অবশেষে দুদকের জালে ধরা পড়লেন বেবিচকের অধীন কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালক ইউনুস ভূঁইয়া। বারবার দুদকে তলবের পর পৌনে ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইউনুস ভূঁইয়া এবং তার দুই স্ত্রী মারুফা আক্তার ও মরিয়ম নেছার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৩ নভেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় আসামি সিভিল অ্যাভিয়েশন-২-এর কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইউনুস ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা বিবরণী দাখিল এবং ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী মারুফা আক্তারকে প্রধান আসামি ও মো. ইউনুস ভূঁইয়াকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। স্বামী ইউনুসের সহায়তায় অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধতাদানের চেষ্টা করেছেন মারুফা আক্তার। মামলায় তার (মারুফা) নিজ নামে ৩ লাখ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা বিবরণী দাখিল এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ মোট ৬৫ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিকানা প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
তৃতীয় মামলায় মো. ইউনুস ভূঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম নেছাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, স্ত্রী মরিয়ম অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদকে বৈধতাদানের অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ মোট ৫৭ লাখ ৬১ হাজার ১৮১ টাকার সম্পত্তির মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করে ভোগদখলে রেখেছেন।
তিনটি মামলায়ই আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমে ‘২ স্ত্রীসহ প্রকৌশলী ইউনুস ভূঁইয়াকে দুদকে তলব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আরেকটি রিপোর্টে তার ৬ তলা বাড়ির ছবিটিও ছাপা হয়। এরপরও তাকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্পের পিডি করা হয়। এর আগে তিনি সিডি-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। বেবিচকে তিনি কুমিল্লা সমিতি গড়ে তোলেন। বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হারুনর রশিদ ভূঁইয়াকে ওই সমিতির সভাপতি করা হয়, ইউনুস ভূঁইয়া বনে যান সম্পাদক।
প্রকৌশলী ইউনুস ভূঁইয়ার বাবা ছিলেন বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চৌধুরীর অফিস স্টাফ। ছেলে লেখাপড়া করে পলিটেকনিক থেকে সিভিলে ইঞ্জিনিয়ার হন। বাবার সুপারিশে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চৌধুরী পিয়নের ছেলে ইউনুস ভূঁইয়াকে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরি দেন। সেই থেকে ইউনুস ভূঁইয়াকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। শেষ পর্যন্ত ইউনুস ভূঁইয়া দুদকের ৩ মামলার আসামি হয়ে গেলেন। দুর্নীতির ফসল তার রাজধানীতে ৬ তলা বাড়িসহ একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট।
প্রকৌশলী ইউনুস ভূঁইয়া তার দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হওয়ার জন্য কয়েকজন রিপোর্টারকে ম্যানেজ করে তার প্রকল্প নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন করান। দুটি জাতীয় দৈনিকে তা ছাপা হয়। এবং ওই রিপোর্টারদের কয়েক কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের ইস্টিমেট দেন। জানা গেছে, ওই ঠিকাদারি কাজ চলমান।
সম্প্রতি বেবিচক চেয়ারম্যান কক্সবাজার বিমানবন্দর পরিদর্শনে গেলে ইউনুস ভূঁইয়াকে মহড়া দিতে দেখা যায়। ফটোসেশন দেখে মনে হয় তিনিই হর্তাকর্তা। তিনি অনেক সময় তার সিনিয়রদের কথা শোনতেন না, সরাসরি ঠিকাদারদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে সিন্ডিকেড গড়ে তুলতেন।
আতিক নামের একজন ঠিকাদার তার খুব কাছের লোক। ওই আতিক আবার সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। শোনা যায়, বরিশাল বিমানবন্দর আতিকের নিয়ন্ত্রণে।
অন্য কোনো ঠিকাদার এখানে কাজ করতে পারেন না বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন। বেবিচক থেকে শুধু বরিশাল বিমানবন্দরে আতিকের ফার্মকে প্রতি অর্থবছরে ১৫-২০টি কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়ে থাকে।
দুদকে মামলার পর বেবিচক ইউনুস ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে- এটিই এখন দেখার বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন :