সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

আর-২২ গ্যাস চক্র বছরে লুট ২ হাজার কোটি

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১২:২৬ এএম

আর-২২ গ্যাস চক্র বছরে লুট ২ হাজার কোটি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আর-২২ গ্যাস আমদানিকারক একটি চক্র বছরের পর বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। রেফ্রিজারেন্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সর্বাধিক ব্যবহৃত এ গ্যাস-সংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত না হয়েও একেকজন তিন-চারটি করে লাইসেন্স গ্রহণ করেছে। আমদানিকৃত গ্যাস পরিকল্পিতভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই চক্র। তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয় এসব গ্যাস।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুসারে নির্দিষ্ট ৫১টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। সুবিধাবাদী কিছু অসৎ ব্যবসায়ী গত আওয়ামী সরকারের আশ্রয়-প্রশয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওই নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখে। তারা একেকজনের নামে একাধিক লাইসেন্স নেয়। এরই মধ্যে রয়েছেন আরিফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। একই ব্যক্তির দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে দুটি লাইসেন্স রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এ রকম এক ব্যক্তির একাধিক লাইসেন্স রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ব্রামা) মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিতে সহযোগিতা করেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিতভাবে নীতিমালা সংস্কারের আবেদন করেছে বাংলাদেশ আরএসি মালিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএসি)। এতে গ্যাসের আমদানি ও বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈষম্য, অসঙ্গতি উল্লেখ করা হয়েছে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৫১ জন লাইসেন্সধারী বাজারে আর-২২ গ্যাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার থেকে প্রতিবছর ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চক্রটি আস্বাভাবিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা ৪০ (অসাধু মুনাফা) এবং ৪৫ (প্রতারণা) লঙ্ঘন করেছে। আর-২২ গ্যাসের সিলিন্ডারের আমদানি মূল্য ৭ হাজার ৫০ টাকা হলেও গড় বাজার মূল্য ২৫ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

সিন্ডিকেটের এসব লাইসেন্স বাতিল করে সঠিক পন্থায় নতুন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আর-২২ গ্যাস ওজোন স্তরের জন্য ক্ষতিকর হলেও বিকল্প গ্যাস ব্যবহারে মেশিনের স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৬ (পরিবেশগত ছাড়পত্র) এবং ধারা-৭ (নিয়ন্ত্রণ) অনুসারে পরিবেশদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আর-২২ গ্যাসের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এই আইনের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি বলে বিআরএসি নেতারা মনে করেন।

অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়ে তারা আবেদনে উল্লেখ করেছেন, যেসব ব্যবসায়ীর একাধিক লাইসেন্স রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যোগ্য ও সৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন লাইসেন্স বিতরণ করে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে আর-২২ গ্যাসের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। বাজারে কৃত্রিম সংকট এবং অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি রোধে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করারও অনুরোধ করেন।

৫১টি লাইসেন্সধারীর কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং আর-২২ গ্যাসের লাইসেন্স ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে লিখিত আবেদনে অনুরোধ জানান বিআরএসি নেতারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আরএসি মালিক শ্রমিক কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোজাম্মেল জানান, আর-২২ গ্যাসের একটি সিলিন্ডারের আমদানি মূল্য ৭ হাজার ৫০ টাকা হলেও সিন্ডিকেট করে গড়ে ২৫ হাজার ৩০০ করে বিক্রি করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের এসব লাইসেন্স বাতিল করে সঠিক পন্থায় নতুন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিতে হবে। পাশাপাশি আর-২২ গ্যাসের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো চালুর দাবি জানান তিনি।

মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিতে সহযোগিতা করেছে ব্রামা। এমন অভিযোগ অসত্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রামা) সভাপতি আসাদুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘লাইসেন্স দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। যারা এ ধরনের অসত্য তথ্য দিচ্ছে, তাদের জানার অনেক ঘাটতি রয়েছে।’

আরবি/জেডআর

Link copied!