র্যান্সামওয়্যারের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাইবার আক্রমণের হার কমেছে। বাংলাদেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ ধরনের মাধ্যমে সাইবার হামলার শিকার কম হচ্ছেন।
রাশিয়াভিত্তিক অ্যান্টিভাইরাস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি’র ‘সিকিউরিটি বুলেটিন-২০২৪’ এ তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ এর বুলেটিনে র্যান্সামওয়্যারের আক্রমণ বিবেচনায় বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টিকে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা ও সতর্করতার ফল হিসেবে দেখছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
র্যান্সামওয়্যার আক্রমণের মাধ্যমে কোনো কম্পিউটার সিস্টেমের উপাত্ত নিজেদের দখলে নিয়ে নেন সাইবার অপরাধীরা। উপাত্তগুলো ব্যবহারকারী ‘রিড’ বা ‘এক্সেস’ করতে পারেন না। এগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন অপরাধীরা। বিষয়টি মুক্তিপণ গ্রহণের পর কাউকে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দেওয়ার মতো।
গত ৪ ডিসেম্বর সিকিউরিটি বুলেটিং-২০২৪ প্রকাশ করে ক্যাসপারস্কি। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে বিশ্বজুড়ে ক্যাসপারস্কি ব্যবহারকারীদের থেকে প্রাপ্ত উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়। এই প্রতিবেদনে শুধু ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের বিবেচনায় রাখা হয়েছে। মোবাইল তথা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের উপাত্তের ভিত্তিতে পৃথক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে ক্যাসপারস্কি। ক্যাসপারস্কির এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে ১৬ হাজারের বেশি প্রকারভেদে র্যান্সামওয়্যার আক্রমণ করা হয়। ৩ লাখ ৩ হাজার ২৯৮ জন ব্যবহারকারী র্যান্সামওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এদের মাঝে ৯৮ হাজার ২০৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ১৪ হাজার ৫১৭টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাকিরা একক কম্পিউটার ব্যবহারকারী।
র্যান্সামওয়্যার আক্রমণের শীর্ষে রয়েছে ইয়েমেন। দেশটির ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারী এ ধরনের সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষ পাঁচের বাকি রাষ্ট্রগুলো হলো আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং পাকিস্তান। তালিকার অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাত্র ১ দশমিক ২২ শতাংশ ব্যবহারকারী র্যান্সামওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ অর্থ্যাৎ বিগত অন্তত তিন বছরে র্যান্সামওয়্যার আক্রমণের শিকার হওয়া দেশগুলোর মাঝে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। অনলাইনে ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হওয়া দেশগুলোর তালিকায় ১৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালেও এই ক্যাটাগরিতে ১১তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি লোকাশ ইনফেকশন ক্যাটগরিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। লোকাল ইনফেকশন বলতে ইন্টারনেট নয় বরং পেন ড্রাইভের মতো ডিভাইস অথবা অফলাইনের মাধ্যমে ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হওয়াকে বোঝানো হয়। বিগত বছরগুলোতে এই তালিকায়ও উপরের দিকে ছিল বাংলাদেশ।
এদিকে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রকাশিত ‘গ্লোবাল সাইবার ইনডেক্স-২০২৪’ এও সাইবার নিরাপত্তার বিবেচনায় সর্বোচ্চ শক্তিশালী অবস্থান ‘টিয়ার-৫’ এ স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের এমন উন্নতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাইবার-৭১ এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা র্যান্সামওয়্যার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। অতীতে আক্রমণের শিকার হয়ে সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা সচেতন ও সতর্ক হচ্ছে। আগে তারা ক্র্যাক ও পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করত যার হার কমে আসছে। এ জন্যই র্যান্সামওয়্যার আক্রমণে কম আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে সাইবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সাইবার সচেতনায় ক্যাম্পেইন করতে হবে। তাহলে মানুষ আরও সচেতন হবে এবং ক্ষতি কমবে। তবে আগামীতে ‘এডওয়্যার’ এবং ‘ইনজেক্টিং ম্যালওয়্যার’ আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন জাবের।
বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে জাবের বলেন, অনেক সময়েই আমরা সফটওয়্যার আপডেট করি না। এর ফলে সফটওয়্যারের দুর্বল দিক লক্ষ্য করে আক্রমণ করে সাইবার অপরাধীরা ‘এডওয়্যার’ বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে দেয়। ফলে ডিভাইসে অনাকাক্সিক্ষত বিজ্ঞাপন দেখবেন। আপনার অজান্তেই কোনো একটি সেবার সাবস্ক্রিপশন ক্রয় করবেন আর সেই অর্থ পৌঁছাবে অপরাধীদের কাছে। আগামীতে এ ধরনের হামলার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :