ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

জামায়াত নয়, রাজকারের দল আওয়ামী লীগ

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ১১:২৯ পিএম

জামায়াত নয়, রাজকারের দল আওয়ামী লীগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাষ্ট্র মেরামতে সংস্কার হতে হবে, সেটা নির্বাচনের আগে কিংবা পরে। জাতি বারবার পথ হারাতে চায় না। এই সরকার যেহেতু দলনিরপেক্ষ, কাজেই আমরা আশা করতেই পারি, তাদের নিজস্ব কোনো অ্যাজেন্ডা থাকবে না। জাতির প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবেল রহমান।

রূপালী বাংলাদেশ : আপনাকে শুভেচ্ছা, কেমন আছেন?

ডা. শফিকুর রহমান : আপনাকেও শুভেচ্ছা, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

রূপালী বাংলাদেশ : বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, আপনারা কী চান? তারা আশঙ্কা করছে, অন্তর্বর্তী সরকার লম্বা সময় নিলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে পারে।

ডা. শফিকুর রহমান : আমরা দ্রুতও বলব না, স্লথও বলব না। আমরা বলব যে উপযুক্ত সময়ে একটা নির্বাচন হোক। আর আওয়ামী লীগ ফিরে আসার ব্যাপারে ওনাদের (বিএনপির) অবস্থান আরও স্পষ্ট করা উচিত। কারণ তারাই তো বলছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে এলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আবার আওয়ামী লীগ ফিরে আসার আশঙ্কাও করবেন। দুই রকম কথা হয়ে যাচ্ছে। একটা দিক পরিষ্কার করতে হবে তাদের। আশা করি, তাদের বক্তব্যের মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা নেই। হয়তো প্রেক্ষাপট একেক সময় একেক রকম হয়, তাই ভিন্ন বক্তব্য দেন।

রূপালী বাংলাদেশ : আওয়ামী লীগ শেষ সময়ে এসে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে, আপনারা তাদের নিষিদ্ধের দাবি তুলবেন কি না?

ডা. শফিকুর রহমান : আওয়ামী লীগ শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে বিষয়টা এমন নয়, তাদের নিষিদ্ধের ইতিহাস বহু পুরোনো। আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে ’৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে, ’৭৫ সালের ৫ জুন একদলীয় বাকশাল যখন গঠন করে, সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলল। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগসহ সব দলকে নিষিদ্ধ করে দিল। সেই দলের মাধ্যমে আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে যে দলকে ভোট দিয়ে ভোটের স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে একটা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হলো, সেটাও নিষিদ্ধ করে দিল। তা ছাড়া ’৭২ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পরে শুধু জামায়াতে ইসলামীকে না, সমস্ত ইসলামি দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। ’৭২ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের অন্যদের রাজনীতি নিষিদ্ধের যাত্রা শুরু। গণঅভ্যুত্থান যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে, এটাকে আর সামাল দেওয়ার কোনো শক্তি তাদের নাই, তখন তারা ইস্যুটাই ডাইভার্ড করার শেষ চেষ্টা করেছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে। এই চালাকি জনগণ ধরে ফেলেছে। এ জন্য এটা কেউ কবুল করে নাই। জনগণ কবুল করে নাই, দেশের কেউ কবুল করে নাই। আমরা তাদের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ থাকলেও পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ৫ তারিখে কিন্তু রাষ্ট্রের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে আমাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আমরা তো দরখাস্ত করে যাইনি, আমাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কারণ সবাই বিশ্বাস করেছে যে এটা ছিল জামায়াতের ওপর শেষ জুলুম। সেই আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ হবে কি হবে না, জনগণ দেখেন কী বলে। আমরা জনগণের চেতনার বাইরে যেতে রাজি না। জনগণ যদি চায়, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে। জনগণ যদি মনে করে যে এরকম হত্যাকারী একটা দল রাজনীতি করবে না, তবে করবে না। এখনো বলতে গেলে শহিদদের রক্ত ভাসছে। আর পঙ্গুরা এখনো কাতরাচ্ছে। সেই সময় যদি জনগণ মনে করে যে তারা রাজনীতি করবে, তবে করবে। জনগণ যদি মনে করে তারা নিষিদ্ধ হবে, ছেড়ে দিই আমরা জনগণের কাছে।  

রূপালী বাংলাদেশ : নিষিদ্ধ কি সমাধান?

ডা. শফিকুর রহমান : দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো সমাধান নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ-সিদ্ধ কোনোটাই সমাধান না। ধরেন, ৫ আগস্টের আগে এবং পরে গুণগত পরিবর্তন আমরা কতটা অর্জন করতে পেরেছি? সেটা দেশের বিবেকবান মানুষ নিশ্চই প্রত্যক্ষ করছে। জনগণ তার হিসাব নেবে, এটা ছেড়ে দেবে না। যে জনগণ রক্তমূল্যের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেতে চেয়েছে, তাদের বাঁচার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা, তাদের সম্মানের স্বাধীনতা। বৈষম্যহীন একটি সমাজব্যবস্থার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আমাদের তো তারা ছেড়ে দেবে না। তবে আমরা সবচেয়ে বড় নির্যাতিত দল। ৫ আগস্টের পর আমাদের লোকেরা যাতে কোনো অপরাধে না জড়ায়, সেই বার্তা দিয়েছি। বাংলাদেশের কোনো জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা হয়রানি করা, মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করার এ পর্যন্ত কোনো খবর নাই। আমাদের কাছে নাই, মিডিয়ার কাছেও নাই, এ জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি। আমাদের সহকর্মীরা আমাদের মেসেজ বুঝতে পেরেছে। তারা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ : জমায়াতের সঙ্গে বিএনপির বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। এখন আপনাদের সম্পর্ক কোন জায়গায়?

ডা. শফিকুর রহমান : জোট নেই, সেটা তো আপনারা জানেন। ২০২২ সালের পর আর আমরা জোটে নাই, জোট ভেঙে গেছে। তারপর বিএনপি একটা পর্যায়ে জানিয়ে দিল তারা এই জোট আর সচল রাতে আগ্রহী না। সবাই আমরা নিজস্ব অবস্থানে আছি, তবে জাতীয় স্বার্থে আমরা যুগোপৎ আন্দোলন করেছি। এটা ’২৪-এর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আমাদের যুগোপৎ কর্মসূচি ছিল। যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বোচ্চ সমর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলন করেছি। আর কোনো আন্দোলন একসঙ্গে করার প্রয়োজন হয়নি। কার্যত সাড়ে ১৫ বছর আগে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, সেই আন্দোলন এসে পরিণতি পেয়েছে আগস্টের ৫ তারিখে।

রূপালী বাংলাদেশ : বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বেড়েছে কি না?

ডা. শফিকুর রহমান : আমরা আলাদা অবস্থানে যার যার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আমাদের বড় কর্মসূচিতে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আসছে আবার বিএনপির কর্মসূচিতেও আমরা যাচ্ছি। যদি আমাদের ফাটল থাকত, তাহলে তারা কেন আসবে আর আমরাই কেন যাব তাদের অনুষ্ঠানে? যারা ফাটল খুঁজছেন তারা বলতে পারবেন। আমরা আমাদের জায়গায় ঠিকই আছি।

রূপালী বাংলাদেশ : বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে জামায়াত নির্বাচন করবে, নাকি আলাদা দলীয় প্রতীকে করবে? 

ডা. শফিকুর রহমান : নির্বাচনের সমীকরণ বহুমাত্রিক। এটা ভিন্ন রসায়ন। আমাদের সব প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আছে, জোটবদ্ধভাবে, জোট ছাড়া। অভিজ্ঞতা ভালো হোক মন্দ হোক, সব ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। জাতীয় আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা রাজনীতিতে একটি কথা বলিÑ দলের চেয়ে দেশ বড় এই দেশকেই বড় করে দেখতে হবে, জাতিকে বড় করে দেখতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ : বিএনপি বড় দল, তারা সরকারে গেলে জামায়াত কি বিরোধী দলে যাবে?

ডা. শফিকুর রহমান : একটি সাইকেলের দুটি টায়ার। সামনের টায়ার, পেছনের টায়ার। দুটো টায়ারে একটি সাইকেল চলে। এক টায়ারে কোনো যন্ত্রযান চলে না। দুটি টায়ার লাগবে, একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত। একটা দল থাকবে সরকাওে, একটা দল থাকবে বিরোধী দলে। বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের ভালো কাজকে সমর্থন দেওয়া এবং সরকার যদি কোনো ভুল কওে, তবে সেই কাজের পরামর্শ দেওয়া, ভুল থেকে ফিরিয়ে আনা। আমাদের দেশে আনফরচুনেটলি এটা হয় না। আমাদের দেশে শুধু ভালো হলে ভালো আর মন্দ হলে মন্দের গীত গায়। আমাদের কিছু কিছু সংসদ সদস্য আছেন, তাদের এলাকার মানুষ নির্বাচন ছাড়া কখনো এলাকায় দেখে না। তারা রাজনীতিতে থাকেন না, হঠাৎ করে নির্বাচনে এসে জনপ্রতিনিধি হয়ে যান। সেই সংসদ সদস্য জনগণের পালস বোঝেন না। আবার এমনও সংসদ সদস্য আছেন, যারা সংসদে গিয়ে কথা বলতেও সমস্যায় পড়ে যান। মেয়েদের লিখে দেওয়া ড্রাফটাও পড়তে পারেন না। আমাদের কোয়ালিটির সংসদ হয় না বলেই এটা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ : সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে জামায়াতের লোকজন বসানো হচ্ছে, এমন একটা অভিযোগ রয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান : আপনি কি এরকম একটা তালিকা আমাকে দিতে পারবেন? মাঝে মাঝে এমন কথা শুনে হাসি। বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। একজন বলল, এই সরকার আপনাকে ফেভার করে। আমি বললাম, ইয়েস, এই সরকার জনগণের সরকার, সে ক্ষেত্রে আমাদেরও সরকার। ২১ জন উপদেষ্টা আছেন, একজন জামায়াতের দেখাতে পারবেন? একজন সমর্থক তার নাম কি বলতে পারবেন? এ ধরনের প্রপাগান্ডা সরকারকে চাপে রাখার জন্য, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। তবে অতীতে যদি কেউ বঞ্চনার-লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকে, তার যদি যোগ্যতা থাকে, সে যদি আসে, তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। সে কোন দলের সেটা দেখার কথা না। তার যোগ্যতা আছে, এটা তার পাওনা।

রূপালী বাংলাদেশ : সরকার কিংবা বিরোধী দলে গেলে দুর্নীতি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না?

ডা. শফিকুর রহমান : আওয়ামী লীগের আমলে দুর্বৃত্তায়ন ছিল। বৈষ্যম্যহীন সমাজ চাইলে দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। আপনি যদি মনে করেন দুর্নীতি বন্ধ করবেন, তবে আগে আপনার দলের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রথমে প্রতিজ্ঞা করতে হবে আমি কোনো দুর্নীতি করব না, আমি কোনো চাঁদাবাজি করব না, মানুষের ওপর জোর-জুলুম করব না, দখলদারি করব না। আমরা কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির পক্ষে নই।

রূপালী বাংলাদেশ : জামায়াতের কারণে অন্য ধর্মের লোকের আতঙ্কে থাকে, কারণ কী?

ডা. শফিকুর রহমান : কোনো ধর্মের মধ্যে বৈষম্য আমরা চাই না। আমাদের মসজিদ যদি পাহারা দেওয়া না লাগে, তবে অন্যদের মন্দির কেন পাহারা দিতে হবে? তারা তো এ দেশের নাগরিক। তারা তো সমান অধিকার ভোগ করতে চায়। তাদের কেন আতঙ্কে ভুগতে হবে? এবং তার জন্য হাস্যকরভাবে আমাদের দায়ী করা হয়। আমাদের কোনো নেতা বাংলাদেশের কোনো জায়গায় এক ইঞ্চি জায়গা দখল করে নাই অন্য ধর্মের মানুষের। এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারলে তার বিচার কোনো আদালতে করা লাগবে না, সাংগঠনিকভাবে জামায়াত করবে।

রূপালী বাংলাদেশ : অমুসলিমদের সদস্য করা হচ্ছে জামায়াতে। বিষয়টা হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। ভয়ও ছড়িয়েছে অন্য ধর্মে।

ডা. শফিকুর রহমান : এটা পুরোনো বিষয়। আমাদের দলে অনেক লোক আছে অন্য ধর্মের। হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সবাই আছে। লক্ষাধিক অমুসলিম আছে জামায়াত করে। আমরা কোনো ডিসক্রিমিনেশন করি না। তাদের আমরা ইমান কবুল করার দাওয়াত দিচ্ছি না। তাদের আমরা আমাদের চতুর্থ দফার কর্মসূচিতে সংযুক্ত করি, যেটা দিয়ে দেশ ও সমাজ চলে। বাকি যেসব দল আছে, তাদের একটাই কর্মসূচি, সেটা রাজনৈতিক। আমাদের তো তিনটা কর্মসূচি। আমাদের যে চতুর্থ দফা কর্মসূচি আছে, সেটা করে অমুসলিমরা। যারা মনে করে জামায়াতের সঙ্গে কাজ করলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা যাবে, তারাই আমাদের সঙ্গে কাজ করে। যে যার ধর্ম পালন করবে, কোনো ধর্ম পালনে আমরা চাই না ব্যত্যয় ঘটুক।

রূপালী বাংলাদেশ : জামায়াতকে রাজাকার বলা হয়, এই দায় এড়াবেন কীভাবে?

ডা. শফিকুর রহমান : জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না। আপনি বলতে পারেন, জামায়াতের লোক কি তখন কোনো অপরাধ করেনি? আমাদের তো রাজাকার বলে অনেকে। রাজাকারের একটা তালিকা তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সরকার বৈধ হোক অবৈধ হোক, তাদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাজাকারের একটা তালিকা করেছিলেন। সেখানে প্রকাশ পেল মাত্র ৩৪ জন জামায়াতের, আওয়ামী লীগের ৮ হাজারের বেশি রাজাকার। ১২ হাজার রাজাকারের তালিকায় ৮ হাজার আওয়ামী লীগের। বাকিরা অন্যান্য দলের আর জামায়াতের ৩৪ জন। এবার বলেন, কারা রাজাকারের দল। এটা হাস্যকর একটা অভিযোগ। রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি করার জন্য আওয়ামী লীগ আমাদের রাজাকার বলত। জামায়াত তখন (১৯৭১) এত বড় দলও নয়।

রূপালী বাংলাদেশ : মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল?

ডা. শফিকুর রহমান : ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কারণ সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরা পূর্ব পাকিস্তানের লোকের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। ভোটের মেজরিটি হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিচ্ছিল না, তখন যুদ্ধটা অনিবার্য ছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধে আপনারা সমর্থন দিলেন না কেন, প্রশ্ন জাগতে পারে। আপনারা শরিক হলেন না কেন এমন প্রশ্ন আসতে পারে। জামায়াত প্রথম থেকেই দাবি জানিয়েছিল, বাইতুল মোকাররম থেকে গোলাম আযম সাহেব মিছিল করেছিলেন নির্বাচিত দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। না হলে পাকিস্তান ক্ষতির দিকে ধাবিত হবে। পাকিস্তান সেই কথা শোনে নাই। বলতে পারেন, আপনারা কেন তাদের সহযোগিতা করেননি? কী করার ছিল আমাদের সেই সময়? কোনো ধর্মীয় দল ভারতে যায় নাই, যেতে পারে নাই। পরিবেশটা সেই রকম ছিল না। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী গিয়েছিলেন, কিন্তু শুধু তার নামের আগে একটা মওলানা আছে, তার দল কোনো ধর্মীয় দল নয়, তিনি বামপন্থি দল করতেন। তাকে থাকতে দেন এই ভারত। তিন দিন পর তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশের চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন প্রাণের ভয়ে। সেখানে কি আমাদের কোনো সুযোগ ছিল? আমরা দেশের ভেতরে ছিলাম, দেশের ভেতর শাসনটা কার ছিল? সামরিক শাসন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন কার্যত দেশ চালিয়েছিল। দেশটা ছিল তখন পূর্ব পাকিস্তান। সে হিসাবে আমরা একটা কথাই বলেছিলাম, আশঙ্কার একটা জায়গা ছিল, ভারত আমাদের দেশের লোকদের আশ্রয় দিয়েছে, ট্রেনিং দিয়েছে, তারা যুদ্ধের সব সহযোগিতা করেছে। তখন আমরা বলেছিলাম, ভারতের সহযোগিতা নিয়ে যদি আমরা এভাবে স্বাধীন হই, তাহলে স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের জনগণের ঘরে আসবে না। ৫৩ বছরের বছরের ইতিহাস কী বলে? আমাদের একটাই আশঙ্কার জায়গা ছিল, এই আশঙ্কার জায়গা থেকেই আমরা সরাসরি পারলাম না। ভারতে যাওয়ার আমাদের কোনো সুযোগ ছিল না। দেশের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ কারা করেছিলেন? শুধু কাদেরিয়া বাহিনী। তারা দেশের ভেতর থেকে যুদ্ধ করেছে। জামায়াত কোনো আঞ্চলিক সংগঠন ছিল না, সারা দেশের ভেতরে আমরা ছড়িয়ে ছিলাম। অঞ্চলভিত্তিক যুদ্ধ করাও সে কারণে জামায়াতের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। আমি তখন মানুষের ছোট আর এই সংগঠনের সাথেও ছিলাম না, সে বিষয়টা ভালো বলতেও পারব না। 

রূপালী বাংলাদেশ : আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. শফিকুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরবি/জেডআর

Link copied!