সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করার বিধানসহ কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের যে বিধান আওয়ামী লীগ করেছিল, তা বাতিল হয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবার ফিরছে। এ ছাড়া সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী আনতে গণভোটের বিধান পুনরুজ্জীবিত করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তিসংক্রান্ত ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অন্তত ৫৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সেই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক দুটি রিটের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐতিহাসিক এ রায় দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল।
রায়ে আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। আদালত আরও বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, রাষ্ট্রীয় অঞ্চল, জাতীয়তাবাদ, জাতির জনক, ৭ই মার্চ ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যাসহ রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর হলো। তবে সেটা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না। কারণ, সেটা বাতিল করা হয়েছিল দুইভাবে।
আদালতের রায় ও সংসদ কর্তৃক সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও আরও চারজন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছেন। জানুয়ারিতে শুনানি হবে। সেটা আবেদনকারীদের পক্ষে নিষ্পত্তি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরবে।
শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ঐতিহাসিক এ রায়ে মাননীয় আদালত বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামোর একটি অংশ। যেহেতু নির্বাচন, গণতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কাঠামো, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছে, সেহেতু এটি সংবিধানের একটি মূল কাঠামো। এটা ঐতিহাসিক রায়।
তিনি জানান, সংবিধানের ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদ, মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ৪৪(২), তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিধান এবং গণভোট বাতিল সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণসহ এ-সংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৭খ অনুচ্ছেদে সংবিধানের মৌলিক বিধান সংশোধনকে সম্পূর্ণ অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ৪৪(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের মাধ্যমে অন্য কোনো আদালতকে তার নিজস্ব এখতিয়ারের সীমার মধ্যে ওই ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দিতে পারবে। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধানটি, যা ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আদালত মনে করেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এই ধারা বাতিল করে ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধানও পুনর্বহাল করা হয়েছে।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের আমলে দায়েরকৃত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট পিটিশন দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তা করতে) হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণফোরাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন যুক্ত হন। শুনানিতে রিট আবেদনকারী, বিএনপি, রাষ্ট্রপক্ষ, জামায়াত, গণফোরাম, ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা শুনানিতে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন।
গত অক্টোবরে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৭টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন একটি রিট আবেদন করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপরও শুনানি হয়।
সংবিধানে জাতির জনক, ৭ই মার্চসহ কয়েকটি ধারা যে সংসদের জন্য আদালত ‘রেখে দিয়েছেন’ তা জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আদালত বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত।
সার্বিকভাবে তিনি রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকবে বলে তিনি আশা করেন। বহাল থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেউ বাদ দিতে পারবে না।
গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় ফিরতে গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচিত হলো ড. মজুমদার: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তিসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, এই রায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসার একটা গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচিত হলো। প্রতিক্রিয়ায় ড. মজুমদার বলেন, ‘আমি খুব উৎফুল্ল, আনন্দিত এবং অত্যন্ত সন্তুষ্ট এই রায়ে। আমি মনে করি যে, এটা একটা ঐতিহাসিক রায়। এটা একটা সেমিনাল জাজমেন্ট।’
তিনি বলেন, আজকে তিনি শুধু তাঁর জন্য নয়, দেশবাসীর জন্য আনন্দিত। এই রায়ে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা ফিরে আসার একটা গুরুত্বপূর্ণ দ্বার উন্মোচিত হলো। তবে এটা নির্ভর করবে ভবিষ্যতে কীভাবে আচরণ করা হয়। গণতন্ত্র ফিরে আসা, গণতান্ত্রিক উত্তরণ মানে একটা পরিবর্তন। সবাই যদি আচরণে পরিবর্তন আনে, রাজনীতিবিদেরা যদি তাঁদের আচরণে পরিবর্তন আনেন, সবাই নিজেদের করণীয় করেন, তাহলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। আর তা না হলে ফিরবে না।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুভাবে কর্তৃত্ববাদী সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটা হলো ত্রয়োদশ সংশোধনী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আরেকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সংবিধানে ৭(ক) অনুচ্ছেদ যুক্ত করার মাধ্যমে। সংবিধান সম্পর্কে কোনো রকম জনগণের আস্থা পরাহত এবং এই সংবিধান সম্পর্কে কোনো রকম সমালোচনা করা। এগুলো হলো রাষ্ট্রদ্রোহ।
পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ মানেই কি তত্ত্বাবধায়ক ফিরল?
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৮ আগস্ট জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল এই আদেশ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। প্রশ্ন উঠেছে, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়েছে? অর্থাৎ পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল বা অবৈধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংবিধান কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে তথা চতুর্দশ সংশোধনীর পরের অবস্থায় ফিরে গেল, নাকি এখানে আরও কিছু জটিলতা আছে?
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হয় ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিধানের আলোকে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০১১ সালে এই বিধানটি বাতিল করে দেওয়ার ফলে ২০১৪, ২০১৮ এবং সবশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
আইনজীবীসহ আইন বিশেষজরা বলছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলেই তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃস্থাপিত হবে না। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রক্রিয়াটি যখন চলছিল তখন ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানসংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন আপিল বিভাগ এবং এর মাস দেড়েক পরে ৩০ জুন সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী। সংবিধান গবেষক আরিফ খানের যুক্তিÑ যেহেতু আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি বাদ দেওয়া হয়, সুতরাং এখন হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দিলেও তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ফিরবে না। কারণ হাইকোর্ট কখনো আপিল বিভাগের রায় বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন না। তার মানে এখানে একটা জটিলতা রয়ে গেছে।
তারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়টি রিভিউ বা পুনর্বিবেচনা চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছে, সেটির নিষ্পত্তি হতে হবে। রিভিউতে যদি ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হয়, অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়টি যদি রিভিউতে বাতিল হয়ে যায়, তাহলেই কেবল তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহাল হতে পারে। আগামী ১৯ জানুয়ারি এই রিভিউয়ের ওপর শুনানির কথা রয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আরও সময় চেয়ে আবেদন করলে শুনানির নতুন তারিখ দেওয়া হয়। তার মানে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাটি ফিরবে না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়েও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত লাগবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হলেও, সংসদ যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনে, তখন আর আদালতের ওই রায়টি খুব বেশি প্রাসঙ্গিক থাকে না। পক্ষান্তরে সংসদ যে আইনই করুক না কেন, এমনকি সেটি যদি সংবিধান সংশোধনও হয়, তারপরও উচ্চ আদালত যদি মনে করেন যে, ওই আইন কিংবা সংশোধনীটি সংবিধানের মৌলিক চিন্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, তাহলে সেটি বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পঞ্চদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যদি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং রিভিউ হয়, তাহলে সেই আপিল ও রিভিউয়ের নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল বলে মনে করার সুযোগ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :