ঢাকা রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

সবজির স্বস্তি কড়ে নিচ্ছে চাল

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১০:৪০ এএম

সবজির স্বস্তি কড়ে নিচ্ছে চাল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শীতের সবজির দাম কমায় ভোক্তারা খুশি। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য এখন দেদার মিলছে ঢাকার সব বাজারে। তবে চালের দামে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন তারা। আমনের ভরা মৌসুমেও গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে চালের দাম। ঢাকার সব বাজারে মোটা-চিকন চাল ৫৮-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ডিমের দাম কমেছে এবং ভোজ্যতেলের সরবরাহ বেড়েছে।

অন্যদিকে, গ্রামীণ কৃষি উদ্যোক্তারা উৎপাদিত পণ্যের দাম না পেয়ে পড়েছেন বিপদে। কৃষক ৬০-৮০ টাকায় কিনেছেন এক কেজি বীজ আলু। এরপর জমিচাষ, সার প্রয়োগ, পানির ব্যবস্থাপনা, কীটনাশকের ব্যবহার মিলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে প্রায় ৪০ টাকা। সেই পণ্য ২৫ টাকা বাজারে বিক্রি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অধিকাংশ কৃষক। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যনুযায়ী, দেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লাখ। এর প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। তাদের আর্থিক বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্স ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম মণ্ডল। 

কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বলেন, জীবনে অবসর বলে কিছু নেই। আগে টেবিলে কাজ করেছি, এখন মাঠের কৃষক হিসেবে করছি। শহুরে মানুষ শীতের সবজির দাম কম হওয়ায় উৎফুল্ল। সরকারের হিসাবে উচ্চ চাপে থাকা মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু কৃষক তার খরচের টাকা তুলতে পারছে না। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘কৃষকের কৃষি অর্থনীতির দিকেও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলা দরকার।’ 

চালের দাম দুই সপ্তাহ ধরেই এক স্থানে রয়েছে বলেন কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন। 

চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক হিসেবে তিনি বলেন, ‘নতুন করে দাম বাড়েনি। দুই সপ্তাহ ধরেই চালের দাম একই স্থানে রয়েছে। প্রতি ৫০ কেজি চালের দাম ৩,৪০০-৩,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজির দাম ৬৮ থেকে ৭০ টাকা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক। এটা কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়। সরকার চাল আমদানি না করলে দাম বাড়ত। তাই আমদানি অব্যাহত রাখার আহ্বান’ জানান তিনি। 

বাজারে ‘ভোজ্যতেলের সরবরাহ বেড়েছে’ বলেন সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের মালিক ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে সরবরাহে যে ঘাটতি ছিল, এখন তা নেই। আমরা চাহিদামতো ভোজ্যতেল পাচ্ছি, সরবরাহ হচ্ছে। 

আশা করছি, নতুন করে সমস্যা হবে না।’ তবে ভিন্ন একটি ব্যবসায়ী দর জানিয়েছে, তেলে দাম বাড়াতে আমদানিকারকরা ফের চেষ্টা করছেন। যার কারণে একটি পক্ষ তেল গুদামজাত করার চেষ্টা করছে।

কিচেন মার্কেটে ‘ডিমের ডজন এখন ১৩০ টাকা। শতকরা নিলে ১০৫০ টাকা’ বলেন ডিম ব্যবসায়ী এনামুল। ‘প্রতিদিন ৮-১০ হাজার ডিম বিক্রি করি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগের মতো সেই কাড়াকাড়ি আর নেই। ডিম প্রচুর আছে। তবে স্থান বিশেষে দামের কম-বেশি’ বলেন তিনি। 

শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজার এবং মগবাজার প্রতিবেদক ঘুরে দেখেন, প্রতি কেজি নতুন আলু (মধ্যম) বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। একই সঙ্গে কাঁচামরিচের কেজি ৪০-৫০, মূলা ১০, শালগম ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন অন্য সবজির দামও অনেক কমেছে। 

শীতের সবজির দামে স্বস্তি প্রকাশ করে ভোক্তা হিসেবে একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘কয়েক বছর পরে ৮০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করেছি। ৫০ টাকায় ২ কেজি আলু, শালগম, বেগুন ও মূলা কিনে স্বস্তি অনুভব করছি।’ একই সঙ্গে তিনি কৃষকের আর্থিক খরচের কথা চিন্তা করে তিনি অন্তরে ব্যথা অনুভব করেন। 

ঢাকায় কয়েক সপ্তাহ আগেও প্রতিটি ফুলকপির দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা। ভরা শীতে শীতকালীন সবজির এই দাম এখন ১০-২০ টাকা। মূল্যস্ফীতির এই বাজারে অসন্তোষ ছিল নগরবাসী সবার। এখন অল্পেই মিলছে বড়সড় ফুলকপি। তাতে সবজির বাজার থেকে খুশি মনে ফিরছে নগরবাসী।

কিন্তু যেখান থেকে এই ফুলকপি আসছে, সেখানে খবর কী? ফেসবুকে ‘কৃষকের প্রাণ কৃষি পরিবার’ নামে একটি গ্রুপে তার খানিকটা আঁচ পাওয়া যায়। সাড়ে ৩ লাখের বেশি সদস্য যুক্ত রয়েছে এই গ্রুপে। 

নিজেদের ফসল চাষ, বাজার নিয়ে নানা তথ্য তারা বিনিময় করেন সেখানে। গ্রুপটি ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভারী হয়ে উঠেছিল ফুলকপি চাষিদের হাহাকারে। ২ টাকায় চারা কিনে সার, পানি, কীটনাশক দিয়ে কয়েক মাসের পরিচর্যার পর যখন সেই ফুলকপিই ২ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়, তখন হাহাকার ছাড়া কৃষকের আর কীইবা করার থাকে। 

কৃষি উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, হাতবদলে দাম বাড়ার প্রবণতা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বেশকিছু পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। 

ভবিষ্যতে এসব পদক্ষেপ চলমান থাকলে আপনারা এর রেজাল্ট দেখতে পারবেন। কাজটি চ্যালেঞ্জের মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘হাতবদলে কিছু প্রফিট হবে। কিন্তু সেই প্রফিট যেন আননেচারাল প্রফিট না হয়। তা যেন নেচারাল হয়, সেদিকে ইন্টারভেনশনের চেষ্টা আমরা করছি।

এখানে শর্ট টাইমে কিছু হবে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যা মেটানো যাবে না। শর্ট টাইমে কিছু কাজ সাময়িক আরাম দেবে, কিন্তু তা পরিস্থিতি খুব একটা স্বাভাবিক করবে না।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!