেয়া এক হাজার ২৮ কোটি টাকা।

আরবি/জেডআর

Link copied!